পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাসুল (সা.) এর প্রেমই মুক্তির চাবিকাঠি। রাসুল (সা.) এর অনুসরণ ব্যতীত কেউ মুক্তির সন্ধান পাবে না। রাসুল (সা.) এর প্রতি আনুষ্ঠানিকতা নির্ভর ভালোবাসা মুসলমানের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। রাসুল (সা.) এর প্রতি একনিষ্ঠ ভালোবাসাই মুসলিম জাতিকে বর্তমান সঙ্কট থেকে মুক্তি দিতে পারে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমামরা এসব কথা বলেন।
রবিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব-তাৎপর্য তুলে ধরে ইমামরা মুসল্লিদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নগরীর মসজিদগুলোতে উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। অধিকাংশ মসজিদে জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় মুসল্লিদের রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। মহাখালিস্থ মসজিদে গাউছুল আজমেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহাম্মদ মুহিববুল্লাহিল বাকি নদভী বলেছেন, রাসুল (সা.) এর প্রতি একনিষ্ঠ ভালোবাসাই মুসলিম জাতিকে বর্তমান সঙ্কট থেকে মুক্তি দিতে পারে। রবিউল আউয়াল মাসের এ বছরের শেষ জুমা ছিল গতকাল। রবিউল আউয়াল মাস খুবই স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক মাস। যেহেতু রবিউল আউয়াল মাস মহানবী (সা.) এর আগমনের মাস। রাসুল (সা.) এর আদর্শের প্রচার, তার আদর্শ গ্রহণের প্রতি উদ্বুদ্ধ, তাঁর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টির মাধ্যমে মুসলিম জাতির ঘুম ভাঙানোর জন্য এ মাসে বিভিন্ন সেমিনার, আলোচনা সভা, সিরাত মাহফিল, মিলাদ মাহফিল আরো বহু কিছুর আয়োজন করা হয়ে থাকে।
রবিউল আউয়ালকে ঘিরে এতো আয়োজন মুসলিম জাতির ঘুম ভাঙাতে পারছে কী না খতিয়ে দেখা উচিৎ। যদি মুসলিম জাতির ঘুম ভাঙতো তাহলে রাসুল (সা.) এর ভালোবাসায় উজ্জীবিত হয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে পারতো। পেশ ইমাম বলেন, রাসুল (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা আমাদেরকে কী ঐক্যবদ্ধ করতে পারছে? বরং দেখা যাবে মুসলমানের মধ্যে যত অনৈক্য সবগুলো রাসুল (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা এবং তাঁর অনুসরণের নাম দিয়েই হচ্ছে। রবিউল আউয়ালকে ঘিরে যতো আয়োজন তা সার্থক হয়েছে বলে মনে করা হবে যদি আমরা রাসুল (সা.) এর প্রতি ভালোবাসায় উজ্জীবিত হয়ে শাখাগত মতানৈক্য পরিহার করে মৌলিক বিষয়কে ভিত্তি করে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমীন!
ঢাকার ডেমরার দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা মসজিদে জুমার বয়ানে পেশ ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ ফরীদ বলেন, সকল প্রশংসা মহান রব্বুল আলামীনের যিনি রাসুল (সা.) প্রেমে উজ্জীবিত হৃদয় দিয়ে সুন্নাতে রাসুলকে আঁকড়ে ধরার মানসিকতা ও তৌফিক দিয়েছেন। রাসুল (সা.) তাঁর সারা জীবন ব্যয় করেছেন পথহারা মানুষকে পথ দেখাতে।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র আল কোরআনে বলেন, ‘হে মুহাম্মদ আপনি মানব জাতিকে বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে তোমরা আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। (সূরা আল ইমরান: আয়াত-৩১) পবিত্র আল কোরআনে আরো বলা হয়েছে, যদি তোমরা রাসুলের আনুগত্য কর, তাহলে হেদায়েতপ্রাপ্ত হবে। (আন নূর : ৫৪)। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, হে ঈমানদারগণ! আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসুলের এবং সেসব লোকেরও যারা তোমাদের মধ্যে সামগ্রিক দায়িত্বসম্পন্ন, অতঃপর তোমাদের মধ্যে কোন ব্যাপারে মতবিরোধের সৃষ্টি হয় তবে তা আল্লাহ ও রাসুলের দিকে ফিরিয়ে দাও। (আন নিসা : ৫৯)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসুলের অনুসরণ কর আর নিজেদের আমল বিনষ্ট করো না। ( সূরা মুহাম্মদ: ৩৩)।
রাসুল (সা.) বলেন, যে আমার এতায়াত বা আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে আমার হুকুম অমান্য করল, সে আল্লাহর হুকুমই অমান্য করল। (বুখারী, মুসলিম)। রাসুল (সা.) বলেন, যে আমার সুন্নাতকে ভালোবসে সে আমাকে ভালোবাসে। আর যে আমাকে ভালোবসে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। (জামে তিরমিযি-২/৯৬)। এসব আয়াত-হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, আমাদের প্রতিটি কাজ সুন্নাত তরিকায় হওয়া উচিৎ। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে রাসূল (সা.) এর আনুগত্য করে দুনিয়া আখেরাতে সফল হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন!
রাজধানীর গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যখন ফাসেক বা পাপী ব্যক্তির প্রশংসা করা হয়, তখন আল্লাহ রব্বুল আলামীন ক্রোধান্বিত হন এবং এ কারণে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে’। মেশকাত শরীফ। তিনি আরো বলেন, শয়তান এই যুগে মিথ্যার ব্যাপক প্রচলনের জন্য নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে রেখেছে। তন্মধ্যে একটি পদ্ধতি হলো মিথ্যা প্রশংসা করা এবং ভিত্তিহীন উপাধি প্রয়োগ করা। কিন্তু আফসোস! এটাকে মিথ্যা মনে করা হয় না। অথচ আল্লাহ তাআলার দৃষ্টিতে তা অত্যন্ত অপছন্দনীয় কাজ। বিশেষত যখন কোনো অযোগ্য, ফাসেক বা পাপী ব্যক্তির প্রশংসা করা হয় তখন আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে মিথ্যা পরিহার করার এবং সদা-সর্বদা সত্য কথা বলার তৌফিক দান করুন। আমিন!
ঢাকার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদীস মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জুমার খুৎবা-পূর্ব বক্তব্যে বলেছেন, মক্কার কাফেররা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ইসলামের সত্যতা ও যথার্থতা অনুধাবন করার ইচ্ছা প্রকাশ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর নিকট কতিপয় ধর্মপ্রচারককে তাদের কাছে প্রেরণের আহবান জানায়। রাসুল (সা.) তাদের এ আহবানে সাড়া দিয়ে দশজন সাহাবীর একটা দল তাদের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। পথিমধ্যে কাফেররা অতর্কিত হামলা করলে তাদের আট জনই শাহাদাত বরণ করেন। অবশিষ্ট দুইজন হযরত খুবাইব (রা.) ও হযরত জায়েদ ইবনে দাস্তাহ (রা.)কে গ্রেফতারপূর্বক হারেস ইবনে আমেরের বাড়ীতে বন্দি করে রাখা হয়। শুরু হয় এ দুই সাহাবীর উপর অবর্ণনীয় ও অসহনীয় নির্যাতন। প্রথমে দানাপানি বন্ধ করে দিয়ে তাদের ঈমানের পরীক্ষা নেয়া হয়। অতঃপর বলা হয় যে, নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে তোমাদেরকে মুক্তি দেয়া হবে, অন্যথায় হত্যা করা হবে। জবাবে পরীক্ষিত উভয় সাহাবীই দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে সাফ জানিয়ে দিলেন জীবন বিসর্জন দিতে প্রস্তুত, কিন্তু আল্লাহর রাসুল (সা.)এর ওপর আনিত ঈমান কিছুতেই বিসর্জন দিতে পরবো না। অতঃপর কাফের হায়েনারা তাঁর শেষ ইচ্ছার কথা জানতে চাইলে তিনি দু’রাকাত নামাজ আদায়ের ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং দু’রাকাত নামাজ পড়ার সুযোগ গ্রহণপূর্বক শাহাদাতের সূধা পান করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।