Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফল উৎপাদনের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশে চাহিদা অনুপাতে ফলের উৎপাদন আশাব্যঞ্জক নয়। মোট চাহিদার মাত্র ৩০ শতাংশ ফল দেশে উৎপাদিত হয়। বাকি চাহিদা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হয়। এটাও চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি ফলের চাহিদাও বেড়েছে। করোনা সংক্রমণের কারণে এ চাহিদা এখন প্রায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মানুষ এখন বিভিন্ন ধরনের ফলের দিকে ঝুঁকেছে। এতে আমদানির হারও বাড়ছে। আগের তুলনায় বৃদ্ধির হার প্রায় ৮৬ শতাংশ। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে আপেল, কমলা, মাল্টা ও আঙ্গুর-এই চার ফলের আমদানি বেড়েছে দ্বিগুণ। গত অর্থবছরে ফল আমদানিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের এই সময়ে আমদানি বেড়েছে ১৮ শতাংশ। ফলের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে যেসব ফল আমদানি করা হয় এবং দেশে উৎপাদিত হয় না, সেসব ফল উৎপাদনে কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকদের উৎসাহী করে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী বিদেশি ফল চাষ শুরু হয়েছে। অনেক কৃষক এতে যেমন সফল হচ্ছেন, তেমনি উপকৃতও হচ্ছেন। ফলের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও অবদান রাখছেন। বিদেশ থেকে আমদানি করা আপেল, আঙ্গুর, মাল্টা, কমলা চাষে কৃষকরা সাফল্য লাভ করছেন। দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত পাঁচ বছর ধরে বান্দরবানের পাহাড়ে মিশ্র ফল বাগানে উন্নত জাতের বারি মাল্টা-১ চাষ শুরু হয়েছে। স্বল্প খরচে লাভজনক হওয়ায় দুই বছরের মধ্যে এ ফল উৎপাদনে সাফল্য দেখা দিয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট, দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এসব ফলের চাষাবাদ শুরু হয়েছে।

পুষ্টিবিদদের মতে, সুস্বাস্থ্যের জন্য একজন মানুষের প্রতিদিন গড়ে ১১৫ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন হলেও গড়ে ফল খাওয়ার হার ৭৬ গ্রাম। খাদ্যে ফল রাখার পরামর্শ দিলেও সাধারণ মানুষের পক্ষে তা সবসময় রাখা সম্ভব হয় না। এর অন্যতম কারণ, দেশি-বিদেশি ফলের অপ্রতুলতা এবং ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকা। তবে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন ফলের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আমদানিকারকদের আমদানিও বেড়ে গেছে। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে চলে যাচ্ছে। আমাদের দেশে দেশীয় মৌসুমী ফল ব্যাপক হারে উৎপাদিত হলেও তার সংরক্ষণ এবং বাজারজাতকরণ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে সকলের কাছে পৌঁছায় না। কোনো অঞ্চলে উৎপাদিত ফল পচে নষ্ট হয়, কোনো অঞ্চলে তার স্বল্পতা তীব্র আকার ধারণ করে। সাধারণত আমাদের দেশের মানুষের কাছে বিদেশী ফলের আলাদা কদর রয়েছে। কারো অসুখ-বিসুখ হলে বিদেশী ফল কিনে তাকে দেখতে যাওয়ার এক ধরনের সংস্কৃতি রয়েছে। এসব ফলের মধ্যে আপেল, আঙ্গুর, কমলা, নাশপাতি, বেদানা, মাল্টা, হালের ড্রাগন ফল, স্ট্রবেরি ইত্যাদি থাকে। এসব ফল আমদানি করা। আশার বিষয় হচ্ছে, অঞ্চল ও উপযোগী আবহাওয়া ভেদে অনেক চাষীই এসব ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। সিলেটে কমলা, বান্দরবানে মাল্টা, টাঙ্গাইলে মরুতে চাষ করা খেজুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্ট্রবেরি, আপেল, আঙ্গুর ইত্যাদি বিদেশী ফলের আবাদ হচ্ছে। শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষাবাদ হলেও এখন ধীরে ধীরে তার পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিক ভিত্তি পাচ্ছে। স্বাদে-গন্ধেও আমদানিকৃত ফলের তুলনায় কোনো অংশে কম নয়। আমরা দেখেছি, ইতোমধ্যে থাইল্যান্ডের পেয়ারা ও বরই দেশে উৎপাদন করে কৃষকরা ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছে।

আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতের সুস্বাদু আম উৎপাদন করে কৃষকরা ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছে। চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। এসব আম বিদেশের বাজারেও চাহিদা রয়েছে। ভারত ও পাকিস্তান আম রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। সঠিক নীতিমালার মাধ্যমে আমরাও বিদেশে আম রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। কাঁঠালের কথাই যদি ধরা হয় তবে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এ ফল আমাদের দেশের বাড়ির আঙ্গিনা থেকে শুরু করে যেখানে সেখানে চাষ করা যায়। উৎপাদনও চাহিদাকে ছাড়িয়ে যায়। এ ফলটি রফতানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বান্দরবানে উন্নত জাতের বারি মাল্টা-১ চাষে যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে, তা ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে বিদেশী ফলের চাষাবাদের নতুন এক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এবং কৃষকদের উৎসাহী করে তুলতে কৃষি মন্ত্রণালয়কে আরো মনোযোগ দিতে হবে। যে অঞ্চলে বিদেশি যে ফলের উৎপাদন এবং বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে তা উৎপাদনে কৃষকদের সহায়তা এবং পরামর্শ দিয়ে উৎসাহী করে তুলতে মন্ত্রণালয়ের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশী-বিদেশী ফল চাষের যে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে তা কার্যকর করতে পারলে দেশে ফল আমদানি করা নয়, অচিরেই ফল রফতানিকার দেশে পরিণত হতে পারবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফল-উৎপাদন
আরও পড়ুন