বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার তাদের দুর্নীতি ও অপকর্মের সমালোচনা রুখতেই বিরোধীদের গুম করছে। গতকাল এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বাংলাদেশে যেটা প্রত্যক্ষ করছি গত এক দশক ধরে এই গুমের সংস্কৃতি দিয়ে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকছে। যেহেতু তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেই কারণে তারা গুমের সংস্কৃতি চালু রেখে ভয় দেখিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে জনগণের ওপর নির্যাতন করছে। উদ্দেশ্য একটাইÑ সরকারের যে বিভিন্ন অপকর্মগুলো রয়েছে, সেই অপকর্মগুলোর সমালোচনা না করা যায়, সরকারের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করলেই গুম করে একটা ভীতি সৃষ্টি করা যায়। এখানে এটাই হচ্ছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রচÐভাবে বিনষ্ট হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন পাঁচজন। তারা হচ্ছেনÑ লিয়ন হক, মামুন পারভেজ তন্ময়, তৌহিদুল ইসলাম হাসিব, ফেরদৌস মজুমদার মাসুম ও সেলিম মিয়া। এই পাঁচজনকে তুলে নিয়ে গেছে সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা, অনেক জায়গাতে পুলিশরা তুলে নিয়ে গেছে। দল ও তাদের পরিবার থেকে খোঁজ করা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অস্বীকার করছে যে তারা এই সম্পর্কে কিছু বলতে পারেন না। যারা গুম হয়েছে তাদের পরিবার অত্যন্ত উদ্বিগ্ন অবস্থায় আছে, আমরাও উদ্বিগ্ন অবস্থায় আছি।
তিনি বলেন, আমি সরকারের কাছে আহŸান জানাব, কোনো ব্যক্তি যদি নিখোঁজ হয় তাহলে তার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সরকারের। বিশেষ করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে যাওয়ার পরেÑ এটা একটা অসম্ভব ব্যাপার যে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়েছে তারপরে সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দারা তাকে তুলে নিয়ে যাবে। কোন দেশে বাস করছি আমরা?
তিনি বলেন, এখানে কি আইনের শাসন নেই, এখানে কী গণতন্ত্রের ন্যূনতম অধিকারগুলো ১৯৭২ সালে সংবিধানে আমাদের দিয়েছে সেগুলো কী আমাদের নেতা-কর্মী-ভিন্নমত পোষণকারীদের জন্য একেবারে অনুপস্থিত হয়ে গেল। আজকে বাস্তবতা হচ্ছে এটাÑ এ সরকার শুধু জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েনি তারা পুরোপুরিভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। আজকে তারা রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করেছে, করাত্ব করেছে সেভাবে তারা টিকে থাকতে চায়। আমি সরকারের আহŸান জানাব, অবিলম্বে গুম হওয়া নেতা-কর্মীদের খুঁজে বের করা হোক, যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করা হয়েছে তাদেরকে মুক্তি দেয়া হোক এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হোক।
গত ১২ নভেম্বর রাজধানীতে গাড়ির পোড়ানোর ঘটনা সরকারের এজেন্টদের পুরোনো খেলা বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, বিএনপিকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার এ যে নীলনকশা একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করবার তার বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহŸান জানাচ্ছি এবং দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সমস্ত রাজনৈতিক দলমত নির্বিশেষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের জন্য আবার সংগ্রাম করার আহŸান জানাচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজকে রাজনীতি করার জন্য যদি মানুষকে গুম হয়ে যেতে হয়, ভিন্নমত পোষণ করার জন্য যদি গুম হতে হয় তাহলে এদেশে গণতন্ত্রের লেশ মাত্র নেই। বাস্তবতা হচ্ছে যে, এদেশে কোনো নির্বাচনই হয় না। এখন নির্বাচনব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে গেছে। জনগণের কোনো আস্থা নির্বাচনের প্রতি নেই। এটা হয়েছে সরকারের কারণে। সরকারের বংশবদ নির্বাচন কমিশন তারা একটা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারেনি। নির্বাচন বা জনগনের ভোট দেয়ার যে অধিকার এটা রক্ষা করার দায়িত্ব শুধুমাত্র বিএনপির নয়, এদেশের সকল মানুষের। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র বন্ধ করবার যে প্রক্রিয়া তাকে বন্ধ করতে হবে এবং তা হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে।