পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অভিযোগের অন্ত নেই। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ধীরগতি এবং মোবাইলফোন ইন্টারনেট গ্রাহকদের অতি উচ্চমূল্যে নিম্নমানের সেবা ও নানাবিধ ভোগান্তির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পাশাপাশি দেশের সাবমেরিন কেবল গেটওয়েগুলো থেকে প্র্প্তা ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের অধিকাংশই অব্যবহৃত থাকায় এসব ব্যান্ডউইথ ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশে রফতানির সম্ভাবনার কথাও বলা হচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরে। একদিকে দেশে ইন্টারনেটের অতি ধীরগতি অন্যদিকে ব্যান্ডউইথের সিংহভাগ অব্যবহৃত থাকা এবং বিদেশে রফতানি করে দেয়ার প্রস্তাবে সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে এক প্রকার মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সরকার প্রায় ৭০০কোটি টাকা ব্যয়ে তৃতীয় সাবমেরিন কেবল স্টেশন স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশের ব্যান্ডউইথ সক্ষমতা ২০০জিবি পিএস-এর মাত্র ৩০জিবিপিএস ব্যবহৃত হচ্ছে বাকি ১৭০জিবিপিএস দিয়ে সারাদেশে ইন্টারনেটের ব্রডব্যান্ড সুবিধা পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করার বাইরেও প্রায় শত জিবি ব্যান্ডউইথ বিদেশে রফতানি করে কিছু বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদের সভা শেষে প্রকাশিত বিবৃতিতে বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ কিনতে ভারত, সউদি আরব, নেপাল ও ভুটানের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাওয়া গেছে বলে জানা যায়।
উত্থাপিত তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডইউথেরে কোনো সংকট নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্ক স্টেশন নির্মান, আভ্যন্তরীণ ফাইবার অপটিক্যাল কেবল নেটওয়ার্কের অবকাঠামো ও সংযোগ বিস্তৃত করার পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় সাধারণ মানুষের কাছে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা সহজলভ্য হওয়াই ছিল প্রত্যাশিত। আদতে তা হয়নি। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশে একের পর এক থ্রিজি-ফোরজি সেবা চালুর কথা বলা হলেও বাস্তবে তার কোনো প্রমাণ দেখা যাচ্ছে না। ছোটখাট ফাইল ডাউনলোড করতেও সাধারণ গ্রাহকদের ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। থ্রিজি-ফোরজি সেবার কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হলেও প্রকৃতপক্ষে টুজি মানের সেবার মধ্যেই আটকে আছে আমাদের মোবাইলফোন ইন্টারনেট গ্রাহকরা। এই মুহূর্তে ভারতে ১০জিবি ব্যান্ডউইথ রফতানির প্রস্তাবের প্রতি সংশ্লিষ্টদের আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে। এ থেকে প্রাপ্ত অর্থের এক-চতুর্থাংশ দিয়ে বিএসসিসিএলের কর্মকর্তা কর্মচারিদের বেতনভাতা পরিশোধ করা যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন।
অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ কাজে লাগানোর প্রস্তাব ইতিবাচক। তবে কেন ব্যান্ডউইথ অব্যবহৃত থাকছে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। বিটিআরসি তার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে লাগাতার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। এখন ব্যান্ডউইথ রফতানির মূলো ঝুলিয়ে সরকার ও দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, দেশের প্রায় শত মিলিয়ন মোবাইলফোন ইন্টারনেট গ্রাহকের বাড়তি খরচ ও ভোগান্তি লাঘবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। মোবাইলফোন অপারেটর কোম্পানি ও আইএসপিদের সেবার মান মূল্য নিয়ন্ত্রণে বিটিআরসিকে আরো কার্যকর ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। সেই সাথে ইন্টারনেট পরিষেবা মানের দিক থেকে আন্তজার্তিক ও আঞ্চলিক মানদন্ডে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার চিত্রও পাওয়া যাচ্ছে। আমরা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সাবমেরিণ কেবল স্টেশনসহ ইন্টারনেট অবকাঠামো গড়ে তুলছি, দেশের কোটি কোটি গ্রাহকের সুবিধার জন্য। বিশেষত স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা ও আউটসোর্সিংয়ের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে সুলভে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এরপর যদি ব্যান্ডউইথ রফতানির সুযোগ থাকে তা করা যেতেই পারে। নিজেদের সমস্যাগুলো দূর না করে অন্যদেশে ব্যান্ডউইথ রফতানির উদ্যোগে বেশি গুরুত্ব আরোপ করা সমীচীন হবে কিনা তা ভেবে দেখতে হবে। থ্রিজি-ফোরজি পরিষেবার নামে অতিরিক্ত মূল্য আদায় এবং কচ্ছপগতির ইন্টারনেট ভোগান্তি লাঘবে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।