Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাইবার অপরাধ দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

অনলাইনে প্রতারণা, অপরাধপ্রবণতা এবং গুজব ছড়ানোর বিষয়টি নতুন নয়। দিন দিন প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, সাইবার প্রতারকরাও তার সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের দক্ষ করে তুলছে। এটা তাদের মিশন। তবে যারা সাধারণ অনলাইন ব্যবহারকারী তাদের পক্ষে প্রযুক্তির অগ্রগামীতার সাথে তাল মেলানো কঠিন। ফলে তারা সাইবার প্রতারকদের দ্বারা বিভিন্নভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরির সুযোগ, বিভিন্ন দেশে নাগরিকত্ব পাইয়ে দেয়ার সুযোগ, লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জনের মতো বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম অনলাইনে গড়ে উঠেছে। এসব ক্ষেত্রকে পুঁজি করে প্রতারক চক্রও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা গ্রুপ খুলে বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন ও কথামালার মাধ্যমে অনলাইন ব্যবহারকারীদের প্রলুব্ধ করে প্রতারণা করে চলেছে। গতকাল ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এর এক প্রতিবেদনে এ ধরনের প্রতারণার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাইবার অপরাধী চক্র বিভিন্ন ভুয়া গ্রুপ পেইজ খুলে তরুণ-তরুণীদের চাকরি সুযোগ দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। চাকরির গ্রুপে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ইনভাইট করে যোগ দেয়ার আহবান জানায়। এসব গ্রুপে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রতিদিন মাত্র দুই ঘন্টা সময় ব্যয় করে লেখালেখি করে মাসে বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা উপার্জন করার লোভনীয় অফার থাকে। তাদের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে যুক্ত হয়ে লেখা জমা দেয়া এবং আগ্রহীদের পরিচিতজনদের যুক্ত কারার কথাও বলা হয়। এসব গ্রুপে যোগ দিতে আগ্রহীদের কাছ থেকে পঞ্চাশ থেকে ষাট বা তারও বেশি টাকা গ্রুপ অ্যাডমিনকে বিকাশ বা অন্যান্য মাধ্যমে পাঠাতে হয়। এতে স্বল্প সময় ব্যয় করে মাসে ভাল অর্থ আয়ের লক্ষ্যে তরুণ-তরুণীরা প্রলুব্ধ হয়ে এসব ভুয়া গ্রুপে যোগ দেয় এবং অন্যদেরও যুক্ত করে। গ্রুপে আড়াই-তিনশ’ সদস্য হওয়ার পর মাস শেষ হওয়ার আগেই প্রত্যেকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অর্থ নিয়ে তারা উধাও হয়ে যায়। সদস্যরা আর গ্রুপ খুঁজে পায় না।

প্রযুক্তির প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সাইবার ওয়ার্ল্ডে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ও নতুন নতুন অ্যাপ যুক্ত হচ্ছে। আজ যা নতুন, কাল তা পুরনো হয়ে যাচ্ছে। নতুন করে আপগ্রেড হচ্ছে। পরিবর্তনের এ গতি এতটাই দ্রুত ঘটছে যে, সাধারণ অনলাইন ব্যবহারকারীর পক্ষে তা সহজে বোঝা বা ধারণ করা সম্ভব নয়। তবে এক্ষেত্রের প্রতারক চক্র প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের এ ধারার সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ হচ্ছে, তারাও ভাল করে জানে নতুন প্রযুক্তি ও আইডিয়ার সাথে সাধারণ ব্যবহারকারীর পক্ষে তাল মেলানো সম্ভব নয়। ফলে আধুনিক প্রযুক্তি ও আইডিয়াকে তারা ত্বরিৎ ব্যবহার করে প্রলুব্ধকর নানা বিষয় উপস্থাপন করে। এতে সাধারণ ব্যবহারকারীরা তাদের গ্রুপ ও বিভিন্ন লোভনীয় অফারে প্রলুব্ধ হয়ে সাইবার অপরাধীদের ফাঁদে পড়ে। যখন বুঝতে পারে, ততক্ষণে অপরাধীরা তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে সটকে পড়ে। এসব গ্রুপের অ্যাডমিন কে এবং কারা এর সাথে যুক্ত তা প্রতারিতরা যেমন দেখতে পায় না, তেমনি খুঁজেও পায় না। অন্যদিকে সাইবার প্রতারকরা দক্ষ ও অভিজ্ঞ হওয়ায় এক গ্রুপ দিয়ে প্রতারণা শেষ করে নতুন অন্য গ্রুপ খোলে। বিশ্বব্যাপী এই সাইবার অপরাধী চক্র সক্রিয়। আমাদের দেশের অনলাইন ব্যবহারকারীদের অধিকাংশ অনভিজ্ঞ হওয়ায় সহজেই এ চক্রের ফাঁদে পড়ে। অনলাইনে সাধারণ কেনাকাটা করতে গিয়েও তারা প্রতারিত হয়। এক পণ্যের অর্ডার দিলে নিম্নমানের অন্য পণ্য দিয়ে প্রতারক চক্র প্রতারণা করে। এসব ক্ষেত্রে প্রতারিতদের কিছু করার থাকে না। তবে অনলাইনে এসব প্রতারক চক্রের পাশাপাশি জেনুইন বাণিজ্যিক এবং বিভিন্ন উপকারী গ্রুপও থাকে। কোনটা আসল আর কোনটা নকল বা প্রতারক গ্রুপ তা অনলাইন ব্যবহারকারিদের ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে যুক্ত হলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

সাইবার অপরাধ ক্রমশ বাড়ছে এবং ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর সাথে যুক্তরা অত্যন্ত ইক্যুইপড, কৌশলী ও দক্ষ হওয়ায় তাদের সহজে চিহ্নিত করা দুষ্কর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ভুক্তভুগীরা অভিযোগ করলেও পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি সুবিধা না থাকায় অপরাধীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। আদালতেরও এ বিষয়ে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা নেই। যেহেতু প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির পরিবর্তন হচ্ছে, নিত্যনতুন কনটেন্ট সামনে আসছে, তাই এর সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বিটিআরসিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাইবার অপরাধীদের চিহ্নিত করতে তাদের চেয়েও দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রযুক্তিবিদ এবং জনবল গড়ে তোলা হয়েছে এবং হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদেরও পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। সাইবার অপরাধ দমনে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে, আলাদা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও প্রযুক্তির পরিবর্তন সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ টিম গড়ে তোলা অপরিহার্য। আমরা আশা করব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাইবার অপরাধ দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাইবার-অপরাধ
আরও পড়ুন