Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রশ্ন : হিংসা ও তার প্রতিকার কি?

| প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

উত্তর : মানুষের আত্মার ব্যাধিসমূহের প্রধান ব্যাধি হলো হিংসা। হিংসার ভিত্তি হল অতিমাত্রায় দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা, কোনকিছু অর্জন ও সম্পদের মোহ। হিংসা আগুনের মত, এটা অত্যন্ত ভয়াবহ ব্যাধি; হিংসুক নিজেই হিংসার আগুনে জ্বলে। আল্লাহ তাআলা তাঁর কোন বান্দাকে সম্পদ দিয়েছেন, কাউকে সম্মান দিয়েছেন, কাউকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কাউকে খ্যাতি দিয়েছেন, কাউকে সুস্বাস্থ্য দিয়েছেন, আবার কাউকে দিয়েছেন জ্ঞান। হিংসুকের মনের জ্বালাপোড়া শুরু হয়ে যায় যে, এই সম্পদ তার কেন অর্জিত হল? যদি তার থেকে এই নেয়ামত চলে যেত, তাহলে ভাল হত! যদি অন্যের কোন বিপদ হয়, তাহলে সে খুশি হয়, আর যদি অন্যের ভালো কিছু অর্জিত হয়, তাহলে অন্তরে সে ব্যথা পায় এবং আফসোস প্রকাশ করতে থাকে, কেন সে আমার চেয়ে বড় হয়ে গেল, উন্নতি লাভ করল।

হিংসার অর্থ: ‘হিংসুকের হিংসাকৃত ব্যক্তি থেকে আল্লাহপ্রদত্ত নেয়ামতসমূহ দূর হওয়ার প্রত্যাশা করা।’

কোরআনে উল্লেখ হয়েছেঃ “আর তোমরা আকাঙ্ক্ষা করো না এমনসব বিষয়ে যাতে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের একের ওপর অপরের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।” [সূরা নিসা ৩২] কোরআনে আরো উল্লেখ হয়েছেঃ “এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে (আশ্রয় চাই) যখন সে হিংসা করে।” [সূরা ফালাক ৫] হাদীসে উল্লেখ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘তোমরা পরস্পর হিংসা করো না।’ (বুখারী ৬০৬৫)

পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা কাউকে সুস্থতা দিয়েছেন, কিন্তু সম্পদ দেননি, কাউকে সম্পদ দিয়েছেন কিন্তু সুস্থতা দেননি, কাউকে ধর্মীয় জ্ঞান দিয়েছেন কিন্তু সম্পদ-বিত্ত দেননি, কাউকে মর্যাদা-খ্যাতি দিয়েছেন কিন্তু সন্তান দেননি। এগুলো আল্লাহ তায়ালার ফায়সালা, বান্দার কোন আপত্তি করার অধিকার নেই। কোরআনে উল্লেখ হয়েছে, “আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন।” [সুরা হজ ১৪] বান্দার প্রত্যেকের নিজ নেয়ামতের প্রতি তাকানো উচিত।
হিংসার প্রকারভেদঃ হিংসা দু প্রকারঃ- (ক) প্রকৃত হিংসা,তা হচ্ছে: অন্যের নেয়ামতগুলো দূর হওয়ার আশা প্রকাশ করা। যা হারাম-অবৈধ। (খ) রূপক হিংসা, এটা হচ্ছে: অপরের নেয়ামত দূর হওয়ার আশা না করে অনুরূপ প্রাপ্তির আশা করা; এটাকে আরবিতে ‹গিবতা› বলা হয়। ইবাদাতের ক্ষেত্রে হলে এটা প্রশংসনীয়, গুনাহের ক্ষেত্রে নিন্দনীয়-অবৈধ। হাদিসে আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেনঃ ‘কেবল দুটি ব্যাপারে ঈর্ষা করা যায়; (১) সে ব্যক্তির ওপর, আল্লাহ তাআলা যাকে সম্পদ দান করেছেন এবং হক পথে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন। (২) সে ব্যক্তির ওপর, আল্লাহ তাআলা যাকে হেকমত (ধর্মীয় বিধানাবলীর জ্ঞান) দান করেছেন, এরপর সে তদনুযায়ী ফায়সালা করে ও তা অপরকে শিক্ষা দেয়।’ (বুখারী ৭৩, মুসলিম ১৭৮১) *পৃথিবীতে অশান্তির একটি বড় কারণ হচ্ছে হিংসা। শত্রুতার কারণে হিংসার জন্ম হয় এবং পরিণতিতে অনেক সময় ভয়াবহ দ্ব›দ্ব-কলহের মত অবস্থার সৃষ্টি হয়।

হিংসার প্রতিকারঃ ১। হিংসা অন্তরের বড় একটি রোগ, এটাকে সব সময় খারাপ মনে করা। ২। প্রয়োজন অনুপাতে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা। ৩। বিনয়ী হওয়া এবং লোকজনের দুঃখ-কষ্টে সহানুভূতি প্রকাশ করা। ৪। নিন্দা-সমালোচনার পরিবর্তে প্রশংসা করার চেষ্টা করা। ৫। বেশি বেশি সালাম প্রদান করা। ৬। হাদিয়া-উপহার প্রদান করা।

যার প্রতি হিংসা করা হয়েছে তার করণীয়ঃ
১। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবাদের প্রতি যখন দুষ্ট লোকেরা হিংসা করেছে, তখন তাঁদের কর্ম কি ছিল তা স্মরণ করা। ২। বেশিবেশি আল্লাহর কাছে দুষ্টলোকের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাওয়া। বেশি বেশি সূরা ফাতিহা, নাস, ফালাক, আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। হাদীসে বর্ণিত এ দোয়াটি পড়া: ‘আউযু বিকালিমা’তিল্লাহিত তা’ম্মাতি মিন শার্রি মা খলাক।’ অর্থঃ ‘আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমার দ্বারা (অর্থাৎ- আল্লাহর নাম, গুণবাচক নাম এবং কোরআনের আয়াতের ফযিলতে) তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট হতে আশ্রয় চায়।’ (মুসলিম ৬৭৭২, এ দোয়া পাঠ করলে মানুষ হোক বা প্রাণী কোন কিছু তার ক্ষতি করতে পারে না।)
উত্তর দিচ্ছেন : মুফতি আবু বকর সিদ্দিক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হিংসা

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ