Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণের অজুহাত ফ্রান্সে ইসলাম বিরোধী আইন অনুমোদন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

ফ্রান্সে মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে একটি আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে দেশটির মন্ত্রিসভা। ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ রক্ষার অজুহাতে দীর্ঘ দিন ধরে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর জোর প্রচেষ্টার পর আসা খসড়া এই আইনটিতে হোম-স্কুলিংয়ের নিয়ম কানুন এবং হেট স্পিচ বা জাতিবিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য ঠেকাতে কঠোরতা আরোপ করবে।

ফ্রান্সে এবং এর বাইরে অনেক সমালোচক ম্যাখোঁর সমালোচনা করে বলেছেন যে, ধর্মকে টার্গেট করতেই এই আইন ব্যবহার করা হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ ক্যাসতেক্স এটিকে ‘সুরক্ষা আইন’ বলে অভিহিত করেছেন যা মুসলিমদেরকে উগ্রতার হাত থেকে মুক্তি দেবে বলে মনে করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এটি ‘ধর্মের বিরুদ্ধে বা বিশেষ করে মুসলিমদের ধর্মের বিরুদ্ধে’ ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়নি। ম্যাখোঁ বলছেন, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রুখতেই এই বিল আনা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রী, রাজনীতিবিদরা বলছেন, কট্টরপন্থী মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য নিয়েই বিল আনা হয়েছে। শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে হত্যা ও কার্টুন বিতর্কের পর এই আইন এনেছেন ম্যাখোঁ। মন্ত্রিসভায় বিল অনুমোদিত হয়েছে। এবার পার্লামেন্টে বিতর্ক হবে। তার আগে বিলে কী আছে, তার অনেকটাই সামনে এসেছে।
বিবিসি জানায়, এই আইনে ঘরে ইসলামি শিক্ষায়ও কড়াকড়ি আনা হয়েছে। শিশুদের বয়স তিন বছর হলেই স্কুল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া ঘরোয়া শিক্ষা দেয়া যাবে না। মূলত কঠোর অনুশাসন শেখার ‘অপ্রকাশ্য’ স্কুল বন্ধে এই আইনের অধীনে গোপনে চলা যেসব স্কুল ইসলামি আদর্শ প্রচার করে সেগুলোর উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং হোম-স্কুলিং বা বাড়িতে শিক্ষার বিষয়টি উপর কড়াকড়ি আরোপ হবে। আইনটি বহুবিবাহের উপরও নিষেধাজ্ঞা দেবে। এর আওতায় একাধিক স্ত্রী রয়েছে এমন আবেদনকারীকে ফ্রান্সে বসবাসের অনুমতি দেয়া হবে না। যেসব চিকিৎসক মেয়েদের কুমারীত্ব পরীক্ষা করবেন তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা বা জরিমানা হতে পারে। আইনটিতে আরেকটি ধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক মসজিদকে সরকারিভাবে নিবন্ধিত হতে হবে, যাতে সহজে সেগুলোকে শনাক্ত করা যায়। মসজিদে বিদেশি ফান্ড নিষিদ্ধ হবে না তবে সেটি ১০ হাজার ইউরোর বেশি হলে ঘোষণা দিতে হবে। সরকারি অফিসে ধর্মীয় পোশাক নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো হয়েছে মার্কেট, সুইমিংপুল ও পরিবহন কর্মীদের মধ্যেও। এর মাধ্যমে নারীদের হিজাব পরার ওপর আরও বেশি কড়াকড়ি আরোপ হলো। তবে ৫০টি ধারার এ আইনে ‘ইসলাম’ বা ‘মুসলিম’ কোনো শব্দই উল্লেখ করা হয়নি। ‘প্রজাতন্ত্রের মূলনীতির সমর্থনে’ এই আইনটি অনলাইনে হেট স্পিচ বা জাতিবিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য ঠেকাতে বিধি-নিষেধ আরোপ করবে এবং খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার জন্য অন্য মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য জানাতে ইন্টারনেটের ব্যবহার নিষিদ্ধ করবে। সামনে কয়েক মাসে পার্লামেন্টের অধিবেশনে আইনটি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করবেন ফ্রান্সের আইনপ্রণেতারা। এরপর এটি চ‚ড়ান্তভাবে পাস হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফ্রান্সে প্রায় ৫০ লাখ মুসলিম জনগণের বসবাস, যা ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বড় মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন ম্যাখোঁ। তুরস্কের সাথে সম্পর্কে এরইমধ্যে চির ধরেছে এবং প্রেসিডেন্ট এরদোগান এই প্রস্তাবনাকে ‘খোলা উস্কানি’ এবং ম্যাখোঁকে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ বলে মন্তব্য করার পর তা আরো খারাপ হয়েছে। পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং লেবাননেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মার্কিন কুটনীতিক স্যাম ব্রাউনব্যাকও এর সমালোচনা করে বলেছেন, ‘যখন আপনি কঠোরহস্ত হবেন তখন পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।’ খোদ ফ্রান্সেও কিছু বামপন্থী রাজনীতিবিদরা এই প্রস্তাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন যে এই প্রস্তাবনা মুসলিমদের জন্য অসম্মানজনক হতে পারে। লা ম্যঁদে সংবাদপত্র বলেছে, অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায় যারা হোম-স্কুলিং করে থাকে তারাও এই আইনের বিরোধিতা করতে পারে। সূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, এএফপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ