পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাই নতুন কিছু নয়। প্রায়ই এ ধরনের সংবাদ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ইদানিং মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাই উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। রাতের বেলা মহাসড়কগুলো যেন ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। তাদের দৌরাত্মে অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো মহাসড়কে যানবাহন ও যাত্রীরা ডাকাত এবং ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ছে। ডাকাত দল রাস্তায় গাছ ফেলে কিংবা যাত্রীবেশে যানবাহনে উঠে চালক ও যাত্রীদের জিম্মি করে অর্থ ও মালামাল লুট করে নিচ্ছে। কখনো কখনো চালককে হত্যা ও যাত্রীদের মারধর করে আহত করছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইকারীদের রাজত্ব চলছে। এসব সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ডাকাত ও ছিনতাইকারীরা যাত্রীদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নিচ্ছে। সন্ধ্যা নামার পর থেকে এসব স্থানে ডাকাত দল ওঁৎ পেতে থাকে। সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে, কখনো কখনো ঢিল ছুঁড়ে গাড়ি থামিয়ে অস্ত্রের মুখে চালক ও যাত্রীদের জিম্মি করে ডাকাতি করছে। যানজটে আটকে থাকা যানবাহনে ছিনতাইকারিরা ছিনতাই করছে। এর সাথে অজ্ঞান পার্টি যাত্রীবেশে বাসে উঠে যাত্রীদের অজ্ঞান করে অর্থ ও মালামাল নিয়ে সটকে পড়ছে। ডাকাত দল বিভিন্ন শিল্প কারখানার মালবাহী যানবাহন আটকে মালামাল নিয়ে যাচ্ছে। ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় সড়ক-মহাসড়ক এখন অনিরাপদ হয়ে পড়েছে।
বাজেটের সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয় সড়ক ও সেতু খাতে। এ খাতের উন্নয়ন ও সংস্কারে বছরে লাখ লাখ কোটি টাকা ব্যয় হয়। তারপরও সড়কের নিরাপত্তা ও সংস্কারের যথাযথ উন্নয়ন হচ্ছে না। অনিরাপদই থেকে যাচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে, অবৈধ দখল, বাজার বসা, খানা-খন্দ ও বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হওয়া-কোনো কিছুই ঠেকানো যাচ্ছে না। এর মধ্যে ডাকাতি ও ছিনতাই সড়ক-মহাসড়ককে আতঙ্কে পরিণত করেছে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সড়ক যদি নিরাপদ ও নির্বিঘ্ননাই হয়, তাহলে এত অর্থ ব্যয় হচ্ছে কেন? গতকাল ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দেয়া বেশিরভাগ নির্দেশনা মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেনি। সড়ক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা গড়িমসি করছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, সড়কের নিরাপত্তা ও বিশৃঙ্খলা নিরসনে মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। এ ধরনের শৈথিল্য ও উদাসীনতা সড়ক ও মহাসড়ককে বিপজ্জনক করে তুলেছে। ডাকাতি ও ছিনতাই এখন প্রতিদিনের বিপদ হয়ে উঠেছে। রাতে কোথাও যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে মানুষ ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করছে। কেউ নিরাপদ বোধ করছে না। অথচ সড়কে মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য হাইওয়ে পুলিশ রয়েছে। তারা কি দায়িত্ব পালন করছে, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত পুলিশের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধার কমতি না থাকলেও জননিরাপত্তা বিধানে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরাও তাদের এলাকার সড়কের নিরাপত্তায় দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন না। অথচ পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সরকারেরই অংশ। যদি তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করত, তাহলে সড়ক-মহাসড়ক এমন অনিরাপদ হয়ে উঠত না। বলা বাহুল্য, শীতের সময় মানুষ ভ্রমণে বের হয়। বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যায়। এবার করোনার মহামারিতে দীর্ঘ সময় ঘরবন্দী থাকা মানুষ মানসিক চাপমুক্ত হতে এবং প্রশান্তি লাভের জন্য পরিবার পরিজন নিয়ে দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণে বের হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এর মধ্যে সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাই তাদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। নিশ্চিন্ত ও নির্বিঘ্নে বেড়াতে যেতে পারবে কি পারবে না, এ নিয়ে তাদের মধ্যে শঙ্কা ও উদ্বেগ কাজ করছে। তাদের এমন ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে কেন বের হতে হবে? কেন নি:সংকোচে চলাফেরা করতে পারবে না? হাইওয়ে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা কেন সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না?
অবস্থাদৃষ্টে পরিলক্ষিত হচ্ছে, সড়ক-মহাসড়কে নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই। মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে চলাফেরা করছে। এ পরিস্থিতি কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না। এর দায় পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদেরই নিতে হবে। তাদের ব্যর্থতায় সড়ক-মহাসড়ক অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। অথচ জনগণের অর্থেই তাদের বেতন-ভাতা ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। আমরা মনে করি, সড়ক-মহাসড়ককে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। মহাসড়কের কোথায় কোথায় ডাকাতি ও ছিনতাই হয়, তা তাদের অজানা নয়। এসব স্থানে ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা করতে হবে। হাইওয়ে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের স্ব স্ব এলাকায় ডাকাতি এবং ছিনতাই বন্ধে তৎপর হতে হবে। যাদের এলাকায় ডাকাতি ও ছিনতাই হবে তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। ভ্রমণের এই সময়ে মানুষের নির্বিঘ্ন, নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। কোনো ধরনের গাফিলতি ও শৈথিল্য দেখানো যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।