Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতীয় পাথর আমদানি

দেশীয় পাথর উত্তোলন বন্ধ : হচ্ছে নীতিমালা

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৫ এএম

দেশের অভ্যন্তরে সরকারের চলমান বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে না দেশীয় পাথর। তবে ভারতের ঝাড়খান রাজ্য থেকে পাকুর জাতের পাথর রেল ও সড়কপথে আমদানি করা হচ্ছে। দেশীয় পাথর উত্তোলনে সরকারিভাবে কোনো নীতিমালা না থাকায় যে যার মতো পাথর উত্তোলন করে আসছিল। এবার পাথর উত্তোলনের নীতিমালা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট ৭টি মন্ত্রণালয়, সংস্থার প্রধান এবং বিভাগীয় কমিশনারদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. কামাল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, পাথর উত্তোলন নিয়ে হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা রয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাথর উত্তোলনের বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। এরই মধ্যে আমি সিলেটের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। এসব বিষয় নিয়ে একটি সভা করা হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি) সূত্রে জানা গেছে, দেশে উৎপাদিত পাথর মাত্র ৬ দশমিক ৬ শতাংশ চাহিদা মেটায়। তার মধ্যে বৈধভাবে উত্তোলন করে ২ শতাংশ আর অবৈধভাবে উত্তোলন করে ৪ শতাংশ। এছাড়া ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ৯৪ শতাংশ পাথর আমদানি করা হচ্ছে। পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ বন্ধ করে বিদেশ থেকে আমদানি করলে দেশের মানুষ ও পরিবেশের বেশি লাভ হবে এমন শর্ত দিয়ে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি) জাফলংকে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া হিসেবে গেজেটভুক্ত করে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনার কারণে সিলেটের পাথর উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে। এক কারণে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে।

পরিবেশ দূষণসহ ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, প্রতিষ্ঠান ও পর্যটন শিল্প ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে নীতিমালা করা হচ্ছে। সরকারিভাবে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় বর্তমানে ‘জমি যার খনি তার’ এ নীতিতেই চলছে পঞ্চগড়, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাথর উত্তোলন। হাজার হাজার একর সমতল ভূমি গভীর গর্তে পরিণত করে হুমকির মুখে ফেলা হচ্ছে পরিবেশকে। বোমা মেশিনে পাথর তোলার বিষয়ে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১০ সালে পাথর উত্তোলনের নীতিমালা তৈরির জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি কোয়ারিগুলোয় যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু আজ অবধি নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারেনি সরকার। ভূমি মন্ত্রণালয় এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সার্ভে ম্যাপ ও চৌহদ্দি ঠিক করে দিতে পারে।

গত ২৪ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) সভাপতিত্বে পাথর কোয়ারিতে বিদ্যমান সমস্যা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয় বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ৭টি মন্ত্রণালয়, ৪ বিভাগীয় কমিশনার এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রধান উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈজ্ঞানিক পন্থায় পাথর উত্তোলন বন্ধের জন্য মতামত আসে। একই সঙ্গে পাথর উত্তোলনে সরকারের নীতিমালার না থাকার বিষয়টি আলোচনা হয়। পরে পাথর উত্তোলনের সমস্যা নিরসনের জন্য একটি নীতিমালা করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. কামাল হোসেনকে আহ্বায়ক এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ও মাঠ প্রশাসনের যুগ্মসচিব মুশফিকুর রহমানকে সদস্যসচিব করে ১৮ সদস্যের উচ্চপর্যায়ে একটি কমিটি করা হয়। কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আইন ও জেলা ও মাঠ প্রশাসন বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, খনিজ ও জ্বালানি সম্পদ বিভাগ, ভ‚মি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু, শিল্প, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত বা যুগ্মসচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা, রংপুর, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো, পরিবেশ অধিদপ্তর, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী রয়েছে এ কমিটিতে। কমিটি পাথর উত্তোলনে পরিবেশের বিরূপ প্রভাব এবং বন্ধে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ পর্যালোচনার পাশাপাশি ভবিষ্যতে পাথরে চাহিদা ও যোগান বিষয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও সুপারিশ করবে। কমিটি প্রয়োজনে পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করতে পারবে। একই সঙ্গে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা ও তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। কমিটির আগামী তিন মাসের মধ্যে সুপারিশসহ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পেশ করবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত সভা সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে সরকারি গ্রেজেটভুক্ত ৫০টি পাথর কোয়ারি রয়েছে। এসকল কোয়ারি থেকে দেশের চাহিদার মাত্র ৬ দশমিক ৬ শতাংশ পাথর উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে। এ সামান্য পাথর তুলতে গিয়ে কোয়ারি সংশ্লিষ্ট এলাকার নদীভাঙন, ভূমিধস, পরিবেশদূষণসহ ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, প্রতিষ্ঠান ও পর্যটন শিল্পের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এমন তথ্য দিয়ে আটকে আছে পাথর উত্তোলন।

সভায় রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল ওয়াহাব ভূঞা ইনকিলাবকে বলেন, পঞ্চগড় জেলায় ১৯টি পাথর কোয়ারি থেকে গত বছর মাত্র ৭৮ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। লালমনিরহাটে ৩টি কোয়ারি গত তিন বছর ধরে ইজারা হয় না। এসব বাস্তবতায় পাথর উত্তোলন বন্ধের সুপারিশ করেন তিনি।

সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান এনডিসি ইনকিলাবকে বলেন, পাথর উত্তোলন আমরা বন্ধ করিনি। এটি করেছে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো। তবে এ বিষয় জাতয়ি কমিটি পরিদর্শন করেছে। সিদ্ধান্ত নিবে সরকার। আমাদের বক্তব্য আমরা কমিটিকে দিয়েছে।

খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. নুরুন্নবী ইনকিলাবকে বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়টি এখনো আমার জানা নেই। তবে পরিবেশ রক্ষার কারণে বন্ধ করা হতে পারে। পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। এটি বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পন্থা স্থির করাযতে পারে। ২০১৯ সালে বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী পাথর উত্তোলন বন্ধের পক্ষে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী কাজী শাহ্রিয়ার হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বিদেশি পাথর আমদানির করের ক্ষেত্রে তো প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে। তবে দেশীয় পাথর উত্তোলন করা হলে প্রকল্পের ব্যয় কমতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এ কে এম আমিনুল হক ইনকিলাবকে বলেন, পাথর উত্তোলনের জন্য এলাকা নির্ধারণ করে দেওয়া প্রয়োজন। বাকি সকল জায়গা বন্ধ করা উচিত। এছাড়া আগামী ২০ বছর কী পরিমাণ পাথর লাগতে পারে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ দরকার। তবে পাথর কখনো পরিবেশদূষণ করে না।

বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদেও যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিলেট জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুল ইনকিলাবকে বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে ১ বছর ধরে সিলেটের সবকটি পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। মূলত পরিবেশ রক্ষার অজুহাতে একটি চক্রের ইন্ধনেই দেশীয় এ সম্পদ আহরণ বন্ধ রেখে নিম্নমানের বিদেশি পাথর আমদানি করে মধ্যস্বত্বভোগ করছে। আমরা পাথর উত্তোলনের জন্য দাবি-দাওয়াসহ বিভিন্ন কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছি। প্রয়োজনে বৃহত্তর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামব।

সিলেটে স্থানীয় অর্থনীতির অন্যতম উৎস পাথর। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত রহস্যজনক কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে পাথর উত্তোলন। এতে করে চরম বিপর্যয়ে পড়েছেন পাথর সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী। একইসাথে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। দেশের শীর্ষস্থানীয় এক ব্যবসায়ী গ্রুপের নিজস্ব স্বার্থরক্ষা করতে যেয়ে এ অফুরন্ত সম্পদরাশির এ পাথর কোয়ারিগুলো বন্ধ রাখা হয়েছেন বলে অনেকে মনে করছেন। স্থানীয় প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তার সেই ব্যবসায়ী গ্রুপের এজেন্টও হিসেবে পুরোদমে কাজ করছেন পাথর কোয়ারি বন্ধে। অথচ পাথর উত্তোলন পরবর্তী প্রাকৃতিকভাবে পুনরায় পাথরে ভরপুর হয়ে যায় পাথর কোয়ারিগুলো। কেবল পরিবেশ বিপর্যয়ের অজুহাতে কোয়ারি বন্ধ রাখার নৈপথ্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ। তারপরও কোয়ারি বন্ধ। মিছিল-মিটিং আন্দোলন, আবেদন নিবেদন, সংবাদ সম্মেলন, ধর্মঘটের পরও কোয়ারি খুলার পথ দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।

গত ২৯ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি দেখতে যান মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ কামাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। সিলেটের সব পাথর ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী পরিষদের প্রতিনিধি দল সিলেটের সব পাথর কোয়ারি পরিদর্শনে আসেন। কিন্তু তারপরও পাথর উত্তোলনের পথ সুগম হয়নি। এদিকে পাথর উত্তোলনের দাবিতে আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে বৃহত্তর সিলেটে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্যপরিষদ।

এ দিকে সিলেট ব্যুারো জানান, এদিকে ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি থেকে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন অব্যাহত রাখার ব্যাপারে হাইকোর্টের একটি নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু, সিলেটের জেলা প্রশাসক উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছেন না। এমন অভিযোগ আন্দোলনরত সংগঠনের। গত ৮ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা জানান, ‘সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো থেকে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর আহরণের অনুমতি প্রদানের দাবিতে গত প্রায় ৩ মাস ধরে এই সংগঠন আন্দোলনও চালিয়ে আসছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী, খনিজসম্পদ মন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ সব পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকদের কাছে একাধিকবার স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। সবশেষ গত ৩ ডিসেম্বর সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সিলেটের পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে সিলেটের জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। কিন্তু, এই আল্টিমেটাম অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসক কোনো নির্দেশনা বা ঘোষণা প্রদান করেননি। এতে করে পাথর নিয়ে চাপা ক্ষোভ দৃশ্যমান আন্দোলনে গড়াচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

স্থানীয় অর্থনীতির অন্যতম ভান্ডার পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় সিলেটের পাথর সংশ্লিষ্ট প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কর্মহীন হয়ে ভয়াবহ খাদ্য সংকটে মুখে পড়েছে। কর্মহীন মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপনের চরমসীমায় উপনীত। এ অঞ্চলের মানুষকে তাদের মৌলিক অধিকার রোজগার থেকে বঞ্চিত করার কারণে সৃষ্ট হয়েছে মানবিক বিপর্যয়। অভিযোগ উঠেছে দেশে উন্নতমানের পাথর রেখে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভের মুদ্রা অপচয় করে যারা ন্নিমানের পাথর আমদানির নামে মুদ্রা পাচার করা হচ্ছে। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণে দাবি তোলা হয় পরিবেশসম্মতভাবে পাথর আহরণের সুযোগ করে দেওয়ার। এ দাবিতে গত ২৪ নভেম্বর কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, ছাতকসহ এ অঞ্চলের ১০ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা রক্ষায় বিশাল এ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং পাথর কোয়ারির সন্নিকটে মামার বাজারস্থ পিউলি মাঠে। সভায় জানানো হয়- জাফলং, বিছনাকান্দি, ভোলাগঞ্জ, লোভা, উৎমা, শ্রীপুরসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার যুগ যুগ ধরে পাথর আহরণের মাধ্যমে নিশ্চিত ছিল লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। পাথর আহরণ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বংশ পরম্পরায় জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। আহরিত এ পাথরের রয়্যালটি বাবত সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে আসছিল।

অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পাথর আহরণ এবং বিপণন হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়ায় এক বছর ধরে সিলেটের উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ জনগোষ্ঠী অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হয়েছে। একই সাথে আহরিত এ পাথর বিপণনের সাথে সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, স্টোন ক্রাশার, মিল মালিক, পাথর ব্যবসায়ী, ট্রাক-ট্রাক্টর শ্রমিক, বার্জ, কার্গো, নৌকা মালিক শ্রমিক, পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছিল। সিলেটের এ পাথরের গুণগতমান উন্নত হওয়ায় দেশের নির্মাণ শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল হিসেবে এ পাথর ব্যবহার হয়ে আসছিল। বুয়েট, শাহজালাল ইউনির্ভাসিটিসহ দেশের সব প্রকৌশল সংস্থার মান বিবেচনায় এ পাথরের গুণগতমান এশিয়া মাহাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মনোনীত হওয়ায় নির্মিত অবকাঠামোর মজবুত ও স্থায়িত্ব সর্বজন বিদিত। খয়স্রোতা প্রবাহিনীর ভাটি অঞ্চলে অবস্থিত এ অঞ্চলে প্রতিবছর উজান থেকে লাখ লাখ টন পাথর নেমে এসে কোয়ারি অঞ্চল পরিপূর্ণ হয় এবং এ পাথরই শ্রমিকরা উত্তোলন করে দেশের নির্মাণ শিল্পে যোগান দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে পাথর কোয়ারিগুলোর পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় হাজার হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ব্যাংক লোন নিয়ে ব্যবসা শুরু করে আজ দেউলিয়া। সিলেটের পাথর কোয়ারি বন্ধ করে দেওয়ায় মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর যে মারাত্মক দুর্বিষহ অবস্থার সৃষ্ট হয়েছে। একটি বৃহৎ অঞ্চলের ১০ লক্ষাধিক মানুষের প্রাচীন এ জীবিকা বন্ধ হওয়ায় এর অর্থনৈতিক ক্ষতি হাজার হাজার কোটি টাকা। প্রান্তিক লাখো মানুষের জীবিকা বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি পাথর বিপণনের সাথে সম্পৃক্ত ১০ সহস্রাধিক ব্যবসায়ী ঋণখেলাপি হয়ে দেনা শোধ করতে না পেরে পলাতক জীবনযাপন করছেন। পাথর পরিবহনে সম্পৃক্ত হাজার হাজার ট্রাক ও ট্রাক্টর মালিক, শ্রমিক রোজগার বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর হিসেবে পরিচিত উত্তরের জনপদ দিনাজপুর জেলার হিলি স্থলবন্দর। এ বন্দরের সাথে ভারত এবং বাংলাদেশের সড়ক ও রেল যোগাযোগ ভালো থাকায় অল্প সময় পরিচিতি লাভ করে সারা দেশে। সম্প্রতি এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই সাথে বন্দর এলাকায় কমেছে আমদানিকৃত পাথরের দাম। গত এক মাস আগে যে পাথর হিলি বন্দরে বিক্রি হয়েছে প্রতিটনে ৩ হাজার ৯শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা দরে। সেই পাথর এখন প্রতিটনে ৭শ’ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২শ’ থেকে ৩ হাজার ৩শ’ টাকা দরে। হিলি স্থলবন্দরের পাথর আমদানিকারক পলাশ জানান, দেশে পাথরের চাহিদা বাড়ায় এখন রেল ও সড়ক পথে আমরা পাথর আমদানি করছি। শ্রমিক নেতারা বলেন, সড়ক পথের সাথে রেলপথে পাথর আমদানি হওয়ায় আমাদের কাজ বেড়েছে। আগে আমরা প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা মজুরি পেলেও এখন থেকে বেশি পাচ্ছি।



 

Show all comments
  • Shahin Rana ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:০৯ এএম says : 0
    টাকা মারার ধান্ধা
    Total Reply(0) Reply
  • Md Riyajul Islam ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:০৯ এএম says : 0
    ঘাপলা অাছে
    Total Reply(0) Reply
  • Humayun Kabir ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:০৯ এএম says : 0
    আমদান‌ির নাম‌ে ব‌িদ‌েশে টাকা পাচার না হল‌ে ক‌ি চলব‌ে ?
    Total Reply(0) Reply
  • Salam Sheikh ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:০৯ এএম says : 0
    পর্যটন শিল্প রক্ষা করতে পাথর উত্তোলন বন্ধের কোন বিকল্প নাই।।
    Total Reply(0) Reply
  • Ala Uddin ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:১০ এএম says : 0
    কর্ণফুলী পেপার মিলসঃ যেভাবে বন্ধ হয়েছিল ভারতের পেপার আমাদানি করার জন্য। একে একে তারা সবকিছুই ভারতের হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত।ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Touhidul Islam Bablu ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:১১ এএম says : 0
    Desher pathor khoni bondho howate poribesher lab hoyese, akhon protidin hazar hazar porjotok jacche oikhane
    Total Reply(0) Reply
  • Abdullah ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ৬:৪৮ এএম says : 0
    কার স্বর্থে ডারতীয় পাথর আমদানী করা হচ্ছে। দেশীয় পাথর তুলে যারা জিবিকা নির্বাহ করত তারা বেকার হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • শাওন ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৪৪ এএম says : 0
    বাংলাদেশের পাথরের কী ঘাটতি রয়েছে? এইভাবে পাথর অামদানি করলে খেটে খাওয়া দিন মজুররা বিপর্যস্ত হবে এবং অবিলম্বে পাথর অামদানি বন্ধ করা হোক
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ