Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাগোর্নো-কারাবাখে রাশিয়ার শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০২০, ২:২৪ পিএম

বিরোধপূর্ণ নাগোর্নো-কারাবাখে গত প্রায় দুই মাস ধরে চলা তুমুল লড়াই বন্ধে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে আর্মেনিয়া, আজারবাইজান ও রাশিয়া। ওই চুক্তির আওতায় নাগোর্নো-কারাবাখের ফ্রন্টলাইন এবং ওই অঞ্চল এবং আর্মেনিয়ার মধ্যবর্তী করিডোরে রাশিয়ার শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। খবর রয়টার্স ও আল জাজিরার।

ফেসবুকে এক পোস্টে নিজেদের দৃশত এই পরাজয়কে ‘অবর্ণনীয় বেদনাদায়ক’ বলে মন্তব্য করেছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান। তবে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ টুইট করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এটা একটি ঐতিহাসিক দিন। আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের নাগোর্নো-কারাবাখ সংঘাতের সমাপ্তি ঘটছে।

এই শান্তি প্রক্রিয়ায় তুরস্কও অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন আলিয়েভ। তার এই মন্তব্যের পর ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে আর্মেনিয়া। পাশিনিয়ান পোস্ট করা ২০ মিনিট পর ক্ষুদ্ধ বিক্ষোভকারীরা রাজধানী ইয়েরেভানে প্রধান সরকারি ভবনে ঢুকে পড়ে। এসময় তারা পাশিনিয়ানের পদত্যাগের দাবি জানায়।
মঙ্গলবার পাশিনিয়ান জানান, তার দেশের সেনাবাহিনীর চাপে এই শান্তিচুক্তি করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। এই শান্তিচুক্তির ফলে নাগোর্নো-কারাবাখে সব ধরনের সামরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ এবং পরিস্থিতি শান্ত করতে বলা হয়েছে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে, গত মাস দেড়েকের সংঘর্ষে আজারবাইজান বিরোধপূর্ণ অঞ্চলটির যে অংশ দখল করে নিয়েছে, তা তারা রেখে দেবে। এর মধ্যে রয়েছে শুশা শহর, যাকে আর্মেনীয়রা শুশি নামে ডাকে। এছাড়া চুক্তির অধীনে আর্মেনীয় বাহিনীকে আগামী ১ ডিসেম্বরের মধ্যে আরো কয়েকটি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হবে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ‘এ চুক্তি বিবদমান দুই দেশকে একটি দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছতে সহায়তা করবে। তাদের বিবাদের কারণে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, ঘরছাড়া হয়েছে আরো অনেকে। দেশ দুটির মধ্যকার সংঘর্ষের কারণে আরো বিস্তীর্ণ অঞ্চল যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।’
রাশিয়ার মধ্যস্থতায় এ যুদ্ধবিরতিতে আজারবাইজান বেশ খুশি। দেশটির রাজধানী বাকুতে এর বহিঃপ্রকাশও দেখা গেছে। শহরটির অধিবাসীরা আলজেরিয়ার জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে আনন্দ প্রকাশ করেছেন।

কিন্তু আর্মেনীয়রা এ চুক্তিতে খুশি হতে পারেনি। দেশটির রাজধানী ইয়েরেভানে তারা সরকারি ভবনগুলোর সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, সরকার যে চুক্তি করেছে, তা আসলে আর্মেনীয়দের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। বিক্ষোভকারীদের অনেকে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানের পদত্যাগও দাবি করেন।
তবে প্রধানমন্ত্রী এতে নিজের কোনো দোষ দেখছেন না। পাশিনিয়ান দাবি করেছেন, আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনীর চাপেই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। সেনাবাহিনী বলেছে, নাগোর্নো-কারাবাখে তাদের সব সামরিক পদক্ষেপ আপাতত বন্ধ রয়েছে এবং সেখানকার পরিস্থিতি এখন শান্ত। এদিকে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের মতে, চুক্তিতে সম্মত হওয়া ছাড়া পাশিনিয়ানের সামনে আসলে আর কোনো পথই খোলা ছিল না।
আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে সর্বশেষ চুক্তি এটাই প্রমাণ করে যে, এ অঞ্চলে রাশিয়ার প্রভাব কতটা শক্তিশালী। এ অঞ্চলকে মস্কো ‘নিজেদের বাড়ির পেছনের উঠান’ বলেই মনে করে। আর্মেনিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার একটি সামরিক চুক্তি রয়েছে। সেখানে একটি সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে মস্কোর। সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ক সেখানে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালালেও রাশিয়ার তৎপরতার সঙ্গে তারা ঠিক পেরে উঠছে না।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, তাদের শান্তিরক্ষী বাহিনী নাগোর্নো-কারাবাখের সীমানাজুড়ে এবং আর্মেনিয়া ও অঞ্চলটির করিডোরে মোতায়েন থাকবে। এ বাহিনী অন্তত পাঁচ বছর সেখানে থাকবে। এর অর্থ হলো, অঞ্চলটিতে রাশিয়ার প্রভাব আরো দীর্ঘস্থায়ী হবে।
এর আগেও নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও তা কার্যকর হতে না হতেই ভেঙে যায়। উভয় দেশই চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য পরস্পরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে এসেছে। সূত্র : রয়টার্স, আল জাজিরা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আজারবাইজান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ