Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রিলিফ নয় তিস্তা নদীর খনন চাই

তিস্তার বিভিন্ন স্পটে ২৩০ কি.মি. এলাকায় মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের দুঃখ তিস্তা নদী। সারাবছর নদী ভাঙনে বিলীন হয় হাজার হাজার জনবসতি। বর্ষা মৌসুমে বন্যায় বাড়িঘর-ফসল ডুবে যায়; আর শুস্ক মৌসুমে শুকিয়ে যাওয়ায় পানির অভাবে অনাবাদি থেকে যায় হাজার হাজার একর ফসলি জমি। এ জন্যই তিস্তা নদী সুরক্ষা, কৃষি ও কৃষক বাঁচানোর দাবিতে তিস্তার দুই তীরে ২৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গতকাল রোববার ‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে হাজার হাজার মানুষ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করেন। তাদের সবার মুখে এক আওয়াজ ‘রিলিফ চাই না, তিস্তা নদীর খনন চাই’। ‘তিস্তা নদী বাঁচলে কৃষক বাঁচবে/কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে’।

ইনকিলাবের জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা জানান, তিস্তা নদীর পাড়ের বিভিন্ন পয়েন্টে মানুষ ব্যানার নিয়ে খন্ড খন্ড ভাবে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক-ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন।

রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেব পাকার মাথা সংগ্রাম কমিটির আয়োজনে পাকার মাথা থেকে পাওয়ার প্লান্ট পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার অংশজুড়ে তিস্তা নদীর পাড়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজার হাজার মানুষ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লে-কার্ড হাতে মানুষজনকে উপস্থিত হতে দেখা যায়। এ সময় বিভিন্ন বক্তারা ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি করে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়েরের দাবি জানান। তারা চীনের প্রস্তাবিত ‘তিস্তা প্রকল্প’ বাস্তবায়নে দ্রæত কাজ শুরু করার দাবি জানান।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমরা রিলিপ চাই না, তিস্তা নদী খনন চাই। মঙ্গার হাত থেকে রক্ষা করতে নদী খনন করে দুই তীর রক্ষাসহ বন্যা ও ভাঙনের হাত থেকে বাঁচাতে হবে।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি প্রফেসর নজরুল ইসলাম হক্কানী, সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান, স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ ও বাবুল আক্তার প্রমুখ।

বক্তারা আরো বলেন, তিস্তা ড্রেজিং করে কোটি মানুষের দুঃখ ঘোচানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন তিস্তার তীরবর্তী ৫টি জেলার আর্থিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে। তিস্তা তীরের মানুষের দুঃখের দিন শেষ হবে। কিন্তু ভারতের স্বার্থে একটি চক্র এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছে। তাই তিস্তা নিয়ে মহাপরিকল্পনা দ্রæত বাস্তবায়নের জন্য আমরা নদী তীরে ২৩০ কিলোমিটার জুড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছি।

কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নে ‘নদী বাঁচাও তিস্তা বাঁচাও’ সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে তিস্তা নদী পাড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় বক্তারা বলেন, সরকার তিস্তা নদীকে ড্রেজিং করে নাব্যতা বৃদ্ধিসহ এলাকার লাখ লাখ কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনের উদ্যোগ নিচ্ছে। এ ব্যাপারে চীন মেগা প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহল দিল্লির স্বার্থে চীনের প্রকল্পের বিরোধিতা করছে।

গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে তিস্তার দুইপাড়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীপাড়ে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে তিস্তা নদীর দুই পাড়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

বেলকা ইউনিয়নের শ্যামরায়ের পাঠ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন ‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদের উপজেলা আহ্বায়ক ছাদেকুল ইসলাম দুলাল, বেলকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজি, বেলকা জাপার সাবেক সভাপতি মফিদুল হক মন্ডল, আওয়ামী লীগ নেতা শাহিবুল আলম শাহীন, জাপা নেতা মোন্তাজ আলী, আনারুল ইসলাম, আব্দুর রফিক প্রমূখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমরা রিলিফ চাই না, তিস্তা নদী খনন চাই। মঙ্গার হাত থেকে রক্ষা করতে নদী খনন করে দুই তীর রক্ষাসহ বন্যা ও ভাঙনের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। তিস্তা ড্রেজিং করে কোটি মানুষের দুঃখ ঘোচানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তিস্তার তীরবর্তী ৫টি জেলার আর্থিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে। বদলে যাবে মানুষের জীবনযাত্রা। কিন্তু একটি চক্র এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছে। তাই তিস্তা নিয়ে মহাপরিকল্পনা দ্রæত বাস্তবায়নের জন্য আমরা নদী তীরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছি।

নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, ঘণ্টাব্যাপী নীলফামারীর তিস্তা তীরবর্তী এলাকার দুইধারে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়। তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেশ্বর তিস্তার জিরো পয়েন্ট থেকে তিস্তার ১৩টি স্থানে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অংশ নেন তিস্তা বাঁচাও নদী রক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।

তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের সভাপতি ও ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সংগ্রাম পরিষদের ডিমলা উপজেলা শাখার সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কোরবান আলী, নবীর উদ্দিন, অবিনাস রায়, হাফিজার রহমান প্রমূখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, তিস্তা নদী বাংলাদেশ অংশে ১১৫ কিলোমিটার প্রবাহিত। এ অংশে প্রতিবছর বন্যা আর ভাঙনে লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যা ও ভাঙনের হাত থেকে মুক্তি চান নদী তীরবর্তী মানুষ। তিস্তা নদীর সুরক্ষা, দুই তীরের বন্যা-ভাঙন রোধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিও জানান তারা। মানববন্ধনে তিস্তা নদী পুনঃখননের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

এছাড়াও নিলফামারির জলঢাকা, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, রংপুরের কাউনিয়া, গাইবান্ধার সাঘাটায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।



 

Show all comments
  • Md ismail ১০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:১৪ এএম says : 0
    জি আমরা রিলিফ চাই না নদী খখন তীর রক্ষা করে নদী শাসন করে নদী ভাঙন রোধে নদীর মানুষ দুঃখ কষ্ট দুর করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাছে আকুল আবেদন রইলো
    Total Reply(0) Reply
  • Md ismail ১০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:১৬ এএম says : 0
    জি আমরা রিলিফ চাই না নদী খখন তীর রক্ষা করে নদী শাসন করে নদী ভাঙন রোধে নদীর মানুষ দুঃখ কষ্ট দুর করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাছে আকুল আবেদন রইলো
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানববন্ধন

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ