পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবাহিনীকে আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। গত রোববার যশোরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী একাডেমিতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ ২০২০ (শীতকালীন) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে (ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে) তিনি বলেন, ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিমানবাহিনীকে যুগোপযোগী করতে সরকারের আরো আধুনিক যুদ্ধবিমান কেনার বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, বিমানবাহিনীতে শিগগিরই যুক্ত হবে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, আনম্যাল্ড এরিয়াল ভেহিক্যাল সিস্টেম, মোরাইল গ্যাস ফিলার রাডার এবং সর্বাধুনিক এয়ার ডিফেন্স রাডার। বিমানবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিমান, হেলিকপ্টার, রাডার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র এবং যুদ্ধযন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, ৫টি সি-১৩০ জে পরিবহন বিমান কেনার চুক্তি হয়েছে। তার ৩টি এর মধ্যেই দেশে এসে পৌঁছেছে। বৈমানিকদের উন্নত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে আরো ৭টি কে-৮ ডবিøউ জেট ট্রেনার বিমান সংযোজন করা হয়েছে। অচিরেই যুক্ত হতে যাচ্ছে পিটি-৬ সিমুলেটর। লালমনিরহাটে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিমান নির্মাণ, গবেষণা ও মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চা হবে এবং আমি আশা করি, একদিন বাংলাদেশ যুদ্ধবিমান, পরিবহন বিমান এবং হেলিকপ্টার তৈরি করতে সক্ষম হবে ইনশাল্লাহ।
বিমানবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে সরকারের নেয়া পদক্ষেপসমূহ অত্যন্ত ইতিবাচক এবং অভিনন্দনযোগ্য। জাতীয় নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের জন্য বিমানবাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সরকার সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে, যার বিবরণ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এসেছে। এভিয়েশন ও অ্যারোস্পেস সংক্রান্ত উচ্চতর পড়াশুনার জন্য দেশে স্পেসালাইজড বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। সে কারণে বিমান নির্মাণ, গবেষণা এবং মহাকাশ বিজ্ঞান বিষয়ে জ্ঞানার্জন ও গবেষণার জন্য উন্নত দেশগুলোতে যাওয়া ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। এখন দেশেই এ সুযোগ নিশ্চিত হচ্ছে, যার ফলে ওইসব বিষয়ে পড়ালেখা ও গবেষণা করার সুযোগ অধিক সংখ্যকের পক্ষে সম্ভব হবে। আমরাও প্রধানমন্ত্রীর মতো আশাবাদ ব্যক্ত করতে চাই যে, এমন একদিন আসবে, যেদিন আমাদের দেশেই সামরিক-অসামরিক বিমান তৈরি হবে। আমরাও মহাকাশে যেতে পারবো। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা ও উদ্ভাবনে বাংলাদেশের গবেষক ও উদ্ভাবকরা পিছিয়ে নেই। তাদের মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা অন্য কোনো দেশের নাগরিকদের চেয়ে কম নয়, যদিও অনেকেরই সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই চরমোৎকর্ষের কালে নিত্য নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবন যুক্ত হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতায় আমরাও আছি। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের সেরা গবেষকদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যাতে বাংলাদেশের ১৭টি প্রতিষ্ঠানের ২৬ জন গবেষকের নাম রয়েছে। সুযোগ-সুবিধা ও পৃষ্টপোষকতা পেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণায় বাংলাদেশিরা আরো বেশি ও ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে বলে আশা করা যায়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্রমাগ্রতির ধারায় আজ যা যুগোপযোগী বলে মনে হচ্ছে, কাল তাই অপ্রয়োজনীয় বলে প্রতিভাত হচ্ছে। এত দ্রুতই এইসব ঘটছে যে, মানুষের কল্পনাকেও হার মানাচ্ছে। যারা এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে, তারাই এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যরা পড়ে থাকছে পিছিয়ে। অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেও নিত্য নতুন প্রযুক্তি যুক্ত হচ্ছে। আগের প্রযুক্তি অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধবিমানের নতুন নতুন ভার্সন আসছে। আগের বিমান আর তেমন কাজে আসছে না। ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত সংস্করণ আসায় আগের ক্ষেপণাস্ত্র পরিত্যক্ত হয়ে যাচ্ছে। ড্রোন আবিষ্কার প্রচলিত যুদ্ধব্যবস্থা ও কৌশলকেই পাল্টে দিয়েছে। ইদানিং যে কোনো যুদ্ধে ড্রোনের ব্যবহার হচ্ছে। ড্রোন দিয়ে আক্রমণ করা হচ্ছে, যাতে প্রতিপক্ষের বেশুমার জান-মালের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। অথচ আক্রমণকারী বাহিনীর একটিও লোকক্ষয় হচ্ছে না। মনুষ্যবিহীন এই আশ্চর্য যান ড্রোন ব্যবহার করে তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যে ও আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধে ব্যাপক সাফল্য প্রদর্শন করেছে। ড্রোনকে বলা হয় আগামী দিনের যুদ্ধাস্ত্র। এ অস্ত্র ব্যবহারে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে তুরস্ক। তার টিবি-২ ড্রোনের প্রশংসা বিশ্বের সর্বত্র। শুধু তাই নয়, তুরস্ক এখন সমুদ্রে মনুষ্যবিহীন নৌযান নিয়ে আসছে, যা দিয়ে সমুদ্র প্রতিরক্ষা হবে এবং দূর-দুরান্তে এই নৌযান দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা যাবে। স্থল প্রতিরক্ষার পাশাপাশি আকাশ ও সমুদ্র প্রতিরক্ষায় যেভাবে দ্রুত অগ্রগতি ঘটছে, তার সঙ্গে সমান তালে এগুতে না পারলে জাতীয় প্রতিরক্ষায় আমরা পিছিয়ে থাকবো। সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি অঙ্গকে ত্রিমাত্রিক করার সঙ্গে সঙ্গে আগামীতে কোন যুদ্ধাস্ত্র আসছে, কোন প্রযুক্তি আসছে তা নজরে রাখতে হবে এবং সেই অস্ত্র ও প্রযুক্তি সংগ্রহ বা উদ্ভাবন করতে হবে। ড্রোন যুদ্ধবিমানের বিকল্প হিসেবে কাজ করছে। ফলে আগামীতে যুদ্ধবিমান নাও থাকতে পারে। অনুরূপভাবে এখনকার অনেক অপরিহার্য অস্ত্র ও সরঞ্জাম আগামীতে থাকবে না। এসব দিক খেয়ালে রেখে আমাদের সশস্ত্রবাহিনীকে এগিয়ে নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।