পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের মহাসড়কগুলোতে ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের রাজত্ব চলছে। বেশ কিছুদিন যাবৎ কোন না কোন মহাসড়কে অহরহ এই ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ডাকাত চক্রের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না পণ্যবাহী গাড়ি থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী বাস, কার, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশার চালকরা। তবে ডাকাতদের সবচেয়ে বেশি টার্গেট শিল্পকারখানার পণ্যবাহী গাড়িসহ রাতে চলাচলকারী নাইটকোচ ও নতুন ব্যান্ডের গাড়িগুলোর প্রতি। বিভিন্ন এলাকায় কিছুদিন পরপরই হানা দিচ্ছে ডাকাতদল।
পুলিশ বলছে, ডাকাতি রোধে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে তারা। অপ্রতিরোধ্য এসব ডাকাত চক্র আগ্নেয় ও ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিত্য নতুন কৌশলে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ডাকাত আতঙ্কের কারণে খুবই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাতে পরিবারসহ মহাসড়কে চলাচল একেবারে কমে গেছে।
মহাসড়কে চলাচলকারী চালকসহ সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে ইদানীং ডাকাতি বেড়েছে। ডাকাতদের খপ্পরে পড়ে যাত্রীরা সর্বস্ব হারাচ্ছেন, কখনো কখনো আহত হচ্ছেন। জেলা পুলিশের সঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের সমন্বয়হীনতার কারণে ভুক্তভোগীরা কোনো ধরনের প্রতিকার পাচ্ছেন না। মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ক্যাম্প না থাকা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের স্বল্পতার কারণে বেশিরভাগ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তবে কয়েকজন ভুক্তভোগী যাত্রী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ডাকাত রুখতে পুলিশকে আরো দায়িত্বের সঙ্গে তৎপরতা বাড়াতে হবে।
গত বুধবার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুরে মালবাহী ট্রাকে ডাকাতির পর চালককে হত্যা করে ব্রিজের নিচে লাশ ফেলে যায় ডাকাতরা। এসময় ট্রাকের হেলপার আহত হয়। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার পুষ্টকামুরী বাইপাস ব্রিজ নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ট্রাকচালকের নাম মজিবুর রহমান (৫৫)। তিনি ঢাকার সাভারের বলিয়ারপুর গ্রামের মৃত আবদুল বারেকের ছেলে বলে জানা যায়।
আহত ট্রাক হেলপার হাসান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, দিনাজপুর থেকে পাথরভর্তি ট্রাক নিয়ে সাভারের বারবারিয়া যাচ্ছিল। ট্রাকটি মির্জাপুর উপজেলার পুষ্টকামুরী বাইপাস ব্রিজে এলে ৪-৫ জনের ডাকাত দল হানা দিয়ে চালক ও তাকে জিম্মি করে মারপিট শুরু করে। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা টাকা ও মালামাল লুটে নিয়ে চালককে হত্যার পর ব্রিজের ওপর থেকে ফেলে দেয়।
ডাকাত-ছিনতাইকারীর রাজত্ব এখন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। মহাসড়কটির আবদুল্লাহপুর-টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ডাকাত ও ছিনতাকারীরা। যানজটে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা মহাসড়কেই প্রায়ই হচ্ছে। মহাসড়কে দায়িত্বে থাকা পুলিশ নীরব দর্শকের ভ‚মিকা পালন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে গাজীপুর ট্রাফিক পুলিশের মহাসড়কে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, জনবহুল গাজীপুরে বিভিন্ন দূরপাল্লার গাড়ি এসে রাতে অবস্থান নেয়। এসব দূরপাল্লার গাড়ির হেলপাররা সংঘবদ্ধ হয়ে ছিনতাইসহ নানা অপরাধ করে আসছে বলে তাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মহাসড়কে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারও করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন লাখো মানুষ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করছে। এ পথে যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় যাত্রীদের। এই সুযোগে সংঘবদ্ধ দল ঝাঁপিয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর। গত ১১ ডিসেম্বর রাতে দাউদকান্দির পাথর ব্যবসায়ী একরামুল ইসলাম টঙ্গী যাবার পথে একদল ছিনতাইকারী তার গাড়িতে হামলা করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে লুটে নেয় নগদ দেড় লাখ টাকাসহ দুইটি দামি ব্রান্ডের মোবাইল।
এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দিনে এবং রাতে ডাকাত ও ছিনতাইকারীর উৎপাত বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। কখনো গাড়িতে যাত্রীবেশে কখনো বা প্রাইভেটকার ও মারুতি মাইক্রোবাসে সংঘবদ্ধ এসব চক্রের কবলে পরে সর্বশান্ত হচ্ছেন অনেকেই। গত কয়েক মাসে এমন বেশ কিছু অভিযোগ শোনা গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা অভিযোগ বা মামলা করেননি। এতে করে দিন দিন মহাসড়কে বেড়েই চলেছে ছিনতাই ডাকাতিসহ অনাকাঙ্খিত ঘটনা।
গত ২২ নভেম্বর দুপুরে মহাসড়কের কাবিলা ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের কেন্টিনের ম্যানেজার মো. বোরহান উদ্দিন ভ‚ইয়া বাসায় ফেরার পথে ভাড়ায়চালিত কুমিল্লাগামী একটি প্রাইভেটকারে ওঠেন। গাড়িতে আগে থেকেই ৩ জন যাত্রীবেশে বসা ছিল। গাড়িটি কাবিলা এলাকায় আসা মাত্রই ইউটার্নে ঘুরিয়ে ওল্টোদিকে চলতে থাকে। এ সময় গাড়িতে থাকা সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা বোরহান উদ্দিন ভ‚ইয়ার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা লুটে নেয়। এসময় অস্ত্রের মুখে তাকে জিম্মি করে তার স্ত্রী শিল্পী আক্তারকে ফোন করে রকেটে টাকা পাঠানোর জন্য বলে। তখন ছিনতাইকারীরা গাড়িতে বসিয়ে অপরিচিত জায়গায় নিয়ে তাকে মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে বোরহান উদ্দিনের স্ত্রী দুটি নম্বারে প্রায় ৪০ হাজার টাকা রকেট ও বিকাশ করে। বোরহান উদ্দিন জানান, ছিনতাইকারীরা পরে তাকে মহাসড়কের গৌরিপুর আমিরাবাদ এলাকায় নামিয়ে দেয়। তিনি দেবপুর পুলিশ ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ করেন বলে জানান।
গত কয়েকদিনে ইনকিলাবের অনুসন্ধানে জানা যায়, মহাসড়কে চলাচলরত কতিপয় পণ্যবাহী গাড়িচালক ও সহকারীর যোগসাজশ রয়েছে ডাকাতদের সঙ্গে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এরা সংখ্যায় ৪০-৫০ জন। ১০ থেকে ১৫ জন অংশ নিয়ে ২-৩টি দলে বিভক্ত হয়ে মুখোশ পরে ডাকাতি করে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন ৩০-৩৫ হাজারেরও বেশি যানবাহন চলাচল করে। এই মহাসড়কে পুলিশের অপ্রতুল টহলের সুযোগ নিচ্ছে ডাকাতরা।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ সদস্য দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পণ্য বহনকারী চালক ও সহকারীর যোগসাজশ আছে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সঙ্গে। তারা পণ্য নিয়ে রওনা দেয়ার আগেই মোবাইল ফোনে ডাকাতদের তথ্য জানিয়ে দেয়। ডাকাত দলের সদস্যরা নিরাপদে অবস্থান নিয়ে মহাসড়কে ব্যারিকেড তৈরি করে ডাকাতি করে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংশ্লিষ্ট চালক ও নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলো ৬-৭টি ডাকাত চক্রের হাতে জিম্মি। বিশেষ করে কুমিল্লার চান্দিনা ও ফেনীর লালপুল থেকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের কুমিরা পর্যন্ত ৭টি পয়েন্টে বেশিরভাগ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। জানা যায়, ডাকাতরা মালামাল ভর্তি ট্রাক, কাভার্ডভ্যান চালকদের হাত-পা বেঁধে, কখনো হত্যা করে আবার কখনো অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়। কখনো চলন্ত গাড়ির সামনে গাছ ফেলে বা কোন কিছু দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকাসহ মূল্যবান মালামাল ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় কেউ কেউ অভিযোগ করলেও অনেকে হয়রানি এড়াতে পুলিশের দ্বারস্থ হয় না।
মহাসড়কে চলাচলরত গাড়ি চালকরা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মহাসড়কে যখন যানজট বাড়ে তখনই ছিনতাই ও ডাকাতির তৎপরতা বেড়ে যায়। হাইওয়েতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব থাকায় ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটে। এছাড়া বেশিরভাগ সময় ডাকাত চক্র ধরা ছোয়ার বাইরে থাকায় তারা আরও সাহসী হয়ে ওঠে।
গত ২০ নভেম্বর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা পুলিশ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অভিযান চালিয়ে আন্তঃজেলা অজ্ঞান পার্টির ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে নেশাজাতীয় দ্রব্য উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসে ফেরি করে অস্বাস্থ্যকর হালুয়া বিক্রি করে। তারা কৌশলে যাত্রীদের নেশাজাতীয় দ্রব্য মেশানো ওষুধ সেবন করায়। যাত্রী অজ্ঞান হলে টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।
গত ২২ আগস্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দেশিয় অস্ত্রসহ আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের আট সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব-১১। ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও প্রায় সময় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ঢাকা-ময়মনসিংহের ভৈরবের কালিকাপ্রসাদ থেকে কুলিয়ারচরের নোয়াগাঁও-ছয়সূতি, দ্বারিয়াকান্দি থেকে বাজরার মাঝামাঝি অঞ্চলটি সশস্ত্র ডাকাতদের দখলে। এসব সড়কে চলাচলকারী জ্বালানিবাহী ট্যাংক লরি, মালবাহী ট্রাকে বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। একইভাবে ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-সিলেটসহ অন্যান্য অঞ্চলের মহাসড়কগুলোতে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে চলছে।
পূর্বাঞ্চল হাইওয়ে পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতিতে নতুন কয়েকটি চক্র সক্রিয়। চান্দিনা, ভবেরচর ও সোনারগাঁও এই তিন এলাকায় ডাকাতি বেশি হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি।
তিনি আরো বলেন, চালক, পথচারী ও যাত্রীদের সচেতনতায় লিফলেট বিতরণসহ নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে সচেতনতার বিকল্প নেই। অপরিচিত প্রাইভেট কার বা গাড়িতে না ওঠাই উত্তম। মহাসড়কে দুর্ঘটনাসহ অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে বেশকিছু স্পটে দিনে রাতে হাইওয়ে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।