Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্যবিষয়ক ইউটিউবারদের পরামর্শ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

প্রযুক্তির এ যুগে অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়টি অনস্বীকার্য। এ ব্যবস্থায় ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, নেটফ্লিক্সসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যোগাযোগ এবং তথ্যের আদান-প্রদান যেমন মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে এনেছে, তেমনি এর অপব্যবহারও মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তথ্যের সত্যতা ও যাচাই-বাচাই ছাড়াই অনেকে তা বিশ্বাস করছে এবং শেয়ার করে ভাইরাল করে দিচ্ছে। এতে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সময় যে কোনো বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক ও ত্রাস ছড়াচ্ছে। অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যমে সচেতনতামূলক পোস্টের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করাও হচ্ছে। অনলাইন ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়টি এখন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ঘরে বসে কেনা-কাটার বিষয়টি সহজ করে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেইজ খুলে অসংখ্য মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। এর পাশাপাশি অনেকে ইউটিউবে নানা চটকদার এবং মানুষের কাছে আকর্ষণীয় বিষয় নিয়ে চ্যানেল খুলে ভিউয়ার্স বাড়িয়ে ব্যবসাও করছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, নানা বিষয়ে ইউটিউব চ্যানেল খোলার পাশাপাশি চিকিৎসা, ডায়েটিং, শরীর চর্চার মাধ্যমে বডিবিল্ডিং বিষয়ক অনেক চ্যানেলের অসত্য তথ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। গতকাল ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজ-এর এক প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত ইউটিউব চ্যানেলের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ ধরনের অনেক চ্যানেলের ইউটিউবার নিজেদের ডায়েটিশিয়ান, জিম বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে স্লিম হওয়া এবং বডিবিল্ডিংয়ের পরামর্শসহ স্বাস্থ্যবিষয়ক নানা তথ্য উপস্থাপন করে বিভিন্ন ধরনের ডায়েট চার্ট ও ব্যায়ামের টিপস দিচ্ছে। তাদের এসব টিপস অনুসরণ করতে গিয়ে বহু মানুষ বিভিন্ন শারিরীক সমস্যা ও রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে এবং পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ইউটিউবার প্রকৃত বিশেষজ্ঞ না হওয়ায় তাদের টিপস অনুসরণ করা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ১১ কোটি। এর মধ্যে সাড়ে ৩ কোটি ফেসবুক ব্যবহার করে। বিপুল সংখ্যক এই ব্যবহারকারীদের টার্গেট করে হেন কোন বিষয় নেই যা নিয়ে অনেকে ইউটিউব চ্যানেল খুলে না বসেছে। তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য, সৌন্দর্য বৃদ্ধি, স্লিম হওয়া, শরীর গঠন বিষয়ক বিভিন্ন আকর্ষণীয় তথ্য উপস্থাপন করে ভিউয়ার্স সংখ্যা বাড়িয়ে ব্যবসা করা। অনেকে এর মাধ্যমে মাসে হাজার হাজার টাকা উপার্জন করছে। তারা পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন পেজ থেকে এসব তথ্য নিয়ে নিজেরাই বিশেষজ্ঞ সেজে উপস্থাপন করছে। বিষয়গুলোর প্রতি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বিশেষ করে কম জানা মানুষ আকৃষ্ট হয়ে তাদের টিপস ও পরামর্শ মতো চলতে গিয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। বলা বাহুল্য, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের মানুষের কাছে যেটা প্রযোজ্য, আমাদের দেশের মানুষের জন্য তা প্রযোজ্য নাও হতে পারে। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। হচ্ছেও তাই। বিদেশী বিষয়ের প্রতি আমাদের দেশের মানুষের আগ্রহ বেশি থাকায় এ সংক্রান্ত ইউটিউবারদের ধার করা পশ্চিমা বিশ্বের টিপস অনেকেই গ্রহণ করছে। এই টিপস অনুযায়ী, ডায়েটিং, ওষুধ ও সাপ্লিমেন্টারি ফুড গ্রহণ এবং ব্যায়াম করতে গিয়ে তারা উল্টো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বারডেমের এক পুষ্টি বিশেষজ্ঞের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিমাসে এ হাসপাতালে ৩০ জন রোগী এ সংক্রান্ত ইউটিউবারদের পরামর্শ মেনে চলতে গিয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এদের অনেকের মধ্যে আলসার, হৃদরোগ ও কিডনী রোগের জটিলতা থাকে। এছাড়া লিভারে ফ্যাট জমে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। দিন দিন এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমাদের দেশের অনেকে ইউটিউবে উপস্থাপনকৃত অনেক বিষয় বিশ্বযোগ্য বলে মনে করে। রোগ-বালাইয়ের ক্ষেত্রে পরামর্শ নিতে তারা তাৎক্ষণিকভাবে ইউটিউবের শরনাপন্ন হয়। চিকিৎসকের সাথে কোনো ধরনের পরামর্শ না করেই রোগীকে তা সেবন করানো বা মেনে চলতে বলা হয়। এভাবে একেক ইউটিউব চ্যানেলের ভিন্ন ভিন্ন পরামর্শ মেনে চলার কারণে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এছাড়া দুষ্টুচক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অনির্ভরযোগ্য, বানোয়াট তথ্য সম্বলিত পোস্ট করে গুজব রটায়। এতে সামাজিক, পারিবারিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও সৃষ্টি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। এর অপব্যবহার রোধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বিটিআরসিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ক্ষতিকারক ইউটিউব চ্যানেলসহ ফেইসবুকের অপপ্রচারকারী বিভিন্ন পেইজ ও গ্রুপের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

ইউটিউবসহ ফেইসবুকে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের বিভিন্ন চ্যানেল ও পেইজ রয়েছে। বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানি এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞের অনলাইনভিত্তিক টেলিমেডিসিন সেবা ও কাউন্সেলিংয়ের অনুমোদন রয়েছে। রেজিস্টার্ডকৃত ও স্বীকৃত এসব বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পরামর্শ নেয়া যায়। এমনকি বিদেশী চিকিৎসকদের সঙ্গেও অনলাইনে যোগাযোগ করে পরামর্শ নেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এর বাইরে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক কথার ফুলঝুরিতে আকৃষ্ট হয়ে পান্ডিত্য দেখানো এবং ইউটিউবারদের পরামর্শ নেয়া কোনোভাবেই সমীচীন নয়। এর ক্ষতি অত্যন্ত ভয়াবহ এবং জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ ব্যাপারে সকলকে সচেতন হতে হবে। ইউটিউবারদের কথা সঠিক এবং তা অবশ্য পালনীয়, এ ধারণা থেকে সরে আসতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাস্থ্যবিষয়ক
আরও পড়ুন