যেভাবে মাছ ভাজলে ভেঙে যাবে না
বাঙালির প্রতিদিনের খাবারে মাছ তো থাকেই। এটি সব খাবারের মধ্যে পুষ্টির অন্যতম উৎস। তাড়াহুড়ো করে
চায়ে আছে বেশ কিছু ভিটামিন। তিনটি জরুরি খনিজ পদার্থ। পনেরোটির মতো অ্যামাইনো অ্যাসিড। আর আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। চায়ে আছে ক্যারোটিন যা ভিটামিন এর পূর্বসূরি। আছে থায়ামিন আর রাইবোফ্ল্যাভিন যা থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন বি। আছে নাইকোটিনিক অ্যাসিড এবং প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড। পাওয়া যায় অ্যাসকরবিক অ্যাসিড যা কিনা ভিটামিন সি-এর এক রূপ। আর আছে ফোলিক অ্যাসিড। কোষপ্রাচীরের সুরক্ষার কাজে যার ভূমিকা অনন্য।
চায়ের মাধ্যমে তিনটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। যাদের কার্যকারিতার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা বাড়ে। শরীরের গঠনগত দিক থেকে খনিজ পদার্থগুলোর ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না। এরা হল ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম আর জিঙ্ক।
শরীরে দিন প্রতি ২ থেকে ৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ম্যাঙ্গানিজ সরবরাহ করা আবশ্যক। ৫ থেকে ৬ কাপ দুধ ছাড়া চা পান করলে প্রয়োজনের প্রায় পঁয়তাল্লিশ শতাংশের মত শরীর পেতে পারে। ম্যাঙ্গানিজ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে বলিষ্ঠ করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে সক্রিয়তা দেখা যায় রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে। এ ছাড়া মানব শরীরে হাড়ের প্রয়োজনানুপাতে বৃদ্ধি ঘটাতেও ম্যাঙ্গানিজ বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
চায়ে আছে পটাশিয়াম। আমাদের শরীরের হৃদযন্ত্রকে স্বাভাবিক রাখতে চায়ের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। শরীরের পেশিগুলো সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এই পটাশিয়ামের জন্যই। শরীরের ভিতরের তরল পদার্থের নিয়ন্ত্রকও হল পটাশিয়াম, এ ছাড়া ক্লান্তি, অবসাদ কাটাতেও এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। কোষ্ঠকাঠিন্য কাটানোর জন্যও শরীরের পটাশিয়ামের মাত্রা ঠিক থাকা প্রয়োজন।
যাঁরা খাওয়া দাওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের তোয়াক্কা করেন না তাদের শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন এইভাবে চলতে থাকলে অ্যানরেক্সিয়া এবং বুলিমিয়া দেখা দিতে পারে। ব্যায়ামবীদদের ক্ষেত্রেও পটাশিয়ামের অভাব দেয়া যায়। মহিলাদের ঋতুস্রাবের সময়ও পটাশিয়ামের ঘাটতি হয়। যাঁরা উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে আক্রান্ত তাঁদের কিছু ঔষধ গ্রহণের জন্য পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে।
শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতিকে সামাল দিতে দিনে ৪-৫ কাপ চা চলতে পারে। তাহলে অন্তত ওই ঘাটতির তিন-চতুর্থাংশ পূরণ হবে। তবে অবশ্যই দুধ ছাড়া চা পান করতে হবে। গ্রিন টি এক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে। আর এই পটাশিয়াম রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে যা কিনা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। গ্রিন-টির সঙ্গে কমলালেবুর রস মিশিয়ে খেলে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। হৃদযন্ত্র এবং রক্তসংবহন তন্ত্রের অসুখ এড়ানো অনেকটাই সম্ভব হয় শরীরে পটাশিয়ামের সরবরাহ ঠিক থাকলে।
চায়ে আছে জিঙ্ক জাতীয় খনিজ পদার্থ। ছোট থেকে শরীর ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে তার জন্য জিঙ্কের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না। চা পানের মাধ্যমে শরীরে জিঙ্কও সরবরাহ হয়।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস আছে চায়ের মধ্যে। ব্ল্যাক ও গ্রিন টি-তে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড আছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসের কাজ করে। কিন্তু এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসের কাজ কী? শরীরের মধ্যে অক্সিজেন অনুগুলো ফ্রি র্যাডিক্যাল রূপে বেরিয়ে এসে শরীরে অনেক বিড়ম্বনা সৃষ্টি করে। এদের সক্রিয়তার তারুণ্যের ছটফটানি যৌবনের উন্মাদনাম্লান হয়ে গিয়ে বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যায়। দেহের মধ্যে সঞ্চারিত রক্তবাহী নালিগুলো সরু করে দেয়। এর প্রভাবেই হৃদযন্ত্রে বড়সড় গোলাযোগ দেখা দিতে পারে। সোজা কথায় শরীরকে সুঠাম আর নানাবিধ রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক সময় আবার দেখা যায় ফ্রি র্যাডিক্যালের কার্যকারিতার গরল রক্ত কোষের ডিএনএ গুলো ভেঙে যাচ্ছে। আর এই ডি এন এ ভেঙে গেলে নির্দিষ্ট কোষ অনেক ক্ষেত্রেই আয়ত্তের মধ্যে থাকে না। যার ফলে হতে পারে টিউমার। ধীরে ধীরে তা ক্যান্সারেও রূপান্তরিত হতে পারে। দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি, অল্প বয়সেই অনেক সময় চোখে ছানি পড়তে পারে। ফ্রি র্যাডিক্যালগুলো বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে স্নায়ুতন্ত্রের উপর।
চায়ে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস বর্তমান তা নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই। এক কাপ চায়ে পাওয়া যায় ২০০ মিলিগ্রাম ফ্যাভোনয়েডস। দিনে অন্তত তিন কাপ চা খেলে সপ্তাহ দুই পর অন্তত শতকরা পচিঁশভাগ ফ্ল্যাভোনয়েডের পরিমাণ বেড়ে যায়। ট্যানিন নামে আরো একটি ফ্ল্যাভেনয়েডের উপস্থিতি চায়ে লক্ষ করা যায়। যার প্রভাবে ত্বক হয়ে উঠে উজ্জ্বল। আছে ক্যটেছিন নামক এক ধরনের যৌগ যা কিনা ভিটামিন সি-র চেয়ে বিশগুণ বেশি ক্ষমতাধারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস।
সাধারণত আমরা যে চা পান করে থাকি তা অর্থোডক্স বা সিটিসি। এছাড়া গ্রিন টি আর ব্ল্যাক টি আছে যা কিনা শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গ্রিন টি হৃদরোগের ক্ষেত্রে ঔষধের ন্যায় কাজ করে। কারণ গ্রিন টি পান করলে শরীরে রক্তপ্রবাহ ঠিক থাকে, নমনীয় থাকে ধমনি। আসলে এই ধরনের চায়ে অতি উচ্চমাত্রায় হৃদরোগ প্রতিরোধক জৈব রাসায়নিক ফ্ল্যাভোনয়েডস বর্তমান। কোনো সুস্থ মানুষ টানা তিন দিন যদি এই চা পান করেন তাহলে দেখা যাবে তাঁর রক্তের অক্সিজেন পরিবহনের ক্ষমতা বেড়ে গেছে। ধমনি নরম হয়ে থাকায় হৃদপিন্ডের রক্তপ্রবাহ থাকে স্বাভাবিক। বর্তমানে যে হারে হৃদরোগের প্রবণতা বাড়ছে গ্রিন টি-র প্রভাবে তা শতকরা অন্তত চল্লিশ ভাগ কমানো যেতে পারে।
গ্রিন টি পান করলে শরীরে তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। স¤প্রতি এক গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, টানা তিন মাস কেউ চা পান করলে অন্তত আড়াই কিলোগ্রাম পর্যন্ত ওজন কমাতে পারে। গ্রিন টি-তে আছে ক্যাসিন। এটি মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। ঠিক তেমনি দাঁতের সুরক্ষার ক্ষেত্রেও গ্রিন-টির ভূমিকাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। মুখের দুর্গন্ধ রোগে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। ওই ফ্ল্যাভোনয়েডই দাঁতের ক্ষয়কারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।
আর ব্ল্যাক টি বেশি কার্যকরী ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে। এই চায়ে থাকা জৈব রাসায়নিক দেহের ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ব্ল্যাক টি তে থাকা ফ্ল্যাভেনয়েড ইনসুলিনের পরিপাক ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। স্বাভাবিক উপায়েই অগ্ন্যাশয় থেকে গ্লুকোজকে এই হরমোনই পরিপাক করতে পারে। এই গ্লুকোজ পরিপাকের ফলে দেহে মিলে শক্তি। যারা ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন নিতে অভ্যস্ত এই চা পানের ফলে তাদের সে প্রয়োজন কমবে বলেই বিশেষজ্ঞদের মত।
ব্ল্যাক টি-তে যে ফ্ল্যাভোনয়েড আছে এদের সক্রিয়তাই ইনসুলিসের শক্তি বেড়ে যায়। আর এ জন্যই রক্তে মেশা গ্লুকোজ দ্রুত পরিপাক হতে পারে। ডায়াবেটিসের মতো সর্বগ্রাসী ব্যাধিকে এই চা পানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ ছাড়া দেহের ওজন কমানো এবং ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেও এই চায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
চা শুধুমাত্র উদ্দীপকই নয়। চা মানসিক দিক দিয়েও চাঙ্গা করে। ক্লান্তি, অবসাদ কাটাতে দুর্দান্ত কাজ করে। শরীর ও মন দুইই এর প্রভাবে তাজা এবং ঝরঝরে হয়ে উঠে। দিনের প্রথম কাজ চা পান করে শুরু করার মধ্যে কোনো অস্বাস্থ্যকর দিকও বিজ্ঞানীরা খুঁজে পাননি। তবে গবেষকরা জানতে পেরেছেন যে, অতি উচ্চ তাপ (৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি) পানীয় অন্ননালির ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই ঝুঁকি এড়ানোর জন্যই চা-কে একটু ঠান্ডা হওয়ার ফুরসত দেওয়া প্রয়োজন। আর চা খেলে ত্বকের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে এ ধারণা ঠিক নয়। পরিবর্তে চায়ে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড ত্বকচর্চায় অনেকটাই সহায়তা করে।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।