পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশকে যতভাবে ছোট করে দেখা যায়, ততভাবে দেখার ত্রুটি করে না ভারত। মুখে মুখে বন্ধুত্বের সোনালী অধ্যায়ের কথা বললেও এ কথা বলতে ছাড়ে না বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে তার জন্য। সে নাকি বাংলাদেশকে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে দেশটির রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে অত্যন্ত আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। কেউ বলেছেন, একাত্তর সালেই বাংলাদেশ দখল করে নিতে হবে। কেউ বলেছেন, বাংলাদেশের একাংশ দখল করে নেয়ার কথা। গত সপ্তাহে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের বিজেপি নেতা ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, বিহারে তার দল ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারিদের ভারত থেকে ছুঁড়ে ফেলা হবে। তার আগে দলটির এমপি সুব্রামনিয়াম স্বামী বাংলাদেশে সৈন্য পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন। ভারতের নেতাদের এসব বক্তব্যে দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ হলেও সরকার এবং বিরোধী দলের পক্ষ থেকে তাদের এসব ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথার জবাব দেয়া হয়নি। বরং উল্টো বিনয় এবং কৃতজ্ঞতার সাথে একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতের সহযোগিতার কথা করা হয়েছে। সরকারের মন্ত্রীরা এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বক্তব্য দিয়েছেন। কেউ বলেছেন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, কেউ বলেছেন, রক্তের রাখীবন্ধনে আবদ্ধ। এসব কথা বলে ভারতের প্রতি চিরকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হলেও ভারতকে কখনো এসব কথার মূল্য দিতে দেখা যায় না। বরং একের পর এক বাংলাদেশকে হেয় প্রতিপন্ন করে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, একাত্তুরে সহযোগিতা এবং উপকারের ষোল আনা উসুল করার নীতিতে অবলম্বন করে চলেছে। তার যখন যা প্রয়োজন পড়েছে এবং পড়ছে, তার সবকিছুই আদায় করে নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে একচুলও ছাড় দিচ্ছেন না। মুখে মুখে বন্ধুত্বের কথা বললেও তার আচরণে ‘বড় দাদা’ সুলভ প্রকাশ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করছেন না। তাদের আচরণ এমন যে, দাদার কথা মানতে হবে, শুনতে হবে। অন্যায় ও অন্যায্য আচরণের মধ্যেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সূচক থেকে শুরু করে সব ধরনের সূচকে এগিয়ে যাওয়া তাদের যেন সহ্য হচ্ছে না। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতিতে তার চোখ টাটাচ্ছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের ‘গাত্রদাহ’ ও ‘জ্বালা’ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
দুই.
বাংলাদেশের উন্নতি নিয়ে ভারতের ঈর্ষাকাতরতা বাড়িয়ে দিয়েছে সম্প্রতি আইএমএফ-এর এক প্রতিবেদন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে জিডিপিতে ভারতকে ছাপিয়ে যাবে বাংলাদেশ। এটাই ভারতের অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে পত্র-পত্রিকার শরীরে জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছে। প্রতিবেদনের রেশ ধরে বাংলাদেশকে কীভাবে হেয় ও ছোট করা যায় এ নিয়ে তারা ‘অশোভন’ ভাষায় বিশ্লেষণ করা শুরু করেছে। গত ৩ নভেম্বর কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় সমর বিশ্বাস এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশকে ‘উইপোকা’র সাথে তুলনা করেছেন। প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে, ‘১৯৮৩ এবং ১৯৯৬ ক্রিকেট বিশ্বকাপের মধ্যে এক অদ্ভুত মিল। এমন দুটি দেশ (ভারত আর শ্রীলঙ্কা) ওই দুবছরে বিশ্বকাপ জিতেছিল, যারা বিশ্বকাপ জিতবে বলে অতি কল্পনাপ্রবণ ক্রিকেটভক্ত বা ক্রিকেট বিশারদরাও ভাবেননি। কপিলদেব, অর্জুন রণতুঙ্গা বা তাঁদের সতীর্থরাও কি ভেবেছিলেন? নাহ। স¤প্রতি প্রায় তেমনই ঘটনা ঘটেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডারের ভবিষ্যদ্বাণী, চলতি আর্থিক বছরে পার ক্যাপিটা জিডিপি বা মাথাপিছু উৎপাদনে ভারতকে ছাপিয়ে যাবে বাংলাদেশ! সেই বাংলাদেশ, যাকে ১৯৭১ সালে পাক-শাসনমুক্ত করে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছিল ভারত। সেই বাংলাদেশ, যার আয়তন পশ্চিমবঙ্গের দেড়গুণের মতো, রাজস্থানের অর্ধেকেরও কম। যে দেশে শিল্প বলতে পোশাক, পুঁজি বলতে কমদামী শ্রমিক। এমন উইপোকাই কি না টপকে যাবে ভারত নামক হস্তিকে? ৫৬ ইঞ্চির ছাতিকে হারিয়ে দিতে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা? চাণক্যের পরাজয় হতে চলেছে ‘লেডি অব ঢাকা’র কাছে?’ পাঠক লক্ষ্য করুন, প্রতিবেদনের শুরুটা কতটা হেয় করে শুরু করা হয়েছে। বাংলাদেশকে তারা কতটা নীচু চোখে দেখা হয়েছে! স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে কীভাবে খাটো করা হয়েছে! বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, প্রতিবেদনের রচয়িতা এতটাই ঈর্ষান্বিত, যে ভারতের দয়া-দাক্ষিণ্যে যে দেশ স্বাধীন হয়েছে, তার এমন উন্নতি হবে কেন? যদিও তিনি এই উইপোকার বিষয়টি নিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র উদ্ধৃতি থেকে। গত বছর আসামে এনআরসি প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশিদের উইপোকার সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলেন, উইপোকার মতো বাংলাদেশিরা ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে এবং দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করেছে। তার সেই কথার পুনরাবৃত্তি করেই প্রতিবেদক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে হেয় করার জন্য ‘উইপোকা’ জুড়ে দিয়েছেন। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের উন্নতি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তাদের অর্থনীতিবিদদের মন্তব্যেও ঈর্ষাকাতরতা প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের অর্থনীতিবিদ দীপঙ্কর দাশগুপ্ত বলেছেন, দুদেশের মধ্যে কোনও তুলনাই হয় না। দ্রব্যমূল্যের মান, মূল্যসূচক, অর্থনীতির আয়তন, এসব অনেক ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে পার ক্যাপিটা জিডিপি। মাথাপিছু উৎপাদন বেশি হলেও জীবনধারণের সামগ্রিক ব্যয়, ডলারের সাপেক্ষে মুদ্রার দাম ইত্যাদির সঙ্গে তুলনা করে তবেই প্রকৃত উন্নয়নের বিষয়ে বলা যায়। আবার পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি বা ক্রয়ক্ষমতা, সঞ্চয়ের হার এসব মাপকাঠিও আর্থিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিচার্য। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ১০০ টাকায় ৪০ টাকা বৃদ্ধি আর ১০০০ টাকায় ৪০০ টাকা বৃদ্ধি শতকরা হিসেবে এক হলেও মোট বৃদ্ধির ফারাকটা কিন্তু ৪০ টাকা আর ৪০০ টাকা। সেটা মাথায় রাখতে হবে। তবে তিনি ৪০ টাকা ও ৪০০ টাকার ফারাকের যে হিসাব দেখিয়েছেন, এটা হাইপোথেটিক্যাল। কারণ, এ ফারাক নির্ভর করে আনুপাতিক হার, টাকার মান ও সময়ের ওপর। টাকার মান সবসময় এক থাকে না, উঠানামা করে। এ হিসাব যে সবসময়ের জন্য প্রযোজ্য তা সঠিক নয়। তার এ হিসাব করা থেকে বোঝা যায়, তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে হতাশ হয়ে এ মন্তব্য করেছেন। তার কথার জবাবে বলা যায়, বাংলাদেশের আজকের উন্নতি ও অগ্রগতি হুট করে হয়নি। এর ভিত্তিমূল স্বাধীনতার পর থেকেই একটু একটু করে গড়ে উঠেছে। এখন তা গতি লাভ করেছে। জিডিপি বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি সেই ভিত্তিকে দৃঢ় করছে। আইএমএফের পূর্বাভাসও বলছে, চলতি অর্থবছরে ভারতের মাথাপিছু জিডিপির ঋণাত্মক বৃদ্ধি হবে বা সঙ্কোচন হবে প্রায় ১০ শতাংশ। মাথাপিছু উৎপাদন কমে দাঁড়াবে ১ হাজার ৮৭৭ মার্কিন ডলার। অন্যদিকে করোনা সংক্রমণের মধ্যেও বাংলাদেশের পার ক্যাপিটা জিডিপি ৪ শতাংশ বাড়বে। বাংলাদেশ পৌঁছে যাবে ১ হাজার ৮৮৮ ডলারে, যা ভারতের চেয়ে ১১ ডলার বেশি। অথচ পাঁচ বছর আগেও ভারতীয়দের মাথাপিছু আয় ছিল বাংলাদেশিদের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। এখন ভারতের রুপি ও বাংলাদেশের টাকার মান প্রায় সমান সমান এবং অচিরেই তা রুপিকে ছাড়িয়ে যাবে। এসব অর্থনৈতিক সূচকই ভারতের অর্থনীতিবিদদের ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠেছে। তারা মানতে পারছে না, বাংলাদেশ এত দ্রুত সময়ে কি করে উন্নতি করছে! তারা মনে করেন, বাংলাদেশ সবসময় সবদিক থেকে ভারতের নিচে থাকবে এবং তাতে তারা খুশি। বাংলাদেশ তাদের ছাপিয়ে অর্থনৈতিক শক্তি পরিণত হবে আর উপমহাদেশে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, তা তারা মানতে পারছেন না। অর্থাৎ একশ্রেণীর মানুষের মতো অন্যের উন্নতিতে হিংসায় জ্বলেপুড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। তা নাহলে বাংলাদেশের উন্নতি নিয়ে তাদের শ্লেষাত্মক বিশ্লেষণ করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। বরং তাদের উচিৎ তাদের অর্থনীতিকে কীভাবে তলানী থেকে টেনে তোলা যায়, তা নিয়ে তাদের সরকারকে পরামর্শ দেয়া, নিজেদের চরকায় তেল দেয়া।
তিন.
বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতি যে ভারতের মনোবেদনা সৃষ্টি করে চলেছে তা তাদের বিরূপ মনোভাব থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না। দেশটি নিজের উন্নয়ন করতে না পারার জ্বালা প্রতিবেশীকে অশোভন ভাষায় মন্তব্য করার মধ্য দিয়েই যেন জুড়াতে চাচ্ছে। অথচ এটি যে ক্ষমতাসীন সরকারের ব্যর্থতা, দেশটির অর্থনীতিবিদরা তার সমালোচনা খুব কমই করছেন। যদিও দেশটির বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী সমালোচনা করে বলেছেন, গত ৬ বছরে মোদী সরকারের থেকে এটাই বড় পাওনা যে, মাথাপিছু জিডিপিতে বাংলাদেশও ভারতকে ছাপিয়ে যাচ্ছে! তার এ কথায় ভারত সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশকেও অবজ্ঞা এবং হেয় করার ইঙ্গিত রয়েছে। এর অন্তর্নিহিত কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের মতো একটি ছোট্ট দেশের সাথেও হাতিসম ভারত কুলিয়ে উঠতে পারছে না কেন? বাস্তবতা হচ্ছে, কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতি সে দেশের বিশাল আয়তনের ওপর নির্ভর করে না। যদি তাই করতো তবে, ইউরোপের ছোট ছোট দেশগুলো বিশ্বের উন্নত দেশে পরিণত হতো না। আফ্রিকা মহাদেশের বিশাল আয়তনের দেশগুলো হতো সবচেয়ে উন্নত দেশ। উন্নত হতে হলে দেশের আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ সরকারের উন্নয়নমুখী সঠিক ও ব্যাপক পদক্ষেপ প্রয়োজন। বাংলাদেশে এ দুটো পরিবেশ রয়েছে বলেই উন্নতি ত্বরান্বিত ও গতি লাভ করেছে। ভারত তা করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে এবং পিছিয়ে যাচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বর্তমান বিজেপি সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের চেয়ে ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার দিকে বেশি মনোযোগী হওয়ায় দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় চলে গেছে। তার মনোযোগ মুসলমানদের কীভাবে নির্মূল কারা এবং বিতাড়ন করা যায় সেদিকে। তার নেতাদের কথাবার্তায় প্রতিনিয়ত এমন মনোভাব ফুটে উঠছে। করোনার আক্রমণ তাদের যেন আরো বেশি বেসামাল করে দিয়েছে। করোনা পূর্ববর্তী সময় থেকে চলে আসা দেশটির অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থাকে আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। এছাড়া প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ঘরে-বাইরে এক বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়ে দেশটি এখন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশগুলো মন্দাবস্থার মধ্যেও নিজেদের উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। তাদের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছে চীন। বাংলাদেশের পাশে চীন যেভাবে দাঁড়িয়েছে, তাতেও ভারতের অন্তর্জ¦ালা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে চীনের সহযোগিতা সাদরে গ্রহণ করে চলেছে। চীন এখন বাংলাদেশের অন্যত বৃহৎ উন্নয়ন অংশীদার। চীনের সাথে বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হওয়ায় ভারতের যেন তা সহ্য হচ্ছে না। কারণ হচ্ছে, সে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে অভ্যস্ত, দিয়ে নয়। বাংলাদেশ সরকার তা বুঝতে পেরে যে দেশ অর্থনৈতিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসছে, তাকে স্বাগত জানাচ্ছে। এই স্বাগত জানানোই ভারতের জন্য পীড়াদায়ক হয়ে পড়েছে। তার ভাবখানা এমন, বাংলাদেশ কেন অন্যের কাছ থেকে নেবে! ভারতের এমন মনোভাব বোকামি ছাড়া কিছু নয়। কারণ, সে বুঝতে পারছে না, করোনা পুরো পৃথিবীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট চেঞ্জ করে দিয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় যে দেশ উন্নয়নকামী দেশগুলোর অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে এগিয়ে আসবে বা যার কাছ থেক সুবিধা পাবে, তার কাছেই ছুটে যাবে। করোনার মধ্যেই চীন তার দারুণ প্রভাব ও প্রতিপত্তি নিয়ে হাজির হয়েছে। তার আচরণে উগ্রতা বা আগ্রাসী মনোভাব নেই। বরং রয়েছে বন্ধুত্বের হাতছানি। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও সেই হাতছানিতে সাড়া দিচ্ছে। এ কাজটি ভারত দূরে থাক, যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তিও করতে পারেনি। ফলে ভারতের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও চীন চক্ষুশূল হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক মন্দাবস্থার মধ্যেও উপমহাদেশে বাংলাদেশের অর্থনীতি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকায় তা ভারতের মনোবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে তার মিডিয়াগুলো বাংলাদেশকে যতভাবে পারা যায় হেয় করে প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে মনের জ্বালা জুড়াতে চাচ্ছে। আর সান্ত¦না পেতে চাচ্ছে এ মন্তব্য করে, বাংলাদেশের এ উন্নতি সাময়িক। যেন কিছুদিন গেলেই বাংলাদেশের অর্থনীতি হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়বে। একে ‘পাগলের সুখ মনে মনে’ বলা ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে!
চার.
ভারতের রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদরা বাংলাদেশকে যতই উইপোকা বলুক না কেন, এই উইপোকার অন্তর্নিহিত শক্তি যে কত বড় তা করোনাকালে অর্থনৈতিক সামর্থ্য দেখানোর মধ্য দিয়েই প্রমাণিত। হস্তিসম ভারত তো তার বিশাল দেহ নিয়ে নড়াচড়ই করতে পারছে না। শক্তি হারিয়ে দিন দিন স্থবির হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে তার সামনে দিয়েই উইপোকা হয়ে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক শক্তি আহরণের পথে থেকে উপমহাদেশে গুরুত্বপূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোও বাংলাদেশকে তাদের আধিপত্য বিস্তারের ‘কী পয়েন্ট’ হিসেবে বিবেচনা করছে। এতেই ভারতের মর্মপীড়া দেখা দিয়েছে। নিজে কিছু করতে না পেরে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বাঁকা চোখে দেখছে। উইপোকার সাথে তুলনা করাসহ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে উপহাস করছে। ভারতের মনে রাখা উচিৎ, বাংলাদেশ এখন আর আগের অবস্থায় নেই। সে সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরীতা নয়-এমন নীতি নিয়ে সবার সাথে পারস্পরিক স্বার্থে অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতির সম্পর্ক গড়ে তুলছে। ভারতের এ কথাও মনে রাখা উচিৎ, কেবল দেহ বড় হলেই হয় না, তা কার্যকর থাকতে হয়।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।