পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ডিসেম্বরের শেষ ও পৌষের প্রথম প্রান্তিকে মৌসুমের চিরায়ত নিয়মে শীত জেঁকে বসেছে উত্তরের ১৬ জেলায়। সপ্তাহ জুড়েই চলছে মাঝারি শৈত্য প্রবাহ। বগুড়া ও রাজশাহীর কিছু অংশ ব্যাতিত রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলায় শীত পরিস্থিতি মারাত্মক। গত ৩দিন ধরে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা এবং পঞ্চগড় তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রার পারদ উঠানামা করছে ৬ থেকে সাড়ে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের মানুষও শীতের প্রকোপে বেশ কাহিল বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এমন তাপমাত্রার মধ্যে বাতাসের ঝাঁপটা, ঘনকুয়াশায় ঢেঁকে থাকা সুর্যের মুখ দেখা না যাওয়ায় পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, যমুনা, ঘাঘট, বাঙালী, করতোয়া প্রভৃতি নদ-নদীর চরাঞ্চলে বসবাসকারি লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। ঘন কুয়াশার কারণে রাতের অনেকটা সময় জুড়ে মাঝে মাঝেই বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে মাঝে মাঝেই সৃষ্টি হচ্ছে দুঃসহ যানজট। এর ফলে ৪/৫ ঘন্টার যাত্রাপথ অতিক্রম করতে ৯/১০ ঘন্টাও লেগে যাচ্ছে। এদিকে সীমিত আকারের সরকারি পর্যায়ে শীত বস্ত্র বিতরণের আওতা দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষ পর্যন্ত না পৌঁছানোয় ওইসব এলাকার কর্মজীবী মানুষ আয় রোজগারের জন্য বাইরে বেরোতে পারছে না। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, সরকারি কার্যক্রমের বাইরে বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক শীতবস্ত্র বিতরণের কাজ না করলে ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে খেটে আয় রোজগার করা সম্ভব হবে না।
বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদদের মতে পৌষ ও মাঘ মাসের ৪৫ দিন মূলত শীতের পিক আওয়ার। সেই হিসেবে এখন যে মাঝারি আকারের শৈত্য প্রবাহ চলছে তা’ খুবই স্বাভাবিক। মারাত্মক কোনো বিপর্যয় না হলে বিদ্যমান আবহাওয়া মানুষের শরীর স্বাস্থ্য ও কৃষির জন্য অনুক‚লই থাকবে। বগুড়ার সিভিল সার্জন বলেছেন, করোনা সচেতনতা মেনে চললে এবং ফেব্রুয়ারি মাসের পুরোটাই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে চলতি শীতকে ঘিরে বিশেষজ্ঞদের যে শঙ্কা রয়েছে তা’ দূর হয়ে যাবে।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গত আমন মৌসুমে উত্তরের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় শেষ আমনের কাঙ্খিত উৎপাদনের টার্গেট পূরণ হয়নি। এখন পর্যন্ত উত্তরের আবহাওয়ার যে বিদ্যমান গ্রাফচার্ট তার তেমন হেরফের না হলে এবং বোরো বীজতলাকে কোল্ড ইনজুরি এবং আলুকে রোগ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা গেলে খাদ্য নিয়ে সরকারের কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ পড়বে না। বগুড়াসহ উত্তরের ১৬ জেলায় এবার ১৬ লক্ষাধিক হেক্টরে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
বগুড়ার-৭ সংসদীয় আসনের স্বতন্ত্র নির্বাচিত সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু জানিয়েছেন, উত্তরাঞ্চলের শীতার্ত মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সংবেদনশীল, তিনি দলীয় সংসদ সদস্যদের শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াবার দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। কারণ প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাস, শীত বস্ত্রের যোগান পেলে কর্মজীবী মানুষ প্রতিকূল আবহাওয়াতেও কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এতে উন্নয়ন ও কৃষি অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে। তিনি অবশ্য বেসরকারি পর্যায় বিশেষ করে এনজিও পর্যায়ে দরিদ্র ও কর্মজীবী পর্যায়ের মানুষদের মধ্যে শীত বস্ত্র বিতরন বেশি জরুরী বলে মনে করেন।
এদিকে শীতকে ঘিরে বগুড়াসহ গোটা উত্তরাঞ্চলেই জমে উঠতে শুরু করেছে শীত বস্ত্রের বেচাকেনা। গতবছরে শীতের প্রকোপ তেমন না থাকায় শীত বস্ত্রের ব্যবসায়ীরা তেমন বেচাবিক্রি করতে পারেননি। তাই শীত বস্ত্রের ব্যবসায়ীরা এবার শীতের প্রকোপে খুশিই বলা যায়। শীতকে ঘিরে করোনা প্রকোপের মধ্যেই শীতের পিঠা-পুলির দোকানপাট জমে উঠেছে শহরে বন্দরে। মৌসুমের প্রধান আকর্ষণ খেজুরের গুড় তৈরি ও বিপণন ব্যবসারও বেশ পসার লক্ষ্যনীয়।
ইনকিলাবের বিশেষ সংবাদদাতা ও রাজশাহী ব্যুরো প্রধান রেজাউল করিম রাজু জানান, চলতি শীত মওসুমের প্রথম দফা মাঝারী শৈত্যপ্রবাহে কৃষি প্রধান বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষকে খানিকটা কাহিল করে দিয়েছে। বিশেষ করে কৃষক ও দিন মজুর শ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষকে ফেলেছে বেকায়দায়। তাপমাত্রা এক অঙ্কের ঘরে নেমে যাওয়ায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। সেই সাথে বেড়েছে সাথে শীত জনিত অসুখ বিসুখ। সকালের অনেকটা সময়জুড়ে থাকছে ঘন কুয়াশা। কুয়াশার কারণে যানবাহন চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। তারপরও খেটে খাওয়া মানুষরা কর্মের সন্ধানে সেই কাকডাকা ভোরে ছুটছেন শ্রমবিক্রির বাজার গুলোয়। জুবুথুবু হয়ে বসে থাকছেন কামলা খাটার আশায়। শীতে বিপাকে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষ। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে রাত ও দিনে খড়কুটো জ্বালিয়ে উত্তাপ নেবার চেষ্টা করছে অনেকেই।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, ঠান্ডা বাড়ার সাথে হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যা বেশী। আক্রান্তদের বেশীর ভাগই ডায়রিয়া শ্বাসকষ্ট নিউমোনিয়া এ্যাজমা হৃদরোগ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। আবার এসব উপসর্গ থাকায় করোনা আতঙ্কও ভর করছে। হাসপাতালের ২৯নং ওয়ার্ড যেখানে শীতজনিত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। সেটিতে এখন ঠাঁই নেই অবস্থা। হৃদরোগ বিভাগ ও শিশু ওয়ার্ডে একই রকম অবস্থা। শীতের মধ্যেও মেঝেতে ঠাঁই নিতে হচ্ছে রোগীদের। শৈত্যপ্রবাহ দূর্ভোগ বাড়িয়েছে কৃষি প্রধান বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের। বিশেষ করে বোরো আবাদকারীদের। এবার এ অঞ্চলে (রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা) বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চারলাখ পঞ্চাশ হেক্টর জমিতে। আর এ জন্য বীজতলা হয়েছে আঠারো হাজার হেক্টর জমিতে।
আমনের দাম বেশী পাওয়ায় আবাদের পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। সে লক্ষ্য নিয়ে বীজতলা তৈরী হয়েছে বেশী। কিন্তু এ বীজতলা বিপাকে ফেলেছে কৃষককে। কোল্ড ইনজুরিতে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশঙ্কা করছে। অনেকে কুয়াশা ও ঠান্ডা থেকে বীজতলা বাঁচাতে পলিথিনে মুড়ে দিচ্ছেন। আর কয়েকদিন পরই বীজতলা থেকে চারা তুলে রোপন শুরু হবে। আলু আবাদকারীরা রয়েছেন শঙ্কায় তবে শীতকালীন শাকসবজির জন্য কুয়াশা ও ঠান্ডা উপকার বয়ে এনেছে। যদিও মাঠ থেকে এসব ফসল বাজারজাত করণের জন্য কৃষকদের ঠান্ডা জনিত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
রাজশাহী মাছে উদ্বৃত অঞ্চল। এখান থেকে প্রতিদিন দেড় শতাধিক ট্রাকে মাছ যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। শীতের তীব্রতায় পুকুর, দিঘী, খামার আর খাল বিলে মাছ ধরায় সমস্যা হওয়ায় কমেছে মাছের সরবরাহ। বেড়েছে দাম। মুরগী খামারীরা রয়েছেন আতঙ্কে। শীতের তীব্রতা বেশী হলে মুরগী মরার হার বেড়ে যায়। সেজন্য বড় বড় লাইট জ্বালিয়ে উত্তাপ ঠিক রাখার চেষ্টা চলছে খামারগুলোতে। শৈত্যপ্রবাহ এবার কয়েকদফা হবে এমন খবরে উদ্বিগ্ন এ অঞ্চলের কৃষক মৎস্য চাষী আর মুরগী খামারিরা। শীতের তীব্রতা বাড়িয়েছে প্রাণীক‚লকেও। শীত থেকে রক্ষা পেতে গরু ছাগলের গলায় জড়িয়ে দেয়া হচ্ছে চট, কাঁথা এমনকি ছেড়াফাটা কোট সোয়েটার।
শীতের এমন দাপটের মাঝেও চলছে খেজুরের গুড় তৈরী। শীত বেশী হলে রস বেশী হয় বলে গাছিরা এবার বেজায় খুশী।
দিনাজপুর থেকে ইনকিলাবের আঞ্চলিক প্রধান মাহফুজুল হক আনার জানান, উত্তরের শীত প্রধান জেলাগুলোর মধ্যে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় চলতি শীতের মাঝামাঝি এসে এখন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করায় সপ্তাহ জুড়েই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
প্রায় দিনব্যাপী ঘন কুয়াশা ও সেই সাথে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের কারণে মানুষ খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া বাইরে আসছেনা। ফলে ব্যবসা বাণিজ্য, চাষাবাদ কার্যক্রম দারুণভাবে ব্যহত হচ্ছে। রংপুর বিভাগে এবার ৫ লক্ষাধিক হেক্টরে বোরো আবাদের জন্য যে বীজতলা তৈরী করেছে কৃষক, বিদ্যমান শৈত্য প্রবাহ আরো বাড়লে এবং তাপমাত্রার পারদ আরো কমলে বীজতলা কোল্ড ইনজুরির শিকার হয়ে বিপদ বাড়াতে পারে বলে বোরো চাষিদের সতর্ক করেছেন কৃষি কর্মকর্তারা ।
তবে রংপুর বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে দেখা যায়, বিদ্যমান মাঝারি শৈত্য প্রবাহ শিগগিরই বিদায় নেবে। রোদ ঝলমলে আবহ্ওায়ায় শীতের প্রকোপ বাড়লেও বোরো চাষে তেমন সমস্যা হবে। এছাড়াও রংপুর, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলায় আলুসহ শীতকালীন শাকসবজির জন্য বর্তমান আবহাওয়া উপকারই বয়ে আনবে।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মনে করেন ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, ঘাঘট, করতোয়া ,পুনর্ভবার চরাঞ্চলে বসবাসকারি এবং পঞ্চগড়ের পাথর শ্রমিকদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজনীয় শীত বস্ত্র পেলে ওই খেটে মানুষরা শীত মোকাবেলা করেও তাদের জীবিকার চাকা সচল রাখতে পারবে ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।