নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
প্রায় ১৪ বছর ধরে এখানে তার নিয়মিত বিচরণ। হেসেছেন, কেঁদেছেন, নিজের পার্ফরম্যান্সে গোটা দেশকে ভাসিয়েছেন আনন্দের জোয়ারে। সেই প্রিয় আঙিনায় কত দিন পর! গত মার্চে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শুরুর আগে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে এসেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর অবশেষে গতকাল ফের পা রাখলেন হোম অব ক্রিকেটে। বেলা ১২টার দিকে চেনা আঙিনায় আসেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। সাড়ে ৮ মাসের বিরতির পর চেনা সেই প্রান্তরে এসে বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক হাসতে হাসতে বললেন, ‘সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমিও দেখছি... সব কেমন যেন নতুন নতুন লাগছে।’
মার্চে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ বন্ধ হলে মাঠ ছেড়েছিলেন। এরপর করোনাভাইরাসের থাবায় কেটে গেছে দীর্ঘ সময়। মাশরাফি নিজেও আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনায়। পরিবারের সদস্যরাও ভুগেছেন এই মহামারিতে। এরপর হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট, সব মিলিয়ে হোম অব ক্রিকেটের সঙ্গে মাশরাফির এই দ‚রত্ব। চলতি বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের প্লেয়ার্স ড্রাফটে ছিলেন না চোটের কারণেই। ফেরার লড়াইয়ে বড় এক ধাপ এগোলেন গতকাল।
গত কিছুদিন ধরে রানিং ও জিম সেশন চালিয়ে যাচ্ছিলেন নিজের মতো করে। চোটের পর বোলিং করলেন এদিনই প্রথম। বোলিং করলেন মিরপুর একাডেমি মাঠের সেন্টার উইকেটে। শুরুতে দুই-তিন পদক্ষেপে কিছু ডেলিভারি করলেন, পরে মাঝারি রান আপে কয়েকটি। এরপর পুরো রান আপে বোলিং করলেন চার ওভার। লম্বা বিরতির পরও তার লাইন-লেংথ ছিল দারুণ। শতভাগ দিয়ে বোলিং অবশ্য করতে দেখা যায়নি। মূলত স্পট বোলিং করেছেন। বোলিংয়ের আগে ও পরে রানিং সেশন করেছেন বিসিবির ট্রেনার তুষার কান্তি হাওলাদারের তত্ত¡াবধানে। তাকে নিয়ে সোজা চলে যান একাডেমি মাঠে। সেখানে ৪ ওভার বল করেছেন তিনি। বাইরে থেকে দেখে মনে হয়নি, বোলিংয়ের সময় তিনি খুব একটা অস্বস্তিতে ভুগছেন। পরে সেটি নিশ্চিতও করলেন মাশরাফি, ‘জিম আর রানিংয়ে কোনো ব্যথা ছিল না। দেখতে চেয়েছিলাম, বোলিং করলে কেমন লাগে। আজকে বোলিং করে ব্যথা অনুভব করিনি। ভালোই ছিল সবকিছু।’
মিরপুরে জৈব সুরক্ষিত বলয় থাকায় অনুশীলনের জন্য নেন আলাদা অনুমতি। করোনামুক্ত হয়েছেন আগেই। তবু সেখানে ওই সময় অনুশীলন করতে থাকা গাজী গ্রæপ চট্টগ্রামের খেলোয়াড়দের নিজে থেকেই কাছে আসতে বারণ করেন। বলয়ের বাইরে থাকা ট্রেনার তুষার কান্তি ছাড়া তার ১০ ফুটের মধ্যে আশেপাশে ঘেঁষতে দেননি কাউকে। ঘণ্টা খানেকের উপস্থিতিতে রানিং করে মাঝের উইকেটে বল করতে দেখা যায় মাশরাফিকে। মাশরাফির অনুশীলন সেশন দেখভাল করা ট্রেনার তুষার গণমাধ্যমকে বলেন, মূলত ম্যাচ ফিটনেস ফেরানো নিয়েই কাজ করেছেন তারা, ‘আসলে ও ওর মত করে অনুশীলন করেছে করোনা পরবর্তী। এখন ও ওজন কমিয়ে একটা অবস্থায় আসতে চায়। এ ব্যাপারে আমি সাহায্য করছি। ম্যাচ ফিটনেসের ব্যাপারে বলার মত সময় আসেনি। ও এমনিতে বল করেছে। যেভাবে অনুশীলন করছে এভাবে অবশ্যই সে ফিট হয়ে ফিরতে পারবে। টেকনিক নিয়েতো তার তেমন কোন সমস্যা নাই, সমস্যাটা ফিটনেসে। ফিটনেসের ব্যাপারে কাজ করলে সে ফিট হয়ে উঠবে।’ করোনায় গৃহবন্দি অবস্থায় ওজন প্রায় একশো কেজির কাছাকাছি চলে গিয়েছিল মাশরাফির। লকডাউনের শুরুর দিকে ফিটনেস নিয়ে ঘাম ঝরিয়ে ওজন ৭৯ কেজিতে নামিয়ে এনেছিলেন তিনি। নিজে আক্রান্ত হওয়ার পর বন্ধ হয় ফিটনেস ট্রেনিং। ওজন বাড়তে তাকে আবার। এক পর্যায়ে তা ৯৪ কেজিতে পৌঁছে গিয়েছিল। গত কিছুদিনে আবার ট্রেনিং করে ওজন নামিয়ে এনেছেন ৮৪ কেজিতে। তার আশা, বোলিং শুরুর পর আগামী কয়েকদিনে ওজন কমবে আরও কিছুটা। তুষার জানান অনেকটা ঝরঝরে অবস্থায় বল করেছেন পুরো রানআপে, ‘৪ ওভার বল করেছে ফুল রানআপে। ওর ইচ্ছের উপরই। ও চেয়েছে তাই আমরা সাহায্য করছি।’
করোনা স্থবিরতার পর সব ক্রিকেটার খেলায় ফিরলেও মাংশপেশির চোটে পড়ায় চলতি বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ড্রাফটের বাইরে উন্মুক্ত থাকায় খেলার সুযোগ এখনো আছে তার। কোন দল চোটে পড়া খেলোয়াড়ের বদলি হিসেবে চাইলে তাকে নিতে পারে। গাজী গ্রæপ চট্টগ্রামের মুমিনুল হক চোটে পড়ে ছিটকে গেছেন। তবে দলটির পেসাররা বেশ ভালো করায় একজন ব্যাটসম্যানের বদলে মাশরাফিকে নেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তুষার জানান, ম্যাচ খেলার মতো অবস্থা তৈরি করা মাশরাফির নিজের উপর, ‘ও অন্যরকম, ও মাশরাফি, অনেক কিছুই করতে পারে। এখন ওর সিদ্ধান্ত, ও খেলতে চাইলে খেলবে। ৪ ওভার বোলিংয়ের একটা ব্যাপার। এই কম ওভার যদি ও ম্যানেজ করতে পারে ম্যাচ ফিটনেস, এটা ওর ব্যাপার।’
বোলিংয়ে ফেরায় বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে মাশরাফিকে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে যথেষ্টই। দু-একটি দল তাকে পেতে আগ্রহী বলেও জানা গেছে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বিসিবি থেকে জানানো হয়েছিল, মাশরাফি ফিট হওয়ার পর কোনো দল চাইলে তাকে নিতে পারবে। একাধিক দল আগ্রহী হলে তাদের মধ্যে লটারি হবে। ম্যাচে বোলিং করার অবস্থায় যেতে অবশ্য আরও কয়েক দিন সময় লাগবে তার।
গত মার্চে জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে জাতীয় দলের নেতৃত্বকে বিদায় জানান মাশরাফি। তিনি নেতৃত্ব ছাড়ার পর আর ওয়ানডে খেলেনি বাংলাদেশ। দলে তার সুযোগ হয় কিনা, সেটিও তাই দেখা হয়ে ওঠেনি। মাশরাফির সামনে অবশ্য খেলার নিশ্চিত কোন স‚চি নেই। জানুয়ারিতে বাংলাদেশে সফর করার কথা ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তবে দলটির বিপক্ষে ওয়ানডে থাকছে কিনা তা এখনো চ‚ড়ান্ত নয়। ওয়ানডের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া মাশরাফি খেলোয়াড় হিসেবে জায়গা পেতেও লড়তে হবে। মাশরাফি অবশ্য এই সময়টায় অনেকবারই বলেছেন, জাতীয় দলে সুযোগ না হলেও মনের খোরাক জোগাতে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে যাবেন তিনি। তবে করোনার কারণে অসমাপ্ত থাকা ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ আবার চালু হবে কিনা তা নিয়েও পরিষ্কার ধারণা নেই বিসিবির।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।