Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বহিঃশক্তির অনুপ্রবেশ লোহিত সাগরের নিরন্তর সঙ্ঘাতেই

রেড সি ডায়নামিক্স ৬

দ্য আফ্রিকা রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

উপসাগরীয়দের সম্পদ এবং কর্তৃত্ব রয়েছে। হর্ন অফ আফ্রিকার ভ‚মি এবং লোকবল রয়েছে। লোহিত সাগরের দু’প্রান্তের এ অসামঞ্জস্যটি পরস্পরের জন্য পরিপূরক এবং এসব বৈশিষ্ট্য লোহিত সাগরের অঞ্চলে আফ্রিকান এবং উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলিকে নিরন্তর আধিপত্যের খেলায় আবদ্ধ রাখে। যতক্ষণ এ অঞ্চলে নিশ্চিতভাবে আর্থিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক ভারসাম্যহীনতা থাকবে, ততক্ষণ স্বল্পমেয়াদী লাভগুলি লোহিত সাগরের প্রতিরক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করবে।

সউদী আরবের জিডিপি মিসর, সুদান, ইরিত্রিয়া এবং সোমালিয়ার তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। এ বাস্তবতা লোহিত সাগরের দুই উপক‚লের মধ্যকার সম্পকের সুর নির্ধারণ করে। উপসাগরীয় দেশগুলির কাছে আফ্রিকান হর্ন মিত্রদের একটি গোষ্ঠী উপস্থাপন করে, যাদের তারা দ্বিপাক্ষিকভাবে বা একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুড়ে রাখে। এর ফলে তারা সমুদ্রের দু’দিকেই তাদের প্রভাব জোরদার করতে পারে। হর্নের কাছে, উপসাগরীয় দেশগুলি গভীর আর্থিক উৎস, যা তারা সরাসরি চুক্তির আকারে স্বল্প-মেয়াদী লাভ হিসেবে সর্বোচ্চভাবে ব্যবহার করে।

লোহিত সাগরের পশ্চিম উপক‚লের সমস্ত দেশ মানব উন্নয়ন সূচকের শেষ প্রান্তে বাস করে এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ইতিহাসের প্রতিনিধিত্ব করে। এটা মাথায় রেখেই উপসাগরীয় দেশগুলো সমুদ্রের ওপারে লক্ষ্যস্থির করেছে এবং বিশাল আর্থিক সঙ্কটে পতিত সীমিত আলোচনার ক্ষমতার নীতি নির্ধারকদের কৌশলগত অবস্থানগুলিতে মনোনিবেশ করেছে। তারা এসব প্রয়োজনকে মিসরের সামরিক ব্যয় মেটাতে, সুদানের অস্থিতিশীলতায় এবং সোমালিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবহার করে।

সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত হর্নের উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় এবং ইয়েমেনের যুদ্ধে তাদের জড়িত থাকার কারণে ইরিত্রিয়া, এডেন উপসাগর এবং ইয়েমেনীয় দ্বীপপুঞ্জে তাদের উপস্থিতি আরও শক্তিশালী হয়েছে। তারা একসাথে কাজ করা সত্তে¡ও তাদের মধ্যে কৌশলগত পার্থক্য রয়েছে। আমিরাতিদের লক্ষ্য তেল-উত্তর অর্থনীতিসহ বন্দর অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করা এবং সউদীরা অর্থনৈতিক বৈচিত্র এবং খাদ্য সুরক্ষার জন্য হর্নের সবুজ চারণভ‚মিতে লক্ষ্যস্থির করেছে।

উদাহরণস্বরূপ, আমিরাতিরা সুদান বন্দরে সক্রিয় রয়েছে এবং সোমালিয়ায় তাদের উপস্থিতি জোরদার করেছে। সউদীরা যুদ্ধবিমান থেকে কৃষিক্ষেত্র পর্যন্ত বিনিয়োগের মাধ্যমে মিশরকে আর্থিকভাবে সহায়তা করছে। ফলে, এই অনুসারী দেশগুলো সউদী ও ইউএইর কৌশলগত লক্ষ্য সত্তে¡ও, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আধ্যিপত্যের ক্ষেত্রে তাদেরকে প্রতিদ্ব›দ্বী ইরান, তুরস্ক এবং কাতার থেকে অনেকটা এগিয়ে রেখেছে।

এর অর্থ এই নয় যে, এখানে ক্ষমতার ভারসাম্য স্থির রয়েছে। তুরস্ক সোমালিয়ায় একটি উল্লেখযোগ্য সহায়তা প্রদানকারী। দেশটি সোমালিয়ার বন্দর এবং বিমানবন্দরের মূল অবকাঠামো পরিচালনা এবং সামরিক বাহিনীকে সমর্থন যুগিয়ে একটি শক্তিশালী অবস্থান অর্জন করেছে। সোমালিয়া স¤প্রতি তুরস্ককে তার উপক‚লে তেল অনুসন্ধান করার আমন্ত্রণ জানিয়েছে, যা তুরস্ক ইতিমধ্যে লিবিয়াতে শুরু করেছে।

উপসাগরীয়রা হর্নে যে কর্তৃত্ব অর্জন করেছে, তা কেবল তাদের অর্থনৈতিক শক্তির কারণে নয়। হর্নের দেশগুলির পারস্পরিক বিরোধ এবং দেশগুলিতে চলমান অভ্যন্তরীণ সঙ্কটকে দীর্ঘায়িত করার মাধ্যমে এটি সম্ভব হয়েছে। যেমন, বর্তমানে সুদান, মিশর এবং ইথিওপিয়া গ্র্যান্ড ইথিওপীয় রেনেসাঁ বাঁধ পরিচালনার বিষয়ে একটি বিরোধে জড়িয়ে রয়েছে।

জিবুতি বহু বিদেশী পরাশক্তিকে সামরিক ঘাঁটি করার অনুমতি দিয়ে তার প্রতিবেশীদের সতর্ক করে রেখেছে। উপক‚লরেখার অভাব সত্তে¡ও ইথিওপিয়া নৌবাহিনী স্থাপনে আগ্রহী। এরই মধ্যে, কিছু প্রতিবেশি রাজ্য ইথিওপিয়াকে নতুন বহুপাক্ষিক সংস্থা কাউন্সিল অফ আরব ও আফ্রিকান লিটোরাল স্টেটস অফ দ্য রেড সি এবং গাল্ফ অফ আডেনে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দিতে অস্বীকার করেছে। এই পদক্ষেপটি ক্ষমতা ভাগ হয়ে যাওয়ার ভয়কে তুলে ধরেছে। উপসাগরীয় নীতি নির্ধারকদের জন্য এ ধরনের সংঘাতগুলি হ’ল ফাটল, যা তাদের মধ্যে বহিঃশক্তি প্রবেশের দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। (চলবে)

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মধ্যপ্রাচ্য


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ