২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
মানসিক রোগগুলোর মধ্যে ১টি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি) বা সূচিবাই। আমাদের দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই রোগে ভুগছে। এই রোগে তাদের ও অন্যদের পরিবারিক সামাজিক ও পেশাগত জীবন কে মারাত্নক ভাবে ব্যহত করছে। অনেকেই জানে না এটি একটি মানসিক রোগ এর মনোচিকিৎসার দরকার আছে। জানলে ও মানসিক বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে চায় না সামাজিক লজ্জা, বা কলঙ্কের জন্য। এজন্য এ রোগ ভয়াবহরূপ ধারণ করে। আসুন, আজ আমরা এই রোগ সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করে নিই যাতে সমাজে কিছুটা সচেতনতা সৃষ্টি হয়, আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবার চিকিৎসা নিতে আগ্রহী হয়। মানসিক রোগ চিকিৎসা হয় না, কেবল কলঙ্কের জন্য। আমি কি পাগল যে, মানসিক বিশেষজ্ঞের স্মরণাপন্ন হতে হবে ? সমাজ কি বলবে ? একজন উচ্চ রক্তচাপ ডায়বেটিস রোগীরা কি সুন্দর ভাবে তার রোগকে প্রকাশ করতে পারে । চিকিৎসকের কাছে যেতে পারে। চিকিৎসা গ্রহণ করে নিয়ন্ত্রিত সুস্থ জীবন কাটাতে পারে। কিন্তু একজন মানসিক রোগী ও তার পরিবার তা পারে না সংগত কারণে তারা মনো বিশেষজ্ঞের কাছে না গিয়ে হাতুড়ে কবিরাজ, হাকীম, পীর ফকিরের পরামর্শ নিয়ে চলে। এতে তাদের রোগ তো ভালো হয়ই না বরং দিনে দিনে জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে। আসুন আমরা জনসচেতনতার মাধ্যেমে এই কলঙ্কের বা কুসংস্কারের বলয় থেকে বেরিয়ে আসি। মানসিক রোগীদের প্রতি অমানবিক আচরণ যেন না করি, তাদের প্রতি সহানুভুতিশীল হই। শরীরে রোগে ভোগা যদি অন্যায় না হয়, বলতে লজ্জা না হয়, তাহলে মানসিক রোগীদের প্রতি এই আচরণ কেন? দেশের এক বৃহৎ জনগোষ্ঠি মানসিক রোগে ভুগছে, তিলে তিলে শেষ হচ্ছে তাও চিকিৎসা নিতে পারছে না। হাতুড়ে, হেকীম, পীর, ফকিরের কাছে প্রতারিত এবং ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। মানসিক রোগে ভোগা শারীরিক রোগে ভোগার মতোই একটি ব্যাপার, এতে লজ্জার কিছু নেই।
ওসিডি তে কি থাকে ?
একটি অবসেসিভ থট বা চিন্তা থাকে যা বার বার রোগীর মনে আসতে থাকে। রোগী বুঝতে পারে এটা অযৌক্তিক, সরাতে চেষ্টা করে বা বাধা প্রদান করে, ব্যর্থ হয়, হতাশ হয়, অস্থির হয়। এর দুটি অংশ আছে, একটা অবসেসন, অপরটি কমপালসন। কমপালসন হলো অবসেসিভ থট দূর করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা।
কি কি নিয়ে এর ব্যাপ্তি -
১. ময়লা ও জিবানু ওসিডি: রোগী পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও জীবাণু নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করতে থাকে এবং বারবার হাত ধৌত করে, বার বার গোসল করে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করে। প্রচুর সাবান ও পানি নষ্ট করে এর জন্য তার স্বাভাবিক জীবন যাপন অসম্ভব হয়ে পড়ে। পারিবারিক জীবন ব্যহত হয়। অতিরিক্ত ধোয়া মোছার জন্য চর্মরোগেও আক্রান্ত হতে পারে । রোগী কাউকে তার গ্লাসে পানি খেতে দেয় না। কেউ তার ঘরে ঢুকে পরলে, বিছানায় বসলে বার বার এ গুলো পরিষ্কার করতে থাকে। কিন্তু তারপরও তার সন্দেহ যায় না। তার মানে বিশ্বাস থেকেই যায়, এখনও ময়লা ঠিকভাবে যায়নি।
২. আক্রমনাত্মক : রোগীর মাথায় চিন্তা আসতে থাকে কাউকে আঘাত করার, কাউকে ছুরিকাঘাত করে দেয়ার। রোগী বুঝতে পারে তার এই চিন্তা অস্বাভাবিক এবং অযৌক্তিক। কিন্তু তারপরও এ চিন্তা মাথা থেকে সরাতে পারে না, ব্যর্থ হয়। যেমন:- রোগীর সামনে ১টি ছুরি আছে, রোগীর মাথায় বার বার এই চিন্তা আসতে থাকে, তাই এই ছুরি দিয়ে বাচ্চাকে ছুরিকাঘাত করার, পরবর্তী সময় ভয়ে সে ছুরির সামনে যেতেই চায় না। যদি সে ছুরিকাঘাত করে দেয়। রোগী আত্মদংশনে ভুগতে থাকে, উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় ফেটে পড়ে। তার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে।
৩. যৌনতা ওসিডি : রোগীদের মাথায় যৌনতা নিয়ে অশ্লীল আজে-বাজে চিন্তা আসে যা তার ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসইতো হয় না বরং উল্টো। যেমন- এক রোগীর মাথায় তার মা-মেয়ের যৌনাঙ্গ নিয়ে অশ্লীল চিন্তা আসতে থাকে। অশ্লীল ছবি ও আসতে থাকে। যে এটাকে অযৌক্তিক মনে করে সরানোর জন্য প্রাণ-পণ বাধাদেয়। পারে না সরাতে এর পর হতাশ ও ব্যর্থ হয়। আত্মগ্লানি ও আত্মদংশনে মুষড়ে পড়ে। ওসিডি রোগীর এ কারণে ১/৩ অংশ বিষন্নতায় ভোগে, আত্মহত্যার চেষ্টাও বিরল নয়।
৪. ধর্ম : ধর্মের বিরুদ্ধে, আল্লাহর বিরুদ্ধে অশ্লীল চিন্তা আসতে থাকে। যা তার সনাতন বিশ্বাসের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। সে জানে তার এ চিন্তা অযৌক্তিক, সরাতে চায়, পারে না। আত্মদহনে মরে যেতে চায়। সে ভাবে আমি নাস্তিক হয়ে গেছি। আমি নিশ্চিত ভাবে নরকে যাব। কেবল ইসলাম নয়, অন্য ধর্মাবলম্বীদেরও এই সমস্যা হয়। এর থেকে নাস্তিকের তফাৎ হলো নাস্তিক আত্মদহনে ভোগে না কোনো অনুশোচনা সে করে না। কিন্তু ওসিডি রোগীদের এই ভয়াবহ অবস্থা চিকিৎসা ব্যতিত ভয়াল থেকে ভয়াল রূপ ধারণ করে।
৫. গোছগাছ ওসিডি: রোগী তাদের জিনিসপত্র তার স্টাইলে গুছিয়ে রাখে। এলোমেলো করলে তার মাথায় আগুন ধরে যায়, প্রচন্ড অস্বস্থি লাগে। যতক্ষণ না তা পূর্বের অবস্থায় আনা না হয়। এরা এক বিশেষ ভাবে হাটে। এ থেকে ব্যতিক্রম হলে আবার প্রথম থেকে শুরু করে। এটাকে বলে সিকোয়েন্স। সিকোয়েন্স নষ্ট হলেই এরা অস্থির হয়ে পড়ে, আবার নতুন করে শুরু করে।
রোগের কারণ :
১. বংশগত
২. পরিবেশগত : সাধারণত মানসিক চাপের পরে হয়।
৩. মস্তিস্কের গঠনগত কারণ: বেজাল গেংলিয়া বড় হয়ে যায় বা মস্তিস্ক শুকিয়ে যায়।
৪. সেরোটনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের অসুবিধার কারনে হয়।
৫. অসুখ বিসুখের কারনে : বাচ্চাদের গলায় ইনেফেকশন হয়ে। আমরা জানি, আমাদের মস্তিস্কে প্রতিমুহুর্তে অনেক চিন্তা ভাবনা আসে। আমাদের ব্রেইন প্রয়োজন অনুসারে এগুলোকে ফিল্টার করে থাকে। যখন চিন্তাগুলো সঠিকমত ফিল্টারিং হয় না তখন মস্তিস্কে যত চিন্তা আসে তাকে সরানো যায় না তার ফল সূচিবাই। চিকিৎসা বিজ্ঞানে কিছুদিন পূর্বেও ওসিডিকে এংজাইটি ডিসঅর্ডারের মধ্যে ধরা হতো। সাম্প্রতিক কালে এটিকে আলাদা করা হয়েছে।
৬. অস্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব : দেখা যায় যাদের ওসিপিডি নামক অস্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব থাকে তাদের ২০-৩৫%এর পরবর্তী সময় অবসেশন হয়।
৭. আমরা অনেক কারণ আলোচনা করলাম, কিন্তু প্রকৃত কারণ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এখনও অজানা।
ওসিডি : এর হার নারী পুরুষ প্রায় সমান। বয়স সাধারণত এটা ২০-৩৫ বছরের মধ্যে হয়। ৩৫ এর পর ওসিডি রোগ কমন না। বাচ্চাদের ওসিডিতে অবসেসিভ থট তেমন থাকে না, কিন্তু কমপালশন থাকে। বাচ্চাদের ওসিডি ডায়াগনসিস করাও কঠিন।
চিকিৎসা :
১. সাইকোলজিক্যাল : রোগী ময়লায় হাত দিবে কিন্তু হাত ধুতে পারবে না। চিন্তাকে আটকানোর চেষ্টা। হাতে লাগানো রাবার ব্যান্ড টান দিবে। অস্বাভাবিক চিন্তাকে খাতায় বার বার লেখা, চিন্তার কথাগুলো রেকর্ড করে শোনা। যাতে সংবেদনশীলতা কমে যায়। রোগীদের চিন্তার ত্রুটিকে সনাক্ত করে দূর করার চেষ্টা সাইকোথেরাপীর মাধ্যমে। শিথিলায়ন, মেডিটেশন ইত্যাদি।
২. ঔষধ : ক্লোমিপ্রামিন, ফ্লুক্সেটিন, সারটালিন, ফ্লুভক্সামিন উচ্চ ডোজে দেয়া হয়। এখানে জানা প্রয়োজন বিষণ্ণতা নাশক ঔষধ আস্তে আস্তে উচ্চ মাত্রায় না দিলে অবসেসন কমবে না। বেসজোডায়াজেপিন স্বল্পকালীন সময় দেয়া যেতে পারে যা ৩ সপ্তাহের বেশি নয়। এটা মনের অস্থিরতা কমাবে।
৩. সামাজিক : রোগীকে তার বয়স যোগ্যতা ও আগ্রহ অনুসারে একটু কম চাপের কোন পেশায় আত্মনিয়োগ করানো।
৪. অন্যান্য চিকিৎসা : ডিপ ব্রেইন স্টিনিউয়েশন এবং কডেট নিউক্লিয়াস কেটে ফেলা
ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপী : বৈদ্যুতিক চিকিৎসা, এটা সাধারণত রেজিস্ট্যান্ট ওসিডিতে দেয়া যায়।
তবে নিজে নিজে চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা বিপদজনক। অবশ্যই একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ব্যবস্থাপত্র নিবেন।
ডা: মো: হারুনুর রশিদ
ডেল্টা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
মিরপুর-১, ঢাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।