২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
সুস্বাস্থ্য সৃষ্টিকর্তার অসীম অনুগ্রহ, এই কথা আমরা সবাই জানি। এই সুসাস্থের জন্য বড় হুমকি হচ্ছে রোগ জীবাণু। প্রতিদিন কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাক আমাদের অজান্তে আক্রমণ করে যাচ্ছে। অথচ আমরা দিব্যি সুস্থ হয়ে হাঁটছি। ‘রোগ প্রতিরোধ’ বা ইমিউনিটি নামের আশ্চর্য ক্ষমতার বলে আমরা জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হচ্ছি প্রতিনিয়ত। যখন পরাজিত হই তখনই ঘটে বিপত্তি। হালকা সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে মরণঘাতি অসুখ দানা বাঁধে শরীরে।
এই রোগ প্রতিরোধের কিছু ক্ষমতা আমরা জন্মগত পেয়ে যাই। আমাদের চামড়া বাইরের জীবাণু ভিতরে ঢুকতে দেয়না। চোখের অশ্রু, পাকস্থলীর অম্ল ব্যাকটেরিয়া দূর করে। আমাদের রক্তের শ্বেতকণিকার প্রধান কাজই হচ্ছে জীবাণু মেরে ফেলা। বয়সের সাথে সাথে টিকা এবং বিভিন্ন সংক্রমণের মাধ্যমে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও পোক্ত হয়। একবার ভাবুন, এই প্রতিরোধ ক্ষমতার যদি একটিও ঘাটতি হয়, তাহলে কি হবে। আপনার চামড়া কেটে গেলে জীবাণু ঢুকে যেতে পারে রক্তে। চোখের পানি না থাকলে চোখে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। আর যদি রক্তে কোন প্রতিরোধী কণিকা বা রস না থাকে, সেটিও খুব বড় একটি সমস্যা।
জন্মগতভাবে রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থার কোন এক বা একাধিক অংশ অনুপস্থিত থাকতে পারে। এই সমস্যাটিকে আমরা বলি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা’র ঘাটতি। রোগ নির্ণয় ব্যাবস্থার প্রভূত উন্নতির ফলে আগে সনাক্ত করা যেত না এমন অনেক রোগ আজকাল নির্ণয় করা যাচ্ছে। অনেক রোগী পাওয়া যাচ্ছে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই জন্মগত কম। তবে দুইটি ভিন্নধর্মী ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। সব অসুখের সাথে এই সমস্যা মিশিয়ে ফেলা যাবে না এবং কখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমের সন্দেহ করতে হবে সেটা জানতে হবে। আমি দশটি লক্ষণের কথা বলছি যখন একজন চিকিৎসক সন্দেহ করবেন রোগীর জন্মগত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।
১। এক বছরের মধ্যে চার বা তারও বেশিবার নতুন করে কান পাকা। অর্থাৎ একবার ভালো হয়ে গেছে, আবার নতুন করে কান পাকছে।
২। শিশুর বারবার সাইনুসাইটিসের গুরুতর সমস্যা হচ্ছে। এক বছরে দুই বা ততোধিকবার তীব্র সাইনুসাইটিসের সমস্যা হলে সন্দেহ করতে হবে।
৩। বারবার সমস্যার জন্য শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হচ্ছে অথচ তেমন কোন ফল হচ্ছেনা। এরকম ভাবে দুই মাস পার হয়ে গেলে নতুন করে ভাবতে হবে। অবশ্য আদৌ অ্যান্টিবায়োটিক দরকার ছিল কিনা, অথবা অ্যান্টিবায়োটিক অতি ব্যবহার হচ্ছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।
৪। এক বছরে কমপক্ষে দুইবার নিউমোনিয়া আক্রান্ত হওয়া।
৫। জন্মের প্রথম বছরে ঠিকমত লম্বা বা ওজন বৃদ্ধি হচ্ছেনা। চিকিৎসক এক্ষেত্রে জন্মের ওজন এবং দৈর্ঘ্য, খাদ্যমান, মা-বাবার উচ্চতার বিষয়গুলোও মাথায় রাখবেন।
৬। কোন শিশুর বারবার চামড়ার ভিতরে বা ভিতরের কোন অঙ্গে ফোঁড়া হচ্ছে।
৭। জিহবা, তালুতে অনেকদিন ধরে সর পড়ে আছে। অথবা চামড়ায় ছত্রাকের সংক্রমণ ভালো হচ্ছে না।
৮। সংক্রমণজনিত অসুখ হলেই রক্তের শিরায় অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে আবার ৩ নং লক্ষণটি মাথায় রাখতে হবে।
৯। দুইবারের বেশি রক্তে সেপটিসেমিয়া বা শরীরের অভ্যন্তরে জীবাণু ছড়িয়ে পড়া।
১০। পরিবারে অন্যকারও জন্মগত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ইতিহাস থাকা।
এই প্রসঙ্গে আরেকটি কথা বলে রাখা উচিত, জন্মগতভাবে সুস্থ শিশুরও পরবর্তীতে সাময়িক বা স্থায়ী ভাবে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যেতে পারে। তবে জন্মগতভাবে এই সমস্যাটি এখন আর মোটেও দুর্লভ বলা যাবে না। চিকিৎসক এবং রোগী সবার এই ব্যাপারে আরও সচেতন হওয়া জরুরি।
ডাঃ আহাদ আদনান,
রেজিস্ট্রার, আইসিএমএইচ,
মাতুয়াইল, ঢাকা। ০১৯১২২৪২১৬৮।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।