Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের ইন্তেকাল

প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও সম্পাদক পরিষদের শোক প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

প্রখাত সংবাদিক, কলামিষ্ট, দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান আর নেই। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। সাংবাদিক মুনীরুজ্জামানের মৃত্যুতে সাংবাদিক কমিউনিটিতে শোকের ছাড়ায় নেমে আসে।

মুনীরুজ্জামানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সম্পাদক পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক ও সামাজিক সংগঠন। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে নামাজে জানাজার পর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে সাংবাদিক মুনিরুজ্জামানের প্রতি ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

জাতীয় প্রেসক্লাবে নামাজে জানাজায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সিপিবি, বাসদ, জাসদ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পিআইবি, প্রেস কাউন্সিল, ভারতীয় হাই কমিশন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, সম্পাদক পরিষদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, সংবাদ পরিবার, উদীচী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও সিপিবির পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়া জানাজার আগে মুনীরুজ্জামানের বড় ভাইসহ সাংবাদিক নেতারা তাঁর সঙ্গে কাটানো বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিচারণ করেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, খন্দকার মুনীরুজ্জামান সম্প্রতি জ্বরে আক্রান্ত হন। এরপর তার করোনা পরীক্ষা করা হয়। টেস্টে পজিটিভ হওয়ার পর তিনি শান্তিনগরে নিজ বাসায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৩১ অক্টোবর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় পরীক্ষায় তার করোনা নেগেটিভ আসে। কিন্তু অন্যান্য শারীরিক জটিলতা ছিল।

খন্দকার মুনীরুজ্জামান ১৯৪৮ সালের ১২ মার্চ ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। একই সময়ে বাম ঘরানার রাজনীতিতেও যুক্ত ছিলেন। ১৯৭০ সালে সিপিবির মুখপত্র সাপ্তাহিক একতায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। এরপর পাঁচ দশকে তিনি একাধিক সংবাদমাধ্যমে কাজ করেন। ২০১৯ সালে তিনি প্রেস কাউন্সিলের সদস্য মনোনীত হন। এ ছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ নানা পেশাদার সংগঠনের সদস্য ছিলেন। তিনি গত প্রায় এক যুগ ধরে দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে দৈনিক সংবাদের সম্পাদকীয় বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি সাপ্তাহিক যায় যায় দিনে চাকরি করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবসহ নানা পেশাদার সংগঠনের সদস্য ছিলেন খন্দকার মুনীরুজ্জামান।

জাতীয় প্রেসক্লাবে খন্দকার মুনীরুজ্জামানের জানাজা নামাজের সময় হৃদয়বিদারণ দৃশ্যের অবতারণা হয়। সহকর্মীরা তার সঙ্গে বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিচারণ করেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, আমরা বেদনায় আপ্লুত। একের পর এক স্বজন হারাছি। মুনিরুজ্জামান এমন একজন মানুষ ছিলেন, যিনি সময়ের আগে চলতেন। সময়কে ধারণ করতেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, মুনিরুজ্জামান অত্যন্ত সহজ সরল মানুষ ছিলেন। সবসময় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন।

জানাজায় উপস্থিত ছিলেন ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের কোষাধক্ষ্য শ্যামল দত্ত, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপুসহ সিনিয়র সাংবাদিক ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিতি ছিলেন।

প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর শোক : খন্দকার মুনীরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোক বার্তায় প্রেসিডেন্ট বলেন, মুনীরুজ্জামান ছিলেন নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভীক সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। তার মৃত্যু গণমাধ্যমের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক বার্তায় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

সম্পদক পরিষদ : সম্পাদক পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য খন্দকার মুনীরুজ্জামানের অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে সম্পদক পরিষদ। সংগঠনের সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক নঈম নিজাম এক শোকবার্তায় বলেন, খন্দকার মুনীরুজ্জামান দীর্ঘ বছর ধরে সাংবাদিকতা করেন। তার অভিজ্ঞ নেতৃত্ব এবং জ্ঞানী পরামর্শ সংগঠনটিকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার ইস্যুতে দৃঢ় থাকতে সাহায্য করেছে। প্রগতিশীল আদর্শের সাথে তার আজীবন সম্পৃক্ততা ছিল। তিনি মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে সমর্থন করেন। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতি নিরলস প্রতিশ্রæতি তাকে পেশায় নৈতিক সাংবাদিকতার প্রচার ও সমাজে গণতান্ত্রিক ম‚ল্যবোধের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে গড়ে তুলেছে। তার মৃত্যুতে সাংবাদিকতা ভ্রাতৃত্বের অপ‚রণীয় ক্ষতি। তার অনুপস্থিতি তরুণ প্রজন্মকে এমন একজন সম্পাদকের সাথে কাজ করা থেকে বঞ্ছিত করবে। তিনি সাংবাদিকতার পেশায় অনেক কিছু দিয়েছেন এবং আরো অনেক কিছুই দেয়ার ছিল তার। বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, সদা হাস্যকর, সর্বদা উষ্ণ, নিরলসভাবে আশাবাদী মুনীরুজ্জামান সরলতা এবং নৈতিকতার জীবনযাপন করেছিলেন। তার সাথে কাজ করেছেন এমন সমস্ত ব্যক্তির দ্বারা তিনি প্রশংসিত ব্যতিক্রমী মানবিক গুণাবলীর একজন ব্যক্তি; যারা তাঁকে চেনেন তারা তাকে ভালবাসতেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইন্তেকাল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ