Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দাম ৩৯% বেশি

ইআইবির ঋণে ২শ ব্রডগেজ কোচ কিনছে রেলওয়ে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

এবার ৩৯ শতাংশ বেশি দামে ২শ’টি ব্রডগেজ কোচ কিনছে রেলওয়ে। প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইকালে কোচগুলোর দাম ধরা হয়েছিল ৯৪৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এখন বাস্তবায়ন পর্যায়ে এসে এগুলোর দাম বাড়িয়ে এক হাজার ৩১০ কোটি ২৬ লাখ টাকা করা হয়েছে। আগের হিসাবে দাম ধরা হয়েছে প্রায় ৩৯ শতাংশ বেশি। সূত্র জানায়, কোচগুলো কেনার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য গত বছর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় রেলওয়ে। সে সময় ভ্যাট-শুল্ক ছাড়া প্রতিটি কোচের দাম ধরা হয়েছিল ছয় কোটি ৩৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা। উচ্চ ব্যয় নিয়ে সে সময় আপত্তি তুলেছিল পরিকল্পনা কমিশন। তবে ব্যয় না কমে উল্টো বেড়ে গেছে। পরিকল্পনা কমিশনের কোনো প্রভাবও দেখা যাচ্ছেনা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে। এ নিয়ে খোদ রেলওয়ের কর্মকর্তারাই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বর্তমানে রেলওয়েতে ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ রয়েছে ৪২৮টি। এর মধ্যে ১৮৭টির অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী আগামী ৩০-৩৫ বছরের মধ্যে রেলওয়ের সব ট্র্যাক ব্রডগেজে রূপান্তর করা হবে। এছাড়া যমুনা নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণ এবং পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প সম্পন্ন হলে সারা দেশে ব্রডগেজ ট্রেনের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এজন্য পুরোনো কোচগুলো প্রতিস্থাপনসহ ২-৪ বছরের মধ্যে নতুন ৪শ’ কোচ দরকার হবে।
এ কারণেই নতুন ২শ’ ব্রডগেজ কোচ কিনছে রেলওয়ে। ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (ইআইবি) ঋণে কোচগুলো কেনার কথা রয়েছে। ভ্যাট-শুল্ক ছাড়া প্রতিটি কোচের দাম পড়ছে ছয় কোটি ৫৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। রেলের সম্প্রতি কেনার কোচের চেয়ে এ ব্যয় ৪৩ শতাংশ বেশি।
রেলওয়ের তথ্যমতে, ২শ’ ব্রডগেজ কোচ কেনায় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৭৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে এক হাজার ৩৫৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ঋণ দেবে ইআইবি। এর মধ্যে শুধু কোচের দাম ধরা হয়েছে এক হাজার ৩১০ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আর ভ্যাট-শুল্কসহ অন্যান্য খাতে ৩৭৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে।
প্রকল্পটির ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২শ’ কোচের মধ্যে রয়েছে এক সেট (চারটি) সেলুন, তিনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ইন্সপেকশন কার, চারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্স স্লিপার কার, ২৫টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্লিপার কার, ৪২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কার, ৮০টি শোভন চেয়ার কার, ১৬টি ডাইনিং ও নামাজের ব্যবস্থা সংবলিত শোভন চেয়ার কার ও ২৬টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লাগেজ ভ্যান সংবলিত পাওয়ার কার। প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইকালে ধরনভেদে প্রতিটি কোচের একক দর ধরা হয়েছিল যথাক্রমে ২৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা, সাত কোটি তিন লাখ, আট কোটি ১৬ লাখ, পাঁচ কোটি ১১ লাখ, চার কোটি ৭১ লাখ, চার কোটি ১৮ লাখ, চার কোটি ১১ লাখ ও পাঁচ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। তবে প্রকল্পটি চূড়ান্ত করার সময় ধরনভেদে প্রতিটি কোচের একক দর বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৫৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, ১০ কোটি ১৭ লাখ, সাত কোটি ৫১ লাখ, ছয় কোটি ৩৬ লাখ, ছয় কোটি ২৩ লাখ, পাঁচ কেটি ৭৮ লাখ, পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ও আট কোটি ৪৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রত্যেক ধরনের কোচের দামই বাড়তি ধরা হয়েছে। সব মিলিয়ে কোচগুলো কেনায় ৩৬৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা বা ৩৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ দাম বেশি দেখানো হয়েছে।
ডিপিপিতে আরও দেখা যায়, ২০১৭ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণে ২শ’ টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ কোচ কিনেছে রেলওয়ে। এর মধ্যে প্রতিটি ব্রডগেজ কোচের দাম পড়েছে ভ্যাট-শুল্ক ছাড়া গড়ে চার কোটি ৬০ লাখ ৭১ হাজার টাকা। আর প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচের ইউনিটপ্রতি দাম ধরা হয়েছে গড়ে ছয় কোটি ৫৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এ হিসাবে গড়ে প্রতি কোচের দাম বেশি ধরা হয়েছে এক কোটি ৯৮ লাখ ৭৭ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, ইআইবির ঋণে ২শ’ কোচ কেনার ক্ষেত্রে ভারতের ঋণে কেনা কোচের দামকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে। ওই কোচগুলোর দাম ছিল ছয় কোটি ৩৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে বছরভিত্তিক তিন শতাংশ মূল্যবৃদ্ধিজনিত ব্যয় যোগ করা হয়েছে। এতে ভ্যাট-শুল্ক ছাড়া প্রতিটি কোচের দাম পড়ছে ছয় কোটি ৫৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। যদিও ভারতের ঋণে কেনা কোচগুলোর মান নিয়ে সে সময়ই প্রশ্ন উঠেছিল। এমনকি এখনও কোচগুলোকে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা কোচের চেয়ে নিম্নমানের বিবেচনা করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতের ঋণে কোচ কেনার ক্ষেত্রে সীমিত দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। তাতে ভারতীয় কোম্পানি ছাড়া অন্য কেউ অংশ নিতে পারেনি। এতে কোচের দাম কিছুটা বেশি পড়েছে। আর ইআইবির ঋণে উন্মক্ত দরপত্র আহ্বান করা হবে। এডিবির ঋণে কোচ কেনার ক্ষেত্রেও উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এতে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে অনেক কমে কোচ কিনেছিল রেলওয়ে। তাই এবারও দাম কম পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেলওয়ে

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ