বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিকুলের মধ্যে তাঁর নিকট সবচেয়ে প্রিয় এবং পবিত্র নাম ‘হজরত মোহাম্মদ (সা.)’। তাকে সৃষ্টি করা না হলে আসমান জমিন কিছুই সৃষ্টি করা হতো না বলে খোদ আল্লাহ ঘোষণা করেছেন: ‘লাও লাকা-লামা খালাকতুল আফলাক’। রসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও বলেছেন: ‘আউয়্যালু মা খালাকাল্লাহ নূরী।’ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা সর্ব প্রথম আমার নূরই সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং, আরশ চত্বরে আল্লাহ তাঁর নামই লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন যা সীরাত গ্রন্থগুলোতে বহুল আলোচিত বিষয়। হাকীমুল উম্মত হজরত মওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.) কৃত ‘নাশরুত তীব ফি জিকরিন্ নবীয়্যিল হাবীব’ এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ওই গ্রন্থের তিনটি বর্ণনা নি¤œরূপ:
প্রথম বর্ণনা: আবদুর রাজ্জাক তার সনদের সাথে হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী (রা.) হতে বর্ণনা করেন: আমি আরজ করলাম যে, আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি উৎসর্গ হোন। আমাকে জানান, সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলা কোন বস্তু সৃষ্টি করেছেন? তিনি বললেন: ‘হে জাবের! সকল বস্তুর মধ্যে আল্লাহ তাআলা তোমার নবীর নূর, তার নূর দ্বারা (নূরের ফয়েজ দ্বারা) সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর সে নূর কুদরতে এলাহী দ্বারা যেখানে ইচ্ছা সেখানে ভ্রমণ করতে থাকে। সে সময় লৌহ ছিল না, ছিল না কলম এবং না ছিল বেহেশত এবং ছিল না দোজখ এবং না ছিল ফেরেশতা, না ছিল আসমান এবং না ছিল জমিন এবং না ছিল সূর্য এবং না ছিল মানুষ। অতঃপর আল্লাহ তাআলা যখন মাখলুক সৃষ্টির ইচ্ছা করেন তখন ঐ নূরকে চার ভাগে বিভক্ত করেন। এক ভাগ দ্বারা কলম সৃষ্টি করেন। দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা লৌহ সৃষ্টি করেন । এবং তৃতীয় ভাগ দ্বারা আরশ সৃষ্টি করেন (পরবর্তীতে দীর্ঘ হাদীস রয়েছে)।
‘তবুক’ যুদ্ধ হতে মদীনায় প্রর্তাবর্তণের পর হজরত আব্বাস (রা.) আরজ করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে অনুমতি দান করুন, আমি আপনার কিছু প্রশংসা করতে চাই। (যেহেতু হুজুর (সা.) এর প্রশংসা খোদ এতআত-আনুগত্য) তাই বললেন, ‘বল, আল্লাহ তাআলা তোমার জবানকে নিরাপদ রাখুন।’ অতঃপর হজরত আব্বাস (রা.) হুজুর (সা.)-এর সামনেই একটি প্রশস্তিমূলক কাসীদা পাঠ করেন। কবিতাগুলো শ্রবণ করে হুজুর (সা.) নীরবতা পালন করেন। মীলাদ মাহফিলগুলোতে হুজুর (সা.)-এর শানে প্রশস্তিমূলক কবিতা, নাত পাঠ করার তাৎপর্য এ ঘটনা হতে স্পষ্ট হয়ে উঠে।
দ্বিতীয় বর্ণনা: হাকেম বর্ণনা করেছেন: হজরত আদম (আ.) মোহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র নাম আরশে লিখিত দেখেন এবং আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে বলেন, ‘যদি মোহাম্মদ (সা.) না হতেন তাহলে তোমাকে সৃষ্টি করতাম না।’ এতে হুজুর (সা.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করা হয় হজরত আদম (আ.)-এর সামনে।
তৃতীয় বর্ণনা: হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন: ‘যখন আদম (আ.) ভুলের শিকার হন তখন তিনি আল্লাহর দরবারে আরজ করলেন, ‘হে প্রভু পারওয়ারদিগার আমি মোহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে আপনার দরবারে আরজ করছি যে, আমায় ক্ষমা করে দিন।’ তাই আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘হে আদম! আজ তুমি মোহাম্মদ (সা.)-কে কিভাবে চিনতে পারলে? অথচ এখনো আমি তাকে সৃষ্টি করিনি।’ আদম (আ.) আরজ করলেন, ‘হে প্রভু! আমি (তাঁকে) এইভাবে জেনেছি যে, আপনি যখন আমাকে আপনার হস্ত দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার (প্রদত্ত মর্যাদা) আমার মধ্যে রূহ ফুকে দেন, তখন আমি মস্তক উত্তোলন করি। আরশের চৌকাঠে ‘লা ইল্লাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ লিখিত (কলেমা) দেখতে পাই, তখনই আমি জেনেছি যে, আপনি নিজের পবিত্র নামের সাথে এমন এক ব্যক্তির নাম যুক্ত করেছেন, যিনি সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় হবেন।’
আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘হে আদম! তুমি সত্য বলেছ, বাস্তবতা এই যে, তিনি আমার নিকট সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় এবং তুমি যখন তার মাধ্যমে আমার নিকট দরখাস্ত করেছ, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আর যদি মোহাম্মদ (সা.) না হতেন, আমি তোমাকেও পয়দা করতাম না।’ বায়হাকী, হাকেম, তিবরানিতে এতটুকু অতিরিক্ত বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তোমার বংশধরগণের মধ্যে সকল নবীর মাঝে তিনি সর্বশেষ নবী’। (নশরুত-তীব)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।