পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আলকুরআন ইসলামের শুরু নয়। ইসলাম ধর্মের প্রথম অধ্যাদেশ শুরু হয়েছিলো আদম (আ.)কে সৃষ্টি ও তাকে পৃথিবীতে প্রেরণের মধ্য দিয়ে। এর শেষ হয়েছে মহানবী (সা.)কে প্রেরণ ও আল কুরআন নাজিলের মধ্য দিয়ে। হিন্দু গবেষকদের দাবি মতে, তাদের ধর্মগ্রন্থ ঋগবেদ সবচেয়ে বেশি প্রাচীন, যার বয়স সাড়ে তিন হাজার বছর। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মানব সভ্যতার বয়স ১ লাখ ৯৬ হাজার বছর। আর এ সভ্যতার প্রথম কারিগর আদম (আ.)। তিনি ছিলেন মুসলিম। এ মুসলিমের হাত ধরেই পৃথিবীতে সভ্যতার নির্মাণ শুরু হয়। অতঃপর বিবর্তনের মধ্য দিয়ে সে সভ্যতা আজ একবিংশ শতাব্দীতে মহীরুহ আকার লাভ করেছে। সুতরাং ইসলামই হচ্ছে প্রাচীন ধর্ম। এ ধর্ম প্রচলিত অন্যান্য ধর্মের মতো কতিপয় আচার সর্বস্ব ধর্ম নয়। এটির আচার, বিধান, সকল হুকুম এমনকি অভিবাদন প্রক্রিয়াটিও আল্লাহর শিখানো। ধর্ম যারা অনুশীলন করেন তারা অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী আর কালচারড্ হয়ে থাকেন। তাই ধার্মিকগণ একে অপরের সাক্ষাতের সময় নিজ ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী বিভিন্ন বিশুদ্ধ শব্দ ও ভাষা ব্যবহার করে অভিবাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকেন।
মুসলিমগণও তার বাইরে নয়। তারা তাদের রব ও নবী (সা.) এর শিখানো সুস্পষ্ট ও বিশুদ্ধ রীতি অনুযায়ী তাদের অভিবাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকেন। যেমন কুরআনে উল্লেখ আছে: যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে সেদিন তাদের অভিবাদন জানানো হবে ‘সালাম’ বলে। (সুরা আাহযাব: ৪৪)। জান্নাতে পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বলা হবে ‘সালাম’। (সুরা ইয়াসিন: ৫৮)। এ সালামের অর্থ হলো, সুস্বাগতম, ওয়েলকাম, তোমাদের আগমন শুভ হোক, তোমরা সুখী থাকো ইত্যাদি। আমরা জানি, প্রতিটি ভাষার বিশুদ্ধ উচ্চারণের গুরুত্ব রয়েছে। বিশুদ্ধ উচ্চারণ ছাড়া অর্থ বিশুদ্ধ হবে না। ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন: আব্দুল মালিক বিন মারওয়ান বলেন, ‘ভাষা আর শব্দের অশুদ্ধ উচ্চারণ কাপড়ের ছিদ্র ও মুখে গুটিবসন্তের দাগের মতো।’ (আল ফাখরী, আল আদাবুস সুলতানিয়্যাহ: ১/৪৫)। ইমাম জুহরী বলেন, ‘বিশুদ্ধ ভাষা আভিজাত্যপূর্ণ।’ সুতরাং বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট ভাষায় কথা বলা ও অভিবাদন জানানো মুসলিম ধর্ম বিশ্বাসের উন্নত সংস্কৃতির অংশ। হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্ম বিশ্বাসীগণও তাদের নিজ ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী নমস্কার, গুড মর্নিং ইত্যাদি বিশুদ্ধ শব্দ ব্যবহার করে তাদের অভিবাদন প্রক্রিয়া প্রকাশ করে থাকেন। এর মধ্যে জঙ্গিবাদ খুঁজে পাওয়া নিঃসন্দেহে এক বিরাট আজব ব্যাপার।
অনুসন্ধানে নামলে এর পিছনে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বেরিয়ে আসবে। পৃথিবীর সব ধর্মই তার বিধান মতে চলতে বলে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ যুগ যুগ ধরে ধর্মের বিধান মতে না চলে ধর্মকে নিজের স্বার্থে ও মতে ব্যবহার করেছে। ঠিক এমতাবস্থায় পৃথিবীতে তিন শ্রেণির মানুষ গড়ে উঠেছে। আর তারা হলো: ১. ধর্ম পালনে সর্বোচ্চ চেষ্টাকারী আস্তিক। ২. ধর্মবিহীন আস্তিক ও ৩. ধর্মহীন নাস্তিক। আর গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্ষুদ্রসংখ্যক নাস্তিক ধর্ম মানে না বলে ঘোষণা দিলেও তারা মানবতাবাদের কথা বলেন। অথচ, এ মানবতাবাদটা মূলত ধর্মেরই কথা। ধর্মবিহীন আস্তিক আর ধর্মহীন নাস্তিকদের প্রাকটিক্যাল জীবনদর্শন অনেকটা কাছাকাছি। এ দুই শ্রেণির মানুষের পরিবারে, সামাজিক আচার-আচরণে, সাহিত্যে, সংস্কৃতিতে, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক দর্শনে প্রায় একই সুর প্রতিধ্বনিত হতে দেখা যায়। নাস্তিকতার স্লােগান যেহেতু ধর্মীয় সমাজে অচল, তাই তারা ধর্মবিহীন প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর আস্তিকদের সহায়ক ও নেয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে থাকে। তারা হীন স্বার্থ উদ্ধারে নিজ আদর্শ মাটি চাপা দিয়ে ক্ষমতাসীনদের পদলেহন, চামচামি আর নির্লজ্জ দলবাজিতে লিপ্ত হয়ে পড়েন।
অবস্থা এমন হয়ে পড়ে যে, কখনও কখনও ক্ষমতাসীনগণ লজ্জা আর বেকায়দায় পড়ে যান। মজার ব্যাপার হলো, এদের নিজেদের কোনো কালচার বা সংস্কৃতি নেই। এরা যে আস্তিক সমাজে বাস করে সেই সমাজের বিভিন্ন কালচার ধার করে কখনও বিশুদ্ধ আবার কখনও অশুদ্ধ রীতিতে স্লামালিকুম, গুড মর্নিং ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে থাকেন। যার কোনো বিশুদ্ধ সাহিত্যিক বা ব্যকরণিক রূপ নেই। যেমন, অধ্যাপক জিয়া রহমান। জিয়া আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘আলো’ আর রহমানও আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘দয়ালু ও করুণাময়’। তাহলে এ নামের অর্থ দাঁড়ায়, ‘আলো করুণাময়’ কিংবা ‘করুণাময় আলো’। ইংরেজি অনুবাদ করলে হয় Light merciful or Merciful light. এখানে দুটি আরবি ও ইংরেজি শব্দ দিয়ে গঠিত বাক্যটির কোনো পূর্ণ অর্থ প্রকাশ পায় না। কারণ, এখানে আরবি ব্যকরণ ও ভাষাগত ভুল হয়েছে। তিনি যদি তার নাম ‘জিয়াউর রহমান’ রাখতেন তাহলে বাক্য সঠিক হতো। তখন এ নামের অর্থ হতো: ‘পরম করুণাময় আল্লাহর আলো।’ সুতরাং আসসালামু আলাইকুম বিশুদ্ধ ভাষায় বলতে ও শিখতে ব্যকরণগত বাধ্যবাধকতা যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি রয়েছে ধর্মীয় ও সংস্কৃতিক বাধ্যবাধকতা। যদি এ বাধ্যবাধকতা অমান্য করা হয় তাহলে জিয়া রহমানের মতো জগাখিচুড়ি মার্কা অর্থ প্রকাশ পাবে। এর দ্বারা নিরেট মূর্খতা প্রকাশ পাবে। আরবি ব্যকরণ জানা থাকলে এরকমভাবে নিজের নাম হয়তো জিয়া সাহেব রাখতেন না। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হয়েও তিনি যেমন অজ্ঞতার পরিচয় দিয়ছেন, ঠিক তেমনি সালাম এবং আল্লাহ হাফিজ নিয়ে কথা বলেও তেমন অজ্ঞতার পরিচয় দিয়ছেন। এক্ষেত্রে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, উনি যদি অজ্ঞতাবশত বলে থাকেন তাহলে শুধরে নেবেন। আর এদেশের ১৭ কোটি আস্তিকের কাছে ক্ষমা চাইবেন। আর যদি উনি নাস্তিক হয়ে থাকেন তাহলে সেটা তার ব্যাপার। কিন্তু তাই বলে ১৫ কোটি মুসলিমের ধর্মীয় অনুভূতিতে তিনি আঘাত দিতে পারেন না। এ অপরাধে তাকে যথাযথ আইনের আওতায় আনা যেতে পারে। অন্যদিকে তিনি সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে এক অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছেন কি না সেটাও কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করি।
লেখক: অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।