Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাত বাড়ালেই মাদক

সয়লাব রামগতি-কমলনগর, মাদকে জড়িয়ে পড়ছে উঠতি বয়সী যুবসমাজ, স্কুল-কলেজের ছাত্র ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ

আমানত উল্যাহ, রামগতি (লক্ষ্মীপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগর উপজেলার পাড়া-মহল্লায় হাত বাড়ালেই মিলছে সব ধরনের মাদকদ্রব্য। মরণনেশা ইয়াবায় ডুবে থাকছে উপজেলার উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত শ্রেণির হাজারো মানুষ। এ তালিকায় রয়েছে উঠতি বয়সী যুবসমাজ, স্কুল-কলেজের ছাত্র ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এতে করে উপজেলায় মাদকাসক্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এলাকায় উঠতি বয়সের তরুণ ও যুবকের মধ্যে ইয়াবাসেবীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠায় আছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহার করে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাদক ব্যবসা করছে। এসব মাদক বিক্রির তালিকায় প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানেরাও জড়িত। আর প্রভাবশালীদের কারনেই প্রশাসনও রয়েছে বেকায়দায়। পুলিশ রাজনৈতিক দলের কর্মীকে ইয়াবা ও বিভিন্ন মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার করলে সঙ্গে সঙ্গে তদবির শুরু করে দেয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতারা। মাদকদ্রব্যের মামলায় মাদক ব্যবসায়ীদের আদালতে চালান দেয়ার কিছুদিন পর জামিনে এসে আবারো মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দুর্বলের কারণে আসামিরা ছাড়াও পেয়ে যায়। প্রতিদিন বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা, এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় অভিভাবকেরা। বর্তমানে রামগতি-কমলনগর মাদকের আখড়া বলে অভিহিত করেছেন অনেকেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, দুই উপজেলায় কমপক্ষে অর্ধশতাধিক স্পটে মাদকসেবীদের আড্ডা রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যারা কিছুটা বিত্তশালী তারা ফেনসিডিলের দিকেই ঝুঁকে রয়েছে। আর ইয়াবা-গাঁজার দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় এ দুটি মাদকের দিকে নজর ও আকৃষ্ট সবার। কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ থেকে করুনানগর এবং রামগতি উপজেলার জমিদারহাট থেকে রামগতি বাজার হয়ে বয়ারচর টাংকি বাজার পর্যন্ত ইয়াবা সেবন-পাচার ও ব্যবসা জমজমাট। এই সব মাদক কক্সবাজার থেকে সড়ক ও নৌপথে অত্র অঞ্চলে আসেন বলে জানান অনেকেই। চরগজারিয়ার বয়ারচরকে নিরাপদ আস্তানা ভেবে মুলত ঐ স্থানে কয়েকটি সিন্ডিকেট মাদক সেবন ও পাচারের নেতৃত্ব দেন। অন্যদিকে ইয়াবা ব্যবসার প্রান কেন্দ্র কমলনগরের করুনানগর বাজার। র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশ বাহিনীর সমন্নয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করার দাবি এলাকাবাসীর। এ বিষয়ে রামগতি বাজার এলাকার অধ্যাপক সিফাত জামিল বাদী হয়ে গত ২৪-১০-২০ ইং তারিখে র‌্যাব ১১ লক্ষ্মীপুর ক্যাম্পের পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগে এই সব তথ্য তুলে ধরেন তিনি। অনুসন্ধানে জানা যায়, রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার ইউনিয়নের বালুরচর, জনতা বাজার বেড়ির উপর, জমিদারহাট মহিলা কলেজ এলাকা, আশ্রম পোলের গোড়া, চরসেকান্তর রাস্তার মাথা, সুফিরহাট এলাকা, রামগতি পৌরসভার সামনে, আলেকজান্ডার বাসস্টেশন, উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন প্রশিকা অফিস, রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে, হাজিগঞ্জ-বিবিরহাট যাত্রী ছাউনি ও গরুরহাটা এলাকা, রামদয়াল দক্ষিণ বাজার, রামগতি বাজার মির রোড, কলেজ রোড, টাংকি বাজার, সেন্টাল মার্কেট, তেগাছিয়া বাজার, ত্রিমুহনী এলাকা, বিবিরহাট মাজার রোড ও কমলনগর উপজেলার করুনানগর, আনন্দবাজার, হাজিরহাট মেঘনা সিনেমা হলের সামনে, মৌলভীরটেক, পাটারিরহাট, খায়েরহাট, চরফলকন, হাজিরহাট বাজারের চতুর্পাশে, চরলরেন্স, করইতলা, তোরাবগঞ্জ, ইসলামগঞ্জ, রহিমগঞ্জ, রববাজার সরকারি পুকুর পাড়, ফজুমিয়ারহাট, হাটের পুব পাশে ভূলুয়া নদীর দু’পাশে বিভিন্ন মাছের প্রজেক্টে, ফজুমিয়ারহাট চরঠিকা আছিয়ার বাপের সমাজে, চরঠিকা আছিয়ার বাপের খেয়া সংলগ্ন আশ্রয়ন প্রকল্পে, চরবসু বাজার ও বটতলী এলাকায় মাদক সেবন, ক্রয় বিক্রয়সহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয় অপরাধীরা। এই সব স্থানে রাত যতই গভীর হয়, ততই নতুন-নতুন মুখের আনাগোনা বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেল হাঁকিয়ে নতুন-নতুন লোক জন এই সব স্থানে আসেন। এসব এলাকায় সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় বিভিন্ন স্পটে মোটরসাইকেল ও সিএনজির মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ ইয়াবা বিক্রেতাদের দেখা যায়। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ একাধিক স্পটে গোপনে মাদকের ব্যবসা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় রামগতি-কমলনগরে ফেনসিডিল, গাঁজা ও মদের ব্যবসা করতেন গুটিকয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী। তাও খুব গোপনে বেচাকেনা হতো। এখন গাঁজা-মদের পাশাপাশি চলছে মরণনেশা ইয়াবা ট্যাবলেটের ব্যবসা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ক্ষমতাধর এসব মাদক ব্যবসায়ীরা সবাই অল্পবয়সী। এরা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত একথা শুনলে কেউ বিশ্বাসও করবে না। কারণ এরা সবাই ভালো পরিবারের সন্তান। প্রতিদিন সকাল বেলা উন্নতমানের পোশাক পরে বাড়ি থেকে বের হয়, আর রাতে বাড়িতে ফিরে। পোশাকধারী এসব যুবকদের পকেটে থাকে ইয়াবা ট্যাবলেট, যা হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে পরিচিত মাদক সেবনকারীদের কাছে। এ কারণে এসব আল্পবয়সী মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে পারছে না পুলিশ। মা-বাবার চোখের সামনে মাদকাসক্ত হচ্ছে ছেলে। এ কষ্ট কিভাবে মেনে নেবে অভিভাবকরা। তাই মাদকাসক্ত সন্তানদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বাবা-মা। রামগতি-কমলনগরের যুবসমাজকে রক্ষা করতে হলে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। আর এ জন্য পুলিশকে আরো সক্রিয়ভাবে মাঠে নামতে হবে।
কমলনগর থানার ওসি নুরুল আফসার বলেন, মাদকমুক্ত কমলনগর গড়তে পুলিশ সব সময় জনসচেতনতা সৃষ্টি করে আসছে। যেখানেই আমরা এই সংক্রান্ত সংবাদ পাই, সেখানে আমাদের অভিযান চলছে। মাদকের ব্যাপারে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবেনা বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
রামগতি থানার ওসি মুহাম্মাদ সোলাইমান বলেন রামগতিতে মাদকের ব্যাপারে পুলিশ জিরো টলারেন্স। তবুও মাদক সংক্রান্ত অভিযান নিয়মিত চলছে। প্রয়োজনে রামগতিকে মাদকমুক্ত করতে পুলিশ আরো কঠোর হবেন বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদক

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ