পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীর বৃহত্তম শপিংমল বসুন্ধরা সিটিতে ফের ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এতে কেউ নিহত না হলেও কয়েকজন আহত হয়েছেন। ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। অন্তত একশ’ দোকানের মালামাল পুড়ে গেছে। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ষষ্ঠ তলার একটি জুতার দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত হয় এবং প্রায় ১০ ঘণ্টা পর রাত ৯টার দিকে তা নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেয়। এরপরও কয়েক ঘণ্টা ধরে ভবনে আগুনের অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ করা যায়। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগুন লাগার পরপরই বসুন্ধরা সিটির নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক দল আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। কিন্তু তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে ঘণ্টাখানেক পর ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। তাদের অভিযোগ, শুরুতেই যদি ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হতো তাহলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হতো। বসুন্ধরা সিটি কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছে, দেশের সবচেয়ে আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকায় ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। বসুন্ধরা সিটির মতো বৃহৎ ও অত্যাধুনিক শপিংমলে আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। অনেকে মনে করেন, আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকাই যথেষ্ট নয়। সেই ব্যবস্থা যারা কার্যকর করবেন, সেই মানুষগুলো কতটা প্রশিক্ষিত, দক্ষ ও অভিজ্ঞ সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। তথ্য থেকে জানা গেছে, ওই শপিংমলে ইতঃপূর্বে বেশ কয়েকবার অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বড় ও প্রাণহানিকর অগ্নিকা-ের ঘটনাটি ঘটে ২০০৯ সালে ১৩ মার্চ। শপিংমলের পাশে দ-ায়মান ১৯তলা ভবনে, যা বসুন্ধরা গ্রুপের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত, আগুন লেগে সাতজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়। ওই বছরই আগস্ট মাসে এবং গত বছর ৩ সেপ্টেম্বরও অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। তবে তাতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
বারবার ওই শপিংমলে অগ্নিকা-ের ঘটনা কেন ঘটছে, সঙ্গতকারণেই সে প্রশ্ন উঠতে পারে। প্রশ্নটি তুলেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। অগ্নিকা-ের খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে এলে সাংবাদিকরা তার কাছে অগ্নিকা-ের কারণ জানতে চান। জবাবে তিনি বলেন, আমিও জানতে চাই, বারবার কেন তাদের মার্কেটে আগুন লাগে। এ পর্যন্ত তিনবার ওই মার্কেটে আগুন লেগেছে। স্মরণ করা যেতে পারে, এর আগে আগুন লাগার ঘটনা তদন্তে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেই কমিটি কতিপয় সুপারিশ পেশ করেছিল। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, সেই সুপারিশ ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা হয়নি। বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : আগের সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের তরফে বিস্ময় প্রকাশ করে বলা হয়েছে, অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপক ও দুর্ঘটনা-পরবর্তী স্বয়ংক্রিয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকার পরও আগুন কিভাবে এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল তা সত্যিই বিস্ময়কর। কর্তৃপক্ষ বিস্ময় প্রকাশ করলেও স্থপতিদের মতে, বসুন্ধরা সিটির বিশাল ভবনে বায়ু নির্গমনের কোনো পথ নেই। ভবন কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় বায়ু নির্গমনের সব পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ করা। আগুন লাগার পর বায়ু নির্গমনের পথ বন্ধ থাকায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাদের পরামর্শ : বায়ু নির্গমনের পথগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ না করে প্রয়োজনের সময় খোলার ব্যবস্থা রাখা উচিত। এটা হলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার বা ক্ষয়ক্ষতি বাড়ার ঝুঁকি কমবে।
বসুন্ধরা সিটির মতো শপিংমলে বারবার আগুন লাগা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ওই শপিংমলে তিন হাজারের অধিক দোকান রয়েছে। দোকানগুলোতে শত শত কোটি টাকার মালামাল সব সময়ই থাকে। এ ছাড়া প্রতিদিন হাজার হাজার ক্রেতা সেখানে মালামাল খরিদ করতে যান। এ ধরনের শপিংমলে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে দোকান মালিকদের ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া ছাড়াও প্রাণহানির ঘটনা ঘটা অসম্ভব নয়। সে কারণেই তার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আরো নিñিদ্র হওয়া জরুরি। কেন বারবার সেখানে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে, সেটা কর্তৃপক্ষকেই খুঁজে বের করতে হবে। ব্যবস্থাপনাগত, ভবনগত নাকি অন্য কোনো কারণ এ জন্য দায়ী তা নির্ণয় করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে সতর্কতা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ প্রসঙ্গে আমরা এ-ও উল্লেখ করতে চাই, রাজধানীতে ছোট, মাঝারি ও বৃহৎ অসংখ্য শপিংমল রয়েছে। ওই সব শপিংমলেও অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বসুন্ধরা সিটির দুর্ঘটনার বিষয়টি স্মরণে নিয়ে সব শপিংমল কর্তৃপক্ষেরই উচিত নিরাপত্তা ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কতটা কার্যকর আছে তা খতিয়ে দেখা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বসুন্ধরা সিটির অগ্নিকা-ের ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করা যায়, তদন্ত কমিটি অগ্নিকা-ের প্রকৃত কারণ শনাক্ত করতে পারবে এবং যথারীতি সুপারিশও প্রদান করবে। কর্তৃপক্ষ কারণ নিরোধ ও সুপারিশ বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।