Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব দিতে হবে

মাহমুদুল হাসান ইজাজ | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

অতীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সরকারি সাতটি কলেজকে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় (ঢাবি)-এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ঐতিহ্যবাহী কলেজগুলো হচ্ছে, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ এবং সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। মূলত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমাতে এবং উক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষাবিদদের পরামর্শের প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো। তবে ঢাবি অধিভুক্ত হওয়ার পর উক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনা দিন দিন যেন বেড়েই চলছে। বর্তমান করোনা মহামারীর ভয়াবহ পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম যখন স্থগিত ঠিক সেই মুহুর্তে ঢাবি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মনে ফের সেশন জটের আশংকা দেখা দিচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই নানা রকম সমস্যায় জর্জরিত হয়ে এবং বঞ্চনার শিকার হয়ে আন্দোলনে নামে উক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা। তাদের উত্থাপিত দাবীগুলোর মধ্যে ছিলো সেশনজট নিরসনে শিক্ষাপঞ্জি দ্রুত চালু করা, পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ, সাত কলেজ পরিচালনায় স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ভবন স্থাপন ও সিলেবাস অনুযায়ী প্রশ্নপত্র প্রণয়নসহ সাত কলেজের শিক্ষকদের দিয়েই উত্তরপত্র মূল্যায়ন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা একাধিকবার আন্দোলনে নামলেও দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পরও উক্ত সমস্যার স্থায়ী সমাধান দিতে সক্ষম হয়নি ঢাবি প্রশাসন।

২০১৪-১৫ সেশনের চতুর্থ বর্ষের লিখিত পরীক্ষা ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হয় চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি। উক্ত সেশনের চলমান ২৫ টি বিভাগের মধ্যে এখনো ফলাফল পায়নি ৭ টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। যার ফলে একই সেশনের অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা চাকরির জন্য আবেদন করতে পারলেও বঞ্চিত হচ্ছে ৭ টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ২০১৫-১৬ সেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনার্স শেষ হলেও ঢাবি অধিভুক্ত ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের এখনও পরীক্ষাই হয়নি। পরবর্তী সেশনের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা এবং ফলাফল নিয়ে একই জটিলতা বিদ্যমান। দীর্ঘ ৯ মাস পার হয়ে গেলেও ২০১৮-১৯ সেশনের অধিকাংশ বিভাগের ফলাফল এখনও প্রকাশ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৩ মাসের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের প্রতিশ্রুতি থাকলেও, তা রক্ষা করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের প্রতি ঢাবি কর্তৃপক্ষ কতটা বেখেয়াল তা উঠে আসে ২০১৭-১৮ সেশনের আরবী বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফলাফল বিড়ম্বনার চিত্র থেকে। অধিভুক্ত সাত কলেজের মধ্যে শুধুমাত্র কবি নজরুল সরকারি কলেজেই আরবি বিভাগ রয়েছে। উক্ত সেশনে এই বিভাগের শিক্ষার্থী সংখ্যাও মাত্র চারজন। স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের আরবি বিভাগের সেই চার শিক্ষার্থী গত বছরের নভেম্বর মাসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও দীর্ঘসময় পার হওয়ার পর তারা ফলাফল পান চলতি বছরের অক্টোবর মাসে। মাত্র চারজন শিক্ষার্থীর ফলাফল প্রকাশেই এত সময় নিচ্ছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।

করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে ঢাবি কর্তৃপক্ষ থেকে অনলাইন ক্লাস সম্পর্কিত কোনো নির্দেশনা না পেলেও নিজেদের উদ্যোগে সাত কলেজের কিছু কিছু বিভাগের অনলাইন ক্লাস শুরু করেছিলো কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এই উদ্যেগে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সুফল ভোগ করতে পারছে না। কারণ অধিকাংশ শিক্ষার্থী প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা এবং অধিকাংশের নেই উপযোগী ডিভাইস। তাই অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতি সংখ্যা শতভাগের মধ্যে দশ ভাগ নিশ্চিত করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু বিভাগে আবার অনলাইনে সীমিত আকারে পরীক্ষা নিয়ে থাকলেও তার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়ার সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজেদের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়াই পরবর্তী সেমিস্টারের ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে একই সেশনে পড়ুয়া ঢাবি শিক্ষার্থী থেকে পিছিয়ে পরবে ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। যার ফলে ফের সেশন জট শংকায় রয়েছে চলমান সেশনগুলোর শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধে সামান্য ব্যবধানের জন্য দুর্ভাগ্য বশত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের আসনটি নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়না বহু শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে তাদের একাংশ সাত কলেজে ভর্তির ইচ্ছায় পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকে। এছাড়াও বহু শিক্ষার্থী রয়েছে যারা পছন্দের বিষয় না পাওয়ার প্রেক্ষিতে এবং নগর জীবনের প্রত্যাশায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে বেছে নেয় সাত কলেজকে। কিন্তু ঢাবি কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এই মেধাবী শিক্ষার্থীরা নিদারুণ হতাশায় ভুগে। ঢাবি কর্তৃপক্ষের এই দৃষ্টিভঙ্গী পরিহার করা উচিৎ। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের একই মানের সনদ প্রদান করা হয়ে থাকে, তাই শিক্ষার মানের দিক থেকেও সমান সুযোগ প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে ঢাবির মতো সাত কলেজেও সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করা উচিৎ বলে মনে করছি। এতে শিক্ষার মানের খুব একটা তারতম্য ঘটবে না। সর্বোপরি ঐতিহ্যবাহী সরকারি সাত কলেজের ঐতিহ্য রক্ষার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করা একান্ত কাম্য।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অধিভুক্ত-সাত-কলেজ
আরও পড়ুন