পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গ্রেফতার হয়েছে রায়হান হত্যার প্রধান অভিযুক্ত এস আই আকবর। কিন্তু গ্রেফতারে এখন শেষ হয়নি আকবর কাসুন্দি। গনপিটুনিতে ছিনতাইকারী হিসেবে রায়হানের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল সে। অবশেষে সেই বক্তব্যের অসারতা প্রমাণিত হয়, কিন্তু নতুন করে আরেক তথ্য দিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে আকবর। আনুষ্ঠানিক গ্রেফতার পূর্বে খাসিয়াদের চিত্রিত মোবাইল ভিডিও রেকর্ডে সে তার পালানো নিয়ে এক সিনিয়র অফিসারের কথা বলেছে। স্বভাবতই প্রশ্নের সুনামী উঠছে কে সেই সিনিয়র অফিসার। এর মধ্যে দিয়ে তৈরী হয়েছে নতুন এক ইস্যু।
এদিকে রায়হানের মা সালমা বেগমও দাবি তুলছেন, আকবরের পেছনে অনেক বড় অফিসার আছেন। গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাতকারের তিনি বলেন, তাদেরকেও গ্রেফতার করতে হবে। এছাড়া আগামী শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিয়েছে রায়হানের পরিবার। রায়হানের বাড়ীতে এ সংবাদ সম্মেলন করবে বৃহত্তর আখালিয়া বার হামছা সংগ্রাম পরিষদ। সেখানে পরবর্তী কর্মসূচীসহ বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।
এদিকে, আকবর গ্রেফতারে ভ‚মিকার কারণে স্থানীয় কানাইঘাটের রহিম উদ্দিন নিয়ে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দুর্দান্ত এক চরিত্রের অধিকারী রহিম উদ্দিন। সীমান্ত কেন্দ্রিক তার জীবন-জীবিকা। আকবর গ্রেফতারে সর্ম্পৃক্ত থাকার পর খোলস পাল্টে নতুন চরিত্র নিয়ে মাঠে নামে সে। পাল্টে যায় তার মতিগতি।
আকবরের সেই সিনিয়র অফিসার : রায়হান মৃত্যু ঘটনার পর আকবরকে নজরবন্দি করার মতামত দিয়েছিলেন অধিনস্ত সহকর্মীরা। তবে এসময় এসএসপির সাবেক কমিশনার বলেছিলেন, আকবরের এখনই খুনের ঘটনায় রায় হয়ে গেছে যে তাকে নজরবন্দি করতে হবে। তারপরই লাপাত্তা হয়ে যায় আকবর। এরপর থেকে মেট্রোপুলিশের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে সাধারণ মানুষ। তারা দায়ী করে আকবরকে পালাতে সুযোগ দেয়া হয়েছে। তাদের সেই অভিযোগ আরো দৃঢ় হয়ে উঠেছে আকবরের ভাইরাল হওয়া ভিডিও বক্তব্যে সিনিয়র অফিসারের কথায়। সেকারণে জিজ্ঞাসা, কৌতুহল এখন এক বিন্দুতে। কে সেই সিনিয়র কর্মকর্তা? এ নিয়ে খোদ সর্বস্তরের পুলিশ ফোর্সে রীতিমতো চলছে কানাঘুষা।
কিন্তু আকবর খাসিয়াদের ভিডিও চিত্রে দেয়া বক্তব্য এখন অস্বীকার করছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আকবর তাকে জানিয়েছে, ভয়ার্থ হয়ে এমন বক্তব্য প্রদান করেছে সে। তবে আকবরের দায়িত্বকালীন মাথার উপর এক সিনিয়র কর্মকর্তা নিয়ে গুঞ্জণ রয়েছে। তার ব্যাপারে গণমাধ্যমে অনেক তথ্য প্রকাশ হয়েছে। জনশ্রæতি রয়েছে সেই কর্মকর্তা আকবরের কোন সর্ম্পকে আত্মীয়ও বটে। আকবরের সে সময়ে ইমডিয়েট শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন পুলিশে উপ-কমিশনার (ডিসি-উত্তর) আজবাহার আলী শেখ। বন্দরবাজার হলো নগরীর প্রাণ। অপরাধ ও অপরাধী নিয়ন্ত্রণের চেয়ে চাষ করেই বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন এস আই আকবর। অন্যায় অবৈধ আয়ের ভাগবাটোয়ার টপ-টু-বটম পর্যন্তই ছিল বিস্তৃত। উপর খোশ তো নিচের কর্তাও ভালো থাকেন নিজ পদস্থ জায়গায়। আকবরও তেমন ছিলেন বন্দর বাজার ফাঁড়িতে। সিলেটের সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে কসমেটিকস, সুপারি, মাদক, মোবাইল ফোনের বড় বড় চালান পৌঁছে নগরীর বন্দরবাজার ফাঁড়ি ছুঁয়ে। এছাড়া ফুটপাতে দখল ও অবৈধ ব্যবসা, হোটেল, মাদক, পতিতা ব্যবসা, জুয়াসহ সব ধরনের অপরাধের নিরাপদ রোড বন্দরবাজার এলাকা।
আকবর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই কাড়ি কাড়ি অর্থ লুটেছেন বন্দর বাজার এলাকা ঘিরে। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রতিদিন ২৫ হাজার টাকা দিতে হতো ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে। টাকার লোভে অস্থির এ কর্মকর্তার নিকট টাকাই ছিল সব। কিভাবে কোথায় থেকে আসছে এ অর্থ তা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন পরোয়া করতেন না তিনি। কিন্তু এসব কর্মের দায় কেবল এখন যেন এস আই আকবরের ঘাড়েই। সেকারণে সচতেন মহলে প্রশ্ন তাহলে বস অফিসারদের কি ছিল দায়িত্ব।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের নতুন কমিশনার নিশারুল আরিফও আকবরের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেন, এ বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মামলাটি এখন পিবিআই তদন্ত করছে, তাই আকবরকে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ রয়েছে পিবিআইয়ের। সেখান থেকেও তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আকবরকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পিবিআই।
গত মঙ্গলবার তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়। পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খালেদ-উজ-জামান জানান, সব বিষয়েই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব উদঘাটন করবেন তারা। তাদের কাছে এই ৭ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজন হলে এর আগে রিমান্ডে নেয়া আসামিদেরও পুনরায় রিমান্ডের আবেদন জানানো হতে পারে। তিনি বলেন, আকবরের পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে যারাই জড়িত থাক সবকিছুই উদঘাটন হবে।
দুর্দান্ত এক চরিত্র রহিম উদ্দিন : এস আই আকবর গ্রেফতারে সিলেটের সীমান্তবর্তী কানাইঘাটের যুবক রহিম উদ্দিনের ভ‚মিকা অনস্বীকার্য। তবে সে কার? পুলিশের না নিজের উদ্যোগেই আকবর গ্রেফতার ঘটনায় জড়িয়েছিল। খন্ডিত এ প্রশ্ন নিয়ে মাতামাতির শেষ নেই, কিন্তু সর্বশেষ উত্তর রহিম ছিল কেবল পুলিশের লোক। স্থানীয় সূত্র জানায়, লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির ডনা সীমান্ত এলাকার মৃত তরফ আলীর পুত্র রহিম উদ্দিন। খাসিয়া যুবকদের সাথে কথা বলে নিজের হাতে লাইলনের দড়ি দিয়ে আকবরকে বেঁধে ডনা সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন তিনি। পুরো প্রক্রিয়াটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে হৈ চৈ পড়ে যায়।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সীমান্তবর্তী এলাকার অধিবাসী হওয়ায়, ওপারের মানুষের সাথে তার চেনাজানা ভালো। গরু চোরাকারবারীতেও দক্ষ তিনি। গোপনে গরু সীমানা পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে নিতে আসার কারণে তার পরিচিতি রয়েছে বিশেষ এক চক্রের সাথে। তাকে টার্গেট করে কৌশলে কাজে লাগিয়ে দেয় প্রশাসন কোন জটিলতা ছাড়াই দেশে পার করতে আকবরকে। সেকারণে এক সপ্তাহ আগ থেকেই রহিমকে কানাইঘাট থানা পুলিশের গাড়িতে চলতে দেখা গেছে। তাকে পুলিশই নিযুক্ত করে আকবরকে ধরতে সহায়তার জন্য।
বিষয়টি স্বীকার করে সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, পুলিশের কিছু বন্ধুর সহযোগিতায় আকবরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের সোর্স না বলে সম্মান করে বন্ধু বলেছি। আকবরকে গ্রেফতার প্রক্রিয়ায় অবদান রয়েছে সীমান্তবর্তী মানুষের।
এছাড়া বিভিন্ন তথ্য প্রমাণে জানা যায়, রায়হান হত্যার পর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে আকবর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে পালিয়ে চলে যায়। সেখান থেকে চলে যায় আসাম প্রদেশের শীলচর শহরের অদূরে অবস্থিত গুমড়া নামক এলাকায়। আশ্রয় নেয় গোপাল নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে। সেখান থেকে নিরাপদে বসবাসের জন্য এস আই আকবর সিন্ধান্ত নেয় গোপালের মাধ্যমে আসামের রাজধানী গোয়াহাটিতে যাওয়ার।
এদিকে আকবরের অবস্থান শনাক্তে বিভিন্ন উপায়ে খেয়াল রেখেছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে সিলেট জেলা পুলিশ। এরপর আকবরের আশ্রয়দাতা গোপালের পিছনে কয়েকজন বিশ্বস্থ সোর্স লাগিয়ে দেয় পুলিশ। এতে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে আকবরকে কৌশলে ধরিয়ে দেয়ার জন্য সোর্সরা গোপালকে ম্যানেজ করে নেয়। এদিকে আকবর গোয়াহাটিতে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল। তাই গোয়াহাটিতে পৌঁছে দেয়ার জন্য আকবর গোপালের সাথে এক লাখ টাকার চুক্তি করে এবং সেই অনুযায়ী আশ্রয়দাতা গোপাল দিনক্ষণ ঠিক করে গত রোববার রাতে আকবরকে গোয়াহাটিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিজিৎ নামের এক চালকের এলট্রো কার ভাড়া করে।
কিন্তু তারা পুলিশের পরিকল্পনা অনুযায়ী আকবরকে গোয়াহাটিতে না নিয়ে কৌশলে মেঘালয়ের সীমান্তবর্তী সেনা রোড দিয়ে উখিয়াং পেট্রোলপাম্পের কাছে গত রোববার রাত ৩টায় পৌঁছায়। তখন কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুদ্দোহা আসামি আকবরকে লোভা সীমান্ত দিয়ে উদ্ধারের জন্য লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউপির এক জনপ্রতিনিধিসহ কানাইঘাটের বাসিন্দা সালেহ আহমদ ও শাহাব উদ্দিনের সহযোগিতা চায়। এতে শাহাব উদ্দিন ও সালেহ আহমদ ডনা সীমান্তবর্তী এলাকার রহিম উদ্দিন নামের আরেকজনকে সঙ্গী করে নেয়। তারা রোববার থেকে কানাইঘাট থানা পুলিশের সাথে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেন।
এক পর্যায়ে রোববার রাত ২টার দিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে পুলিশের কথামতো গোপালের হাত থেকে আকবরকে নিয়ে আসার জন্য বিশ্বস্থ কয়েকজন গারোকে উখিয়াং পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে পাঠানো গারো দলটি আকবরের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। পরে আকবরকে সেখান থেকে বাংলাদেশে কি ভাবে নিয়ে আসা যায় তার জন্য পুলিশ সালেহ আহমদ ও শাহাব উদ্দিনকে জানায়। এতে সালেহ আহমদ ও শাহাব উদ্দিন কুলিয়াং বস্তির উয়েস নামের এক খাসিয়া যুবকের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তাদের কথামতে উয়েসসহ কয়েকজন খাসিয়ারা রোববার ভোররাতে উখিয়াং পেট্রোলপাম্প নামক স্থান থেকে আকবরকে গোপালের কাছ থেকে বুঝে নেয়।
এরপর উয়েস বাংলাদেশে অবস্থানরত সালেহ আহমদ ও শাহাব উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করে। সেই যোগাযোগ অনুযায়ী গত সোমবার সকাল ৮টায় আকবরকে ভারতের ডনা খাসিয়া বস্তিতে নিয়ে আসে উয়েস। তখন কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ থানার ওসিসহ পুলিশের একটি দল ডনা সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নেয়। এবং আকবরকে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে আসার জন্য তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। এতে সালেহ আহমদ, শাহাব উদ্দিন ও ডনা সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা রহিম উদ্দিন বাংলাদেশ সীমান্তের ১৩৩৫ নম্বর পিলারের কাছে যায়। পরে ডনা খাসিয়া বস্তি থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে আকবরকে নিয়ে আসার জন্য রহিম উদ্দিনসহ ৪/৫ জনকে ডনা খাসিয়া বস্তিতে পাঠানো হয়। সেখানে উয়েসসহ ভারতের ডনা বস্তির খাসিয়াদের কাছ থেকে আকবরকে বুঝে নেয় রহিম উদ্দিনসহ কয়েকজন যুবক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।