পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দুর্নীতি, উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে লাখ লাখ মানুষ এখন মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। উজানের ঢল, ভারী বর্ষণের কারণে সাম্প্রতিক আকস্মিক বন্যায় দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষ বানভাসি, উদ্বাস্তু হয়ে মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। ইতোমধ্যে কয়েকটি নদীর পানি কমে যাওয়ায় বন্যা উপদ্রুত ১৪টি জেলার অনেক মানুষ ঘরে ফিরে নতুনভাবে বাঁচার লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিলেও বেশ কিছু এলাকা এখনো পানির নিচেই তলিয়ে আছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দেখা যায়, যশোরের মনিরামপুরের ভবদহে হাজার হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দী হয়ে রাস্তার ওপর মানবেতর জীবনযাপন করছে। বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে মেনে নিলেও ভবদহের মানুষ তাদের এই বিপর্যয়কে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে মানতে নারাজ। তারা নিজেদের এই ভাগ্য বিপর্যয়কে মানবসৃষ্ট বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতার ফলে সৃষ্ট বলে মনে করছে। বিভিন্ন প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়ন না করতে না পারা, অপরিকল্পিত ড্রেজিং, নদী থেকে উত্তোলিত বালু নদীপাড়েই ডাম্পিং করার ফলে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প পানিতেই চলে যাচ্ছে, এর কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। উপরন্তু অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ ও ব্রিজ নির্মাণের ফলে এখন ভবদহ অঞ্চলে ভুরিভদ্রা, হরিহর ও অপারভদ্রা নদীর পানি বিপদসীমার ৪ ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শত শত কোটি টাকার ক্ষেতের ফসল এবং মাছের খামার পানিতে ভেসে গেছে। কবে নাগাদ এই আবদ্ধ পানি সরবে তারও কোনো নিশ্চয়তা খুঁজে পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। এমনকি প্রয়োজনীয় ত্রাণসহায়তা না পাওয়ায় হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে।
দেশের জীব-বৈচিত্র্য, কৃষিব্যবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবহন ও সহজ যোগাযোগব্যবস্থা নদী বা পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভরশীল। একদিকে উজানে যৌথ নদীতে ভারতের একতরফা বাঁধ নির্মাণ ও পানি প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে আমাদের সরকার তেমন কিছুই করতে পারছে না অন্যদিকে অদক্ষতা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে চলমান পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় জনআকাক্সক্ষা এবং চাহিদা পূরণে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে তার এই ধারাবাহিক ব্যর্থতা ও দুর্নীতির খতিয়ান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। প্রকল্প বাস্তবায়নে পাউবোর অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে প্রকল্প সহায়তার প্রতিশ্রুত শত শত কোটি টাকা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে উন্নয়ন সহযোগীরা। পাউবো কর্তৃপক্ষের এসব ব্যর্থতার কোনো দায় বা জবাবদিহিতা নেই। দেশে যেখানে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধেও ছোট ও গৌণ দুর্নীতির অভিযোগে মামলা-মোকদ্দমা চলছে সেখানে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার অপচয় এবং কোটি মানুষের দুর্ভোগের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
শুধুমাত্র নগরকেন্দ্রিক মেগা প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সারাদেশে কোটি কোটি মানুষকে সাংবাৎসরিক দুর্ভোগের মুখে রেখে তথাকথিত উন্নয়নের ফানুস ব্যর্থ হতে বাধ্য। নদীগুলোর নাব্যতা নিশ্চিত রাখা, বন্যা ও পানিবদ্ধতা নিরসন, সেচ প্রকল্পসমূহের লক্ষ্য অর্জনের মতো বিষয়গুলো প্রথাগত উন্নয়ন প্রকল্পের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জন্য প্রতি বছর জাতীয় বাজেটে বিশাল অঙ্কের বরাদ্দ রাখা হলেও এসব বাজেটের যথাযথ ব্যবহার ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার কার্যকর কোনো উদ্যোগ বা নজরদারি না থাকায় হাজার হাজার কোটি টাকা বাজেটের বড় অংশই লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে বারবার দুর্নীতিমুক্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষিত হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা রোধে তাদের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা বিস্ময়কর। রেলেওয়ের ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ এবং বেফাঁস মন্তব্যের কারণে দু’জন প্রভাবশালী মন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব কেড়ে নেয়ার দৃষ্টান্ত বর্তমান সরকারের আছে। জনগণ এখন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, অপচয় ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি দেখতে চায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিন্ডিকেটেড দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনা দূর করতে না পারলে প্রয়োজনে পানিসম্পদ মন্ত্রীসহ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রদবদল করতে হবে। বন্যা ও নদীভাঙনের বিরুদ্ধে স্থিতিশীল ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণের পাশাপাশি এ মুহূর্তে যশোরের ভবদহ, সাতক্ষীরার শ্যামনগরসহ পাউবোর প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থতার কারণে নিমজ্জিত ও দুর্ভোগের শিকার মানুষদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।