বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
পায়রা সমুদ্র বন্দর ও পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটাকে সারা দেশের সাথে সরাসরি সড়ক পথে সংযূক্ত করতে প্রায় দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘের ৪ লেন পায়রা সেতুর নির্মান কাজ আগামী জুনের মধ্যে সম্পন্ন করতে চীনা নির্মান প্রতিষ্ঠান দিন রাত কাজ করছে। ইতোমধ্যে সেতুটির অবকাঠামোর নির্মান কাজ প্রায় ৭৫ % এবং সার্বিক কাজের ৬৫ % শেষ হয়েছে বলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। ১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা ব্যায়সাপেক্ষ লেবুখালী সেতুটি নির্মানে কুয়েত উন্নয়ন তহবিল এবং ওপেক তহবিলের বাইরে বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল থেকে
৩৬৮.২৯ কোটি টাকা ব্যায় হচ্ছে।
প্রকল্পটির জন্য কুয়েত উন্নয়ন তহবিল থেকে দু দফায় ২৯ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার বা ৯৮.৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ওপেক তহবিল-ওএফআইডি থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলার যোগান দেয়া হচ্ছে। অনেক অনিশ্চয়তা আর চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই চীনা নির্মান প্রতিষ্ঠান ‘লং জিয়ান’এর সাথে চ’ক্তি স্বক্ষরের পর দু দফায় সময় বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ৭১ মাসে সেতুটির নির্মানকাজ শেষ হবে বলে আশা করছে নির্মান প্রতিষ্ঠান সহ সড়ক বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র।
লেবুখালী সেতুর নির্মান কাজ সম্পন্ন হলে সারা দেশের সাথে পায়রা সমুদ্র বন্দর ও পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার ফেরি বিহীন সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। যা সারা দেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের আর্থÑসামাজিক ব্যবস্থায়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করছেন অর্থনীতিবীদ গন।
তবে ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে প্রস্তাবিত লেবুখালী সেতু নির্মানে কুয়েত উন্নয়ন তহবিলের সাথে প্রথম সমঝোতায় সাড়ে ৪শ কোটি টাকা ব্যায়ের লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মানের সিদ্ধান্ত হলেও পরবর্তিতে প্রকল্প ব্যায় বেড়ে প্রায় দেড় হাজার কোটিতে উন্নীত হয়েছে। এমনকি ২০১২ সালের ৮ মে একনেক-এর সভায়ও ২০০৫-০৬ সালের প্রকল্প ব্যায় সম্বলিত ডিপিপি অনুমোদিত হয়। কিন্তু ২০১৪ সালে দরপ্রস্তাবে সর্বনি¤œ দর দাতার প্রস্তাবটিও ছিল ১ হাজার ২শ কোটি টাকার ওপরে। কারন প্রায় দশ বছর আগের মূল্যহারে চীনা নির্মান প্রতিষ্ঠান সহ অন্য প্রস্তাবকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দরপত্র দাখিল করেনি। ফলে সড়ক অধিদপ্তর ও যোগাযোগ মন্ত্রনালয় মূল্যহার সংশোধন করে চীনা সর্বনি¤œ দর প্রস্তাবকারী প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবনা গ্রহন করে অনুমোদন প্রদান করে। কিন্তু ২০১৭ সালের জুনে ও ’১৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে আরো দুফায় লেবুখালী সেতুর সংশোধীত ডিপিপি একনেক-এ অনুমোদনের পরে সেতুটির জন্য প্রকল্প ব্যায় দাড়িয়েছে ১ হাজার ৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ এবং ফুটপাথ সহ ১৯.৭৬
মিটার প্রস্থ চার লেনের মূল সেতু ছাড়াও ১ হাজার ২৬৮ মিটার সংযোগ সড়ক এবং ১ হাজার ৪৭৫ মিটার নদীতীর রক্ষা কাজ এবং টোল প্লাজা ও প্রশাসনিক ভবন নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্পটির জন্য প্রায় ২৫ একর জমি অধিগ্রহন করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। মূল সেতু ও তার ভায়াডক্টের জন্য টেষ্ট পাইল, ওয়ার্কিং পাইল, পীয়ার ক্যাপ, পীয়ার এবং ভায়াডাক্ট ও মূল সেতুর ফাউন্ডেশন, সাব-স্ট্রাকচার-এর নির্মান কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ভায়াডাক্টের সুপার স্ট্রাকচার শতভাগ শেষ হলেও মূল সেতুর সুপার স্ট্রাকচারের কাজ চলমান রয়েছে। মূল সেতু ও নদী তীর রক্ষা কাজের জন্য জমি অধিগ্রহন সম্পন্ন হয়েছে। ভয়াডাক্টের ওয়ার্কিং পাইল সহ পাইল ক্যাপ, এ্যাবাটমেন্ট ওয়ালও সম্পন্ন হয়েছে।
‘এক্সট্রা ডোজ প্রী-স্ট্রেসড বক্স গার্ডার’ ধরনের এ সেতুটির নকসা অনেকটা চট্্রগ্রামের দ্বিতীয় কর্ণূফ’লী সেতুর আদলে করা হয়েছে। মূল সেতুটি বক্স গার্ডার ছাড়াও স্টেÑক্যাবলের ওপর স্থিতিশীল থাকবে। মূল সেতুর বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেষ্ট পাইলের কাজ শেষ হবার পাশাপাশি দশটি
পীয়ার, পাইল ও পীয়ার ক্যাপও সম্পূর্ণ হয়েছে। এছাড়া ১৬৭ টি বক্স গার্ডার সেগমেন্ট-এর ৯৭টি এবং ৬৩০ মিটার দৈর্ঘের বক্স গার্ডার-এর ৩৮৮ মিটারের নির্মান কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকাÑফরিদপুরÑবরিশালÑপটুয়াখালীÑকুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কের বরিশাল থেকে ২৬ কিলোমিটার দক্ষিনে লেবুখালী সেতুটি নির্মিত হলে পায়রা সমুদ্র বন্দরের সাথে সারা চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর ছাড়াও দেশের প্রায় সব স্থল বন্দরেরও সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। এ সেতুর ওপর দিয়েই ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে কুয়াকাটায় পৌছতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ৭ ঘন্টা।
লেবুখালী সেতুর প্রকল্প ব্যাবস্থাপক এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আহমদ শরিফ সজিব জানান, ‘কোন বড় ধরনের প্রকৃতিক দূর্যোগ না হলে ইনশাল্লাহ আগামী জুনের মধ্যে যানবাহন পারাপারের জন্য লেবুখালী সেতু খুলে দেয়া হবে। সে লক্ষ্যে পুরোদমে চীনা প্রকৌশলীগন দিন রাত কাজ করছে’ বলেও জানান তিনি। ‘পরিপূর্ণ গুনগত মান বজায় রেখেই সেতুটির নির্মিত হচ্ছে’ বলেও তিনি জানিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।