পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের সামগ্রিক সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা নানাবিধ অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম-দুর্নীতির ঘেরাটোপে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এর ফলে সড়ক-মহাসড়ক নানা সমস্যায় আবর্তিত হচ্ছে। সড়ক নির্মান থেকে শুরু করে গণপরিবহন ব্যবস্থা, টোল আদায় ট্রাফিক সিস্টেম পর্যন্ত সবর্ত্র অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় সরকারি বিআরটিসি’র ভূমিকা ও অংশীদারিত্ব খুব নগন্য হলেও এ খাতে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এই বিপুল ব্যয়ের কতটা জনগণের কল্যাণে কাজে লাগছে, কতটা দুর্নীতি-লুটপাটের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সিন্ডিকেটের পকেট ভারী হচ্ছে, তার সঠিক হিসাব খুঁেজ বের করা খুব কঠিন কাজ নয়। তবে সর্ষের ভেতরের ভুত তাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই বললে চলে। বিআরটিসি’র অনিয়ম-দুর্নীতি অপচয়ের অভিযোগ নতুন নয়। দশকের পর দশক ধরে চলছে এর ধারাবাহিকতা। তবে এখনকার পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্নতর। কোনো মান যাচাই না করে, প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডার ছাড়াই বিআরটিসির জন্য প্রতি বছর শত শত নিম্নমানের ভারতীয় বাস কেনা হচ্ছে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এসব বাসের উল্লেখযোগ্য অংশ বিকল হয়ে বিঅরটিসির বাস ডিপোগুলো ডাম্পিং স্টেশনে পরিনত হয়েছে। ভারত থেকে কেনা বাসের অধিকাংশ অচল হয়ে পড়ে থাকছে। শত শত কোটি টাকায় কেনা এসব বাস এখন বিআরটিসির গলা কাঁটা হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে বিআরটিসি’র বাসের সংখ্যা ২ হাজারের বেশি। গত ১০ বছরে দেড় হাজারের বেশি বাস কেনা হয়েছে, যার বেশিরভাগই ভারত থেকে কেনা। এসব বাসের মধ্যে ৫ শতাধিক বাস এখন বিআরটিসির বিভিন্ন বাস ডিপোতে অচল হয়ে পড়ে আছে বলে গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিদেন থেকে জানা যায়। দেশের সড়ক পরিবহন সেক্টরে হাজার হাজার বাস মিনিবাস চলাচল করছে। এর মধ্যে অনেক নামি-দামি ব্র্যান্ডের গাড়ীও আছে। বেশিরভাগই ১০-১৫ বছরের পুরনো হলেও বছরের পর বছর ধরে সড়ক-মহাসড়কে চলছে এবং বেসরকারি পরিবহন কোম্পানী বছরে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করছে। তবে জনগণের রাজস্ব থেকে বিআরটিসির জন্য বছরে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও বিআরটিসি সব সময়ই অলাভজনক ও লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। একইভাবে বাংলাদেশ রেলওয়েও ক্রমবর্ধমান লোকসান ও ভর্তুকির ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে। বিআরটিসিতে নিম্নমানের ভারতীয় গাড়ী কিনে দেশের শত শত কোটি টাকা লোপাট করার সাথে সাথে এখন রেলওয়ের জন্যও নিম্নমানের ভারতীয় রেল ইঞ্জিন কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একটি শ্রেণী। এতদিন ভারতীয় গাড়ী কেনার দিকে মানোযোগ নিবিষ্ট রেখে দেশের রেলওয়ের প্রতি অবহেলা ও অমনোযোগিতা দেখানো হয়েছে, এখন রেলওয়েতেও ভারত নির্ভরতা এবং অস্বাভাবিক ব্যয়বাহুল্যের চিত্র পাওয়া যাচ্ছে।
দেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা এবং পরিবহন আমদানির ক্ষেত্রে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দেখা যাচ্ছে, যা ভারতীয় রফতানিকারক ও দেশীয় স্বার্থান্বেষী মহলের পকেট ভারী করছে। এর ফলে দেশের পরিবহন সেক্টর ভারতীয় নিম্নমানের গাড়ীতে সয়লাব হয়ে পড়ছে এবং তা ডাম্পিং স্টেশনে অচল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এতে সরকারি গণপরিবহন খাত ক্রমান্বয়ে লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছে এবং অচল গাড়ী নিয়ে বিপাকে পড়ছে। অন্যদিকে নিম্নমানের গাড়ী যখন তখন বিকল হয়ে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা বাড়ানো থেকে শুরু করে পরিবেশ দূষণে বড় ভূমিকা পালন করছে। যেখানে অর্থাভাবে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থায়ন সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে উচ্চমূল্যে শত শত কোটি টাকা খরচ করে নিম্নমানের ভারতীয় বাস-ট্রাক কেনা হয় কার পরামর্শে ও কার স্বার্থে? দেশের বেসরকারি পরিবহন সেক্টর এবং প্রাইভেট কারের ব্যবসার বড় বড় অংশের চাহিদা দীর্ঘদিন ধরে রি-কন্ডিশন্ড গাড়ী আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, জনপ্রিয় জাপানী রি-কন্ডিশন্ড গাড়ী আমদানির ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক হারে ট্যাক্স ও ভ্যাট ধার্য করা হয়েছে। রিকন্ডিশন্ড গাড়ী আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডার পক্ষ থেকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ীর উপর অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক ট্যাক্স আরোপের পেছনে ভারতের নিম্নমানের গাড়ী আমদানির সুযোগ অবারিত করার দূরভিসন্ধি বলে অভিযোগ করা হয়েছে। স্বাধীনতার আগে এক সময় বিআরটিসির জন্য আন্তর্জাতিক মানের ব্রান্ডেড গাড়ী আমদানি করা হত। জাপানি মিতসুবিসি, ফিয়াট,ম্যাকে, বেডফোর্ডের মতো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বাস চলাচল করত। স্বাধীনতার পরও তা দেখা গেছে। এমনকি দেশীয় কারখানায় তৈরী প্রগতির গাড়ীর মানও যথেষ্ট উন্নত। এ অবস্থায় ভারতীয় নিম্নমানের বাস আমদানি করে বিআরটিসিকে একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হচ্ছে। এর পেছনে যে একটি চক্রের বড় অংকের কমিশন বাণিজ্য রয়েছে, তা বুঝতে বাকি থাকে না। এ প্রেক্ষিতে, বিআরটিসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে নিম্নমানের ভারতীয় গাড়ী আমদানি বন্ধ করতে হবে। বিআরটিসির মাধ্যমে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে গতিশীল করতে উন্নতমানের বাস আমদানি করতে হবে। বাস কেনা সংক্রান্ত বিষয়ে আগে থেকেই স্বচ্ছতা নিশ্চিত এবং তা তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। নিম্নমানের বাস আমদানি করে তা ডাম্পিং করে রাখা যাবে না। দেশের গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা,স্বচ্ছতা, পরিবেশ ও জনবান্ধব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।