Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রোগ নিরাময়ে নিম

| প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

নিম অসাধারণ অনুপম প্রকৃতির অনন্য উপহার। নিমকে বলা হয় গ্রামীণ চিকিৎসালয়। বহু শতক ধরে নানা রোগ নিরাময়ের কৃতিত্ব এই গাছটির। এই গাছের নানা অংশের ব্যবহারিক উপকার আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত কাজে লাগে। যে কোনো ওষুধের গুণ রয়েছে নিমের মধ্যে। আজকের বিজ্ঞানও মানে এ কথা। ত্বকের যত্ন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য রক্ষায় নিমের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এর উপরে ইতিহাস সাক্ষী নিমের মধ্যে আছে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসজনিত নানা রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা। এছাড়াও নিম শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। আজকের বিজ্ঞানীরা গবেষণায় পেয়েছেন নিমের মধ্যে প্রকৃতির এমন নানা উপাদান, জৈবিক রাসায়নিক যা অসাধারণ নিরাময় ক্ষমতা রাখে নিম নামক এই প্রাকৃতিক ওষুধ কারখানায়। নিমের বীজ, নিমের ডাল আর নিমের পাতায় রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি, আর ইমিউনিটি বাড়ানোর অসাধারণ ক্ষমতা। নিম বীজের তেলে আছে ফ্যাটি এসিড যা নিমকে এতো উপকারী করে তুলছে ত্বক আরও উজ্জ্বল এবং সুন্দর করার জন্য। বিশুদ্ধ বাতাস ও রোগ প্রতিরোধের পাশপাশি বিভিন্ন প্রকার রোগে নিমের ব্যবহার সফলভাবে প্রাচীন কাল থেকে হয়ে আসছে।

নিমের একটা পরিচয় জেনে নেওয়া যাক ভাষানুযায়ী নাম ঃ বাংলা-মিঠা নিম, আরবী-শাজবাতুল হরৎ, ফারসী-আজা দরখতে হিন্দ, নিম্ব, ইংরেজিতে-মারগোসা ট্রি। বিবরণঃ নিম গাছ প্রায় ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু হয়। গাছ সরল এবং শাখা-প্রশাখা চারদিকে বিস্তৃত। পাতা ছোট, বক্র ও করাতের ন্যায় দাঁতযুক্ত এবং অগ্রভাগ সূ²। সাধারণত বৃন্তের দু’দিকে ১১ থেকে ১৩ জোড়া পাতা হয়ে থাকে। ফুল সাদা এবং মধুর মতো গন্ধবিশিষ্ট থোকা থোকা হয়ে থাকে। ফল ছোট ও লম্বা এবং কুলের মতো। কাঁচা ফল সবুজ বর্ণের এবং পাকলে পীতাভ বা হলুদ বর্ণের হয় এবং প্রত্যেক ফলে একটি বীজ হয়। ফেব্রুয়ারী থেকে এপ্রিল মাসে ফুল এবং জুন থেকে আগস্ট মাসে ফল হয়। নিম গাছের ছাল, বীজ, পাতা, আঠা ব্যবহার হয়।

স্বাদ ঃ নিমের সমস্ত অংশ অত্যন্ত তিতা, পাকা ফল হালকা মিষ্টি। উপকারিতা ঃ নিমের সমস্ত অংশে রক্ত পরিস্কারক ক্ষমতা আছে বলে খুজলী, পাঁচড়া, চুলকানি, ফোঁড়া, কুষ্ঠ ও উপদংশ রোগে উপকারী। নিম ফুলের রস ব্যবহারে মাথার চুলের কালো বর্ণ অটুট রাখে, তাছাড়া পানিতে মিশিয়ে গড়গড়া করলে দাঁতের মাড়ি ও দাঁত শক্ত হয়। বিশেষভাবে পাতলা পায়খানা বন্ধে ও কুষ্ঠ রোগে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। নিম বীজ থেকে তেল সর্বপ্রকার পুরানো ক্ষত বা ঘা, মাথার খুসকি ও উকুন, এ্যাকজিমা, এ্যাজমা দূর করে। এছাড়া জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্যে ব্যবহার করা হয়। নিম পাতার প্রলেপ লবণসহ গরম করে কয়েকবার ব্যবহারে ফোলা, ব্যথা দূর করে। তাছাড়া ফোঁড়া পাকতে সাহায্য করে।

নিম ছালের নির্যাস ক্ষুধা বাড়ায়, জন্ডিস, কুষ্ঠ, দুষ্টক্ষত ও দাঁদ দূর করে। স্মৃতিশক্তি ও যৌন ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। নিমের পাতা থেকে তৈরি ক্যাপসুল ব্যবহারে ডায়াবেটিস, সিফিলিস, গনোরিয়া, এ্যাজমা, এ্যাকজিমা, শ্বেতী, গ্যাসট্রিক, পুরানো ক্ষত, ত্বকের মসৃণতা বাড়ায়, ব্রন, মেছতা, আর্সেনিকের ঘা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিমের ডাল দিয়ে দাতন করলে দাঁত পরিস্কার ও মজবুত হয়, এছাড়া পাতার নির্যাস থেকে তৈরি টুথ পাউডার ব্যবহারে দাঁতের গোড়া মজবুত, পুঁজ ও রক্ত পড়া বন্ধ করে। নিম থেকে তৈরি জৈব সার মাটির উর্বরা শক্তি বাড়ায় এবং পোকা-মাকড় ধ্বংস করে। নিমের উপকারিতা স্বল্প পরিসরে শেষ করা যাবে না। ইদানীং বাংলাদেশে নিম নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে। সুধী পাঠক শিগগিরই নিম সম্বন্ধে আরো জানতে পারেবন বিস্তারিত।

আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।



 

Show all comments
  • Md Nazmul ১৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৫ পিএম says : 0
    thank you
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিম গাছ

২৫ ডিসেম্বর, ২০২০
২ অক্টোবর, ২০২০
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ