পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। রাজধানী ঢাকায়ও সকাল-সন্ধ্যায় শীত অনুভুত হচ্ছে। অগ্রহায়ণের শেষ দিকে শীতকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্যই শীতবস্ত্র কেনাবেচা বেড়ে গেছে। রাজধানী ঢাকার মার্কেট ও ফুটপাতগুলোতে জমজমাট হয়ে উঠেছে শীতবস্ত্রের বিক্রি। রাজধানীর ফুটপাথগুলোতে শোনা যায় ‘দেইখ্যা লন, বাইছ্যা লন, একদাম, এক রেট’ ইত্যাদি হকারদের কেরাস। শুধু ঢাকার ফুটপাথ, শীতবস্ত্রের পাইকারি মার্কেট বঙ্গবাজার, ইসলামপুর নয়; রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জের পাইকারি পোশাকপল্লীতে জমে উঠেছে শীতবস্ত্রের বেচাকেনা । নারীপুরুষ, শিশু, কিশোর-কিশোরী সব বয়সের মানুষের জন্য নানা রকম শীতবস্ত্রের পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে শীতবস্ত্র কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ব্যবস্থা বন্ধ থাকার পর শীত শুরু হয়েছে। এবার বিক্রি হচ্ছে দেদার।
রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, মতিঝিল, দিলকুশিা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ফুটপাতে শীতবস্ত্রের ব্যাপক পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানীরা। মেয়েদের কার্ডিগান ও ছেলেদের জন্য সোয়েটার, জ্যাকেট, ব্লেজার, ট্রাউজার, চাদর, সায়েটারসহ নানা ধরণের শীত বস্ত্র বিক্রি হচ্ছে। ফূটপাতে যারা অন্য পণ্য বিক্রি করতেন তারাও শীতের কারছে শীতবস্ত্র বিক্রি শুরু করেছেন। ফুটপাতের দোকানীরা জানান, নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়ে ঠিকই; তবে বিক্রি বেশি হওয়ায় তা পুষিয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, শীতবস্ত্র বিক্রিতে সারাদেশের বস্ত্র ব্যবসায়ীরা আসেন কেরানীগঞ্জে। সেখান থেকে পাইকারি দরে পণ্য কিনে নিজ নিজ জেলায় বিক্রি করে থাকেন। কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লীতে বিক্রয় কেন্দ্র ও কারখানার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজারের বেশি। এখানকার বিক্রয় কেন্দ্র ও কারখানায় দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া দেশের শীত পোশাকের প্রায় ৭০ শতাংশ কেরানীগঞ্জ থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লী গত দুদিন সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যেকটি দোকানে শীত পোশাক বিক্রিতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে দোকান মালিকরা। স্থাানীয় কারখানায় তৈরি ও দেশের বাইরের থেকে আমদানি করা শীত পোশাক ঝুলিয়ে ও থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন দোকানের কর্মচারীরা। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ক্রেতারা আসলে বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক দেখাচ্ছেন দোকানিরা। ক্রেতাদের পছন্দ হলে কিনছেন। সেখানে মেয়েদের কার্ডিগান ও ছেলেদের জন্য সোয়েটার, জ্যাকেট, বেøজার, ট্রাউজারসহ বিভিন্ন ধরনের গরম কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। দাম ও মানে ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এ সময় এসব বস্ত্র কিনতে ভিড় করতে শুরু করেছেন খুচরা বিক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার পর শীতে বেশ কয়েকটি পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। ওই সব নির্বাচনের প্রার্থীরা নিজ নিজ ছবি সম্বলিত মার্কা আাঁকা শীতবস্ত্র ক্রয়ের জন্য আগাম অর্ডার দিচ্ছেন। তারা ভোটারদের মন পেতে শীতবস্ত্র বিতরণ করবেন । তাই গরম কাপড়ের কদর বেড়ে যাবে। তাদের ধারণা করোনার পর এবার ব্যবসা ভালো হবে।
জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির নেতা শেখ কাওসার বলেন, এখানকার ব্যবসায়ীরা শীত বাজার ধরতে প্রস্তুতি শেষ করেছে। এবার শীত মৌসুমে কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লীতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বেচাকেনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে শীত যদি একটু বেশি পড়ে, তবে বিক্রি আরো বেড়ে যাবে। আর এবারের শীতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ায় বিক্রি বাড়বে।
পুরান ঢাকা (ইসলামপুর) কাপড়ের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীতে সাধারণ কাপড়ের বিক্রি কম। তবে শীতের কাপড়ের বিক্রি অনেক বেশি। ঈদ ও বিশেষ অনুষ্ঠানে ভারত, চীন ও থাইল্যান্ড থেকে কাপড় আমদানীর করা হতো। কিন্তু শীতের পণ্য দেশেই ভাল উৎপাদন হয়ে থাকে। তাই দেশের পণ্যের চাহিদা বেশি। লালমনিরহাট থেকে আসা পোশাক ব্যবসায়ী মামুন হোসেন বলেন, দেশের প্রত্যেকটি ধর্মীয় উৎসব ও শীত মৌসুমে কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লী থেকে বিভিন্ন ধরনের পোশাক নিয়ে বিক্রি করেন। এবারও শীতকে ঘিরে পোশাক কিনতে এসেছেন। কারণ কেরানীগঞ্জে দেশি ও বিদেশি অনেক ধরনের শীত পোশাক পাওয়া যায়। কাপড়ের মান অনেক ভালো। ডিজাইনও অনেক চমৎকার। আর সব বয়সের মানুষের জন্য সব ধরনের শীত পোশাক পাওয়া যায়। ক্রেতারাও এ পোশাকগুলো পছন্দ করে কিনে নেয়। তাই প্রতিবছর এখান থেকেই শীত পোশাক নিয়ে ব্যবসা করি।
এদিকে গতকাল গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট এলাকা ও জিপিও’র তিন দিকে ফুটপাতজুড়ে স্যুট-ব্লেজারসহ নানান শীতবস্ত্রের পসরা নিয়ে বসেছে দোকানীরা। এখানে নুতন ও পুরনো দুই রকমের স্যুট- ব্লেজার পাওয়া যায়। পুরনো ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। আর নতুনগুলো ৮০০ থেকে২০০০ টাকা পর্যন্ত। তবে প্রতিটি ফুটপাতেই দেখা গেল হুডি গেঞ্জি বিক্রি বেশি। বিক্রেতারা জানান, এবার হুডি গেঞ্জি ও শার্ট ভালো চলছে। মানভেদে দাম পড়ছে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা।
নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেল বাচ্চাদের শীতের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে। সাবিনা ইয়াসমিন নামের একজন ক্রেতা কিনলেন একটি জ্যাকেট ও দুটি হুডি গেঞ্জি । তিনি বলেন, শীত চলে এসেছে। বাচ্চাদের জন্য শীতের কাপড় কিনতে এসেছি। কাপড় পছন্দ হওয়ায় বড়দের জন্য কিনে নিলাম।
রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া ঘুরে দেখা গেছে ফুটপাতগুলোতে বিক্রেতাদের নানা রকম হাঁকডাক। কোথাও কোথাও তালে তালে ক্রেতাদের আকর্ষণ করছে- ‘দেইখ্যা লন, বাইছ্যা লন, একদাম, এক রেট, এক শ, দেড় শ, তিন শ টাকা’ ইত্যাদি। রাজধানীর কয়েকটি ফুটপাত ঘুরে দেখা যায় সব ধরণের শীতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। ২০ টাকার মোজা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে সোয়েটার, জ্যাকেট, চাদর, কানটুপি, হাতমোজা, পা মোজাসহ শীতের নানা বস্ত্র।
ষড়ঋতুর হিসেবে শীত আসতে বাকি। এখনো চলছে অগ্রহায়ণ মাস। পৌষ ও মাঘ মাস শীতকাল। সপ্তাহ খানেক পরই অগ্রহায়ণ বিদায় নিয়ে শুরু হবে শীতের প্রথম মাস পৌষের। শীতের প্রস্তুতি সারতে রাজধানীর মানুষ আগেভাগেই কিনে রাখছেন নিজের পোশাকটি। আর জেলা উপজেলা পর্যায়ের কাপড় ব্যবসায়ীরা নিজেদের দোকান সাজাতে কেরাণীগঞ্চ থেকে পাইকারি দরে পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এর মধ্যেই শীত বস্ত্রের বাজার কার্যত জমজমাট হয়ে উঠেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।