পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বর্ষীয়ান ও অভিজ্ঞ রাজনীতিক জো বাইডেনেই (জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র) যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট। গত মঙ্গলবারের নির্বাচনে এই রায় দিয়েছেন সে দেশের ভোটাররা। চারদিনের নাটকীয় ও শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্যে শনিবার এই বহুল প্রত্যাশিত খবরটি পাওয়া গেল যে, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন বিজয়ী হয়েছেন। তার বিজয় দ্বারপ্রান্তে এসে আটকে ছিল কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে ভোট গণনা শেষ না হওয়ায়। এদের মধ্যে পেনসিলভেনিয়ার ফলাফল পাওয়া যায় শনিবার মধ্যরাতের পর। এ অঙ্গরাজ্যে জো বাইডেন বিজয়ী হওয়ায় তার প্রাপ্ত ইলেটোরাল ভোটের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭৯টি। বিজয়ী হতে প্রয়োজন ছিল ২৭০টি। আরো একাধিক অঙ্গরাজ্যে জো বাইডেন এগিয়ে থাকায় শেষ পর্যন্ত তার প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ৩০৬টিতে গিয়ে দাঁড়াতে পারে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আভাস দেয়া হয়েছে। জো বাইডেনের এ বিজয় নি:সন্দেহে বিপুল বিজয়। তার কাছে লক্ষণীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। জো বাইডেনের বিজয় বা মার্কিন জনগণের এ রায়কে অনেকেই সুচিন্তিত ও ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেছেন। জো বাইডেনের রানিংমেট ছিলেন কমলা হ্যারিস। তিনি জামাইকান বাবা ও ভারতীয় মায়ের সন্তান। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং কৃষ্ণাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্টও বটে। আমরা নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং অর্ধশতাব্দীকালের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের অধিকারী, দু’দুবারের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে স্বাগত জানাই, অভিনন্দন জানাই। একই সঙ্গে স্বাগত ও অভিনন্দন জানাই ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঐক্য-সংহতি-সম্প্রীতি, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন যথেষ্ট হুমকির মুখে আছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চার বছরের শাসনে মানুষের ত্যক্ত-বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণের অভাব হয়নি। তার কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি, বেপরোয়া কথাবার্তা, আচরণ ও কাজ অধিকাংশ মানুষ পছন্দ করেনি। বর্হিবিশ্বেও যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমর্যাদা অবনমিত হয়েছে। এমতাবস্থায়, মার্কিন জনগণের শুভবুুদ্ধিসম্পন্ন অংশটি যে নির্বাচনে সিদ্ধান্তমূলক রায় দিয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার পরাজয়, যাতে গণরায়ের প্রতিফলন রয়েছে, মানতে চাইছেন না। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি পরাজয় মানবেন না। সোমবার থেকে আইনী লড়াই শুরু করবেন। নির্বাচনের আগ থেকেই তিনি বলছিলেন, নির্বাচনে পরাজিত হলে তা মানবেন না। প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেবেন, সুপ্রিমকোর্টে যাবেন। পূর্বের সেই বলা কথাই তিনি এখন কাজে পরিণত করতে চাইছেন। অনেকেই বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করেছেন, ভোট গণনা যখন চলছিল, তখনই তিনি নিজেকে নির্বাচিত বলে দাবি করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা কখনো ঘটেনি। যথারীতি নির্বাচন হয়েছে, ফলাফল ঘোষিত হয়েছে এবং পরাজিত প্রার্থী বা দল তা মেনে নিয়ে বিজয়ী প্রার্থী ও দলকে অভিনন্দন জানিয়েছে। বিশ্বে গণতন্ত্র চর্চার এই উদাহরণ এবং ক্ষমতাবদলের এই শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া অন্যান্য দেশের কাছে অনুকরণীয় আদর্শ হিসাবে গণ্য হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তার প্রতিদ্ব›দ্বী-প্রতিপক্ষের এটি গুরুতর অভিযোগ এই যে, তিনি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নাজুক অবস্থায় ফেলে দিয়েছেন। এ অভিযোগ উড়িয়ে দেয়া যায় না। নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়েছে, এ অভিযোগ তুলে ট্রাম্প নির্বাচন কর্তৃপক্ষ ও নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তার দাবির পক্ষে অর্থপূর্ণ কোনো প্রমাণ নেই। এখন আবার বলছেন, পরাজয় মানবেন না, আইনেই আশ্রয় নেবেন। এটা যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্য ও প্রথার বিরোধী। পর্যবেক্ষকদের অভিমত, এতে আসলে কোনো কাজ হবে না। তার আশপাশের অনেকেই এতে বিব্রত।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বহু ক্ষেত্রেই বিরোধ, বিশৃংখলা ও সংকট সৃষ্টি হয়েছে। নতুন সরকার ও প্রশাসনকে এই বিরোধ দূর, বিশৃংখলার অবসান এবং সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ট্রাম্পের শেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ জাতীয় ঐক্য ও সাম্প্রদায়িক সহনশীলতার ওপর যে আঘাত হেনেছে, ফাটল ধরিয়েছে, তা মেরামত করতে হবে। সব মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ যেভাবে বিনষ্ট হয়েছে, আগ্রাহ্য হয়েছে তা পুর্ণগঠন করতে হবে। মানবাধিকার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি সংবিধানিক সকল প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী এ কার্যকর করতে হবে। অন্যদিকে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি, বাণিজ্য, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও আইনশৃংখলাকে সমুন্নত করতে হবে। ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক নীতিতে যে একগুয়েমি ও উগ্রবাদিতা প্রতিফলিত হয়েছে, তা ভারসাম্যপূর্ণ, যৌক্তিক ও নমনীয় করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এক নম্বর পরাশক্তি হওয়ায় বিশ্বব্যবস্থায় তার প্রভাবও সবচেয়ে বেশি। তাকে তার এ অবস্থান ধরে রাখতে হলে অবশ্যই ন্যায় ও নায্যতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। সার্বভৌম সমতাকে সর্বোচ্চে স্থান দিতে হবে এবং আরো মানবিক ও কল্যাণকামী হতে হবে। প্রবীণ ও বহুদর্শী রাজনীতিক জো বাইডেন তার দেশের ও দেশের বাইরে মানুষের এসব প্রত্যাশা পূরণে আন্তরিক হবেন, সবাই এমনটাই আশা করে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঘনিষ্ট মিত্রতা রয়েছে। রয়েছে বহুমুখী সম্পর্ক। সে সম্পর্ক নতুন সরকারের সময়ে আরও বৃদ্ধি পাবে, প্রত্যাশিত। পরিশেষে আমরা জো বাইডেনের সুস্বাস্থ্য ও সাফল্য কামনা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।