পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
চার বছর আগে অক্টোবরের মাঝামাঝি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর বাংলাদেশ সফরটি ছিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন চীনের সহযোগিতার এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। এই সফরে বাংলাদেশের সাথে প্রায় ২৫ টি অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক সহযোগিতার সমঝোতা হয়। এতে চীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহযোগিতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। একে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীনের সহযোগিতাকে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এত বড় অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি এবং সহযোগিতা এর আগে কোনো দেশের সাথে বাংলাদেশের সাথে হয়নি। বলা যায়, সেই থেকে চীন বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে পরিচিতি পায় এবং দেশটির সহযোগিতা গতি লাভ করে। চীনের এই সহযোগিতা এখন দৃশ্যমান। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন, যোগাযোগ, টেলিযোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে চীন ব্যাপক বিনিয়োগ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছে। পদ্মাসেতু, কর্ণফুলি টানেল, পায়রায় দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে শুরু করে যোগাযোগ খাতের বিভিন্ন প্রকল্পে চীন কাজ করে যাচ্ছে। চীনের এই ব্যাপক বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যিক কর্মকান্ডে উভয় দেশই লাভবান হচ্ছে। করোনাকালে চীন যেভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে তা নজিরবিহীন। প্রায় আটশ’র মতো বাংলাদেশী পণ্য শূন্য শুল্কে প্রবেশের সুবিধা করে দিয়েছে। এছাড়া করোনা প্রতিরোধে, বিভিন্ন উপকরণ, চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ দল প্রেরণসহ চীনে উৎপাদিত ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেয়ার ঘোষণা দেয়। করোনার প্রভাবে দুর্বল হয়ে পড়া বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চীনের মতো এমন সহযোগিতামূলক মনোভাব অন্য কোনো দেশের দেখা যায়নি। ফলে বাংলাদেশের সাথে চীনের অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক এক অভূতপূর্ব অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে।
উপমহাদেশে চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র, এই ত্রয়ী শক্তির প্রভাব বিস্তার নিয়ে যে স্নায়ুযুদ্ধে’র সূচনা হয়েছে তার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বাংলাদেশ। ভৌগলিক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান এবং উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি দেশগুলোর আগ্রহ অপরিসীম। এক্ষেত্রে, বাংলাদেশ তার স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকেই নিজ অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতির স্বার্থে যেখান থেকে সুবিধা পাচ্ছে, তাই গ্রহণ করছে। কারো সাথে বৈরী সম্পর্ক নয়, প্রত্যেকের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পররাষ্ট্রীয় মূলনীতি অবলম্বন করে চলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ তার সঠিক এবং একটি ভারসাম্যমূলক অবস্থানে রয়েছে। যেখান থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে সুসম্পর্ক গড়ে তুলছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কথায়ও তার আভাস পাওয়া যায়। তিনি চীনের অর্থনৈতিক এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার কথা তুলে ধরে বলেছেন, চীনের সাথে উন্নত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার ওপর বাংলাদেশ জোর দিয়েছে। তার এ কথা থেকে স্পষ্ট, উপমহাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় চীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে এসেছে এবং তার সহযোগিতা নিতে বাংলাদেশও আগ্রহ দেখাচ্ছে। এজন্য চীনের বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে তাদের সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত কী ধরনের চাহিদা রয়েছে তা জানতে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় ৮০০ একর জমিতে চীনা ইকোনমিক জোন তৈরি করা হয়েছে। এতে চীনা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। সম্প্রতি চীনের গ্লােবাল টাইমস পত্রিকায় বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সাথে চীনের সম্পর্ক নিয়ে বলেছেন, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশির সম্পর্ক বহুদিনের। ৪৫ বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের লেনদেনে সুষম গতি বজায় রয়েছে। অর্থনীতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতে সহায়তা ক্রমাগত গভীর হচ্ছে। চীন ও বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘনিষ্ঠভাবে একে অপরের পরিপূরক এবং এক্ষেত্রে আরও সম্ভাবনা রয়েছে। পদ্মাসেতু ও কর্ণফুলি টানেলের কাজ সম্পন্ন হলে তা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের আঞ্চলিক অর্থনীতিরও বিকাশ ঘটবে। চীনা রাষ্ট্রদূত বলেছেন, বিআরআই-এর অধীনে চীন বিভিন্ন উপায়ে যেমন অগ্রাধিকারযোগ্য ঋণ, বিনিয়োগ, প্রকল্প চুক্তি ও বিনামূল্যে সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের অবকাঠামো নির্মাণে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। শুধু এসব খাতই নয়, ফাইভ জি, হাই স্পীড রেল, মহাকাশ এবং ব্লু -ইকোনোতি, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য নির্মূল, মেডিক্যাল ও স্বাস্থ্যসেবা এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে চীনের কাজ করার আগ্রহ রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক খাতে চীনের এই ভূমিকা এবং ভবিষ্যতে তার সহযোগিতার পরিধি প্রসারিত করার আগ্রহ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে প্রত্যেক উন্নয়নকামী দেশই তার নিজস্ব উন্নয়ন স্বার্থে যেখান থেকে এবং যার কাছ থেকে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পরাশক্তির দেশগুলোর মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধ কিংবা সামরিক বিষয়ক চুক্তির চেয়ে অর্থনৈতিক সুবিধাদির প্রতিই তাদের আগ্রহ বেশি। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। পরাশক্তির দেশগুলোর কাউকেই না চটিয়ে ভারসাম্যমূলক অবস্থান ধরে রেখে এবং নিজ অর্থনৈতিক স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশ যথার্থ অবস্থানে রয়েছে। শুধু চীন কেন, প্রতিবেশী অন্যদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ যার কাছ থেকেই পারস্পরিক স্বার্থের সুবিধা পাওয়া যাবে, তারও বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হওয়াকে স্বাগত জানাবে। অন্যের দ্বন্দ্বের মধ্যে কিংবা স্নায়ুযুদ্ধে শামিল হওয়ার অভিপ্রায় বাংলাদেশের কখনোই ছিল না, এখনও নেই। বাংলাদেশের লক্ষ্যই সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।