Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্র এখন চীন-বাংলাদেশের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করতে চাইছে গ্লোবাল টাইমসকে চীনা রাষ্ট্রদূত

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৫৭ পিএম | আপডেট : ১২:০৮ এএম, ১ নভেম্বর, ২০২০

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তার ভাষায়, ‘স্নায়ুযুদ্ধ যুগের মানসিকতা’ পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছেন। তার মূল্যায়ন: যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তাদের চীনবিরোধী ‘ইন্দোপ্যাসিফিক স্ট্রেটেজি’তে কাছে পেতে চাইছে।
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে একটা বিরোধ সৃষ্টি করতে চাইছে। কিন্তু এই বিরোধের মূলে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানসিকতা। কারণ, তারা চীনের দ্রুত বর্ধনশীল উন্নয়ন এবং শান্তিপূর্ণ উত্থানকে গ্রহণ করতে রাজি নয়। গ্লোবাল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি. জিমিং এসব কথা বলেন।

ঢাকার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশের পক্ষে এর আগে একটা জোট নিরপেক্ষ মনোভাব পরিষ্কার করা হয়েছে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে বাংলাদেশের সমর্থনকে কথিতমতে ভারত মার্কিন দৃষ্টিকোণ থেকে সুনজরে দেখা হয় না। আবার যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত (কোয়াড) সমর্থিত ইন্দোপ্যাসিফিক কৌশলে বাংলাদেশের সমর্থনকে চীন সুনজরে দেখে না।

অভিজ্ঞমহলের মতে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এর থেকেও উত্তপ্ত এবং পাল্টাপাল্টি বক্তৃতা বিবৃতি একদম ডালভাত। এটা তেমন কোনো ঘটনাই নয়।

কিন্তু এবারে একটা নতুন ব্যাপার আছে। বিষয়টির ভিন্নমাত্রা আছে। কারণ এই প্রথম সরাসরি বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সম্পর্ক নিয়ে মিডিয়া বেশ সরব হওয়ার পর বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঢাকার কোনো সভা বা সাংবাদিক সম্মেলনে নয়, রীতিমতো একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার দিলেন। এবং তাতে পরোক্ষ অথচ দৃঢ়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুঁশিয়ারিই উচ্চারণ করা হলো।

‘কূটনীতির ফ্রন্টে এটা অবশ্যই একটি লক্ষণীয় ডেভলপমেন্ট। কারণ গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত চীনের রাষ্ট্রদূতদের দৃষ্টিভঙ্গীতে সন্দেহাতীতভাবে তাদের বিদেশ নীতির সুচিন্তিত প্রতিফলন ঘটে থাকে।’ মন্তব্য করেছেন একজন বিদেশ নীতি পর্যবেক্ষক। তার কথায়- ‘এখন এটা দেখার বিষয় যে, ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে ঠিক কী প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়।’

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু তার চীনবিরোধী প্রচারণা জোরদার করতে বাংলাদেশকে তোষামোদ করতে নেমে পড়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত গ্লোবাল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শুক্রবার বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে একটা বিরোধ সৃষ্টি করতে চাইছে। কিন্তু এই বিরোধের মূলে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানসিকতা। কারণ, তারা চীনের দ্রুত বর্ধনশীল উন্নয়ন এবং শান্তিপূর্ণ উত্থানকে গ্রহণ করতে রাজি নয়।

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং আরো বলেছেন, চলতি শতাব্দীতে চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে এবং বেশকিছু ক্ষেত্রে চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনবরত বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করে চলেছে। রাষ্ট্রদূতের কথায়, এই সমস্যার মূলে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানসিকতা।

কারণ তারা চীনের দ্রুত বর্ধনশীল উন্নয়ন এবং শান্তিপূর্ণ উত্থানকে কখনো মেনে নিতে রাজি নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকদের মধ্যে কতিপয় এমনও রয়েছেন, তারা ঠা-া যুদ্ধ নতুন করে শুরু করতে চান এবং সে কারণে চীনের উন্নয়ন প্রক্রিয়া যাতে বাধাগ্রস্ত হয়, সেজন্য তারা অন্যান্য দেশের সঙ্গে জোট বেঁধে চীন বিরোধী শিবিরকে জোরালো করতে চাইছে।

গ্লোবাল টাইমস রিপোর্টে আরো বলা হয়, গত ২৯শে জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বাংলাদেশি পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে একটি টেলিফোন আলোচনা করেছেন। গত সেপ্টেম্বরে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন টেলিফোনে আর এতে পরিষ্কার যে, তারা মার্কিন–বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব দিচ্ছে।
মধ্য অক্টোবরে মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগান বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং তার সফরের উদ্দেশ্য ছিল, তাদের প্রণীত ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বা এশিয়া- প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলে বাংলাদেশকে তাদের পাশে পাওয়া।

ওই সাক্ষাৎকারে চীনের রাষ্ট্রদূত মি. লি আরো উল্লেখ করেছেন যে, এসব বৈঠকের মধ্য দিয়ে এটাই ফুটে উঠেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নানা পদক্ষেপ নেয়ার কাজ অব্যাহত রেখেছে।
রাষ্ট্রদূত সাক্ষাৎকারে বলেন- আমি এটা গুরুত্ব দিয়ে বলতে চাই যে, চীনের এই প্রজ্ঞা এবং সামর্থ্য রয়েছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত তথাকথিত ‘থুসিডিডস ফাঁদে’ পা দেবে না এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কতিপয় চীন বিরোধী রাজনীতিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, তারা যেন সেকেলে হয়ে পড়া ঠান্ডা যুদ্ধের মানসিকতা এবং ‘জিরো সাম গেম’ থেকে বেরিয়ে আসেন।

উল্লেখ্য, থুসিডিডস ছিলেন প্রাচীন এথেন্সের সামরিক জেনারেল। তিনি তত্ত্ব দিয়েছিলেন যে, এথেন্সের উত্থানকে সুনজরে দেখতে পারেনি তৎকালীন শক্তিধর স্পার্টা। এথেন্সকে নিয়ে তাদের অজানা ভীতিই যুদ্ধকে অনিবার্য করেছিল। ২০১২ সালে হাভার্ডের প্রফেসর গ্রাহাম টি এলিসন এক নিবন্ধে ‘উদীয়মান পরাশক্তির প্রতি বিদ্যমান পরাশক্তির ভীতি’ অর্থাৎ চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ভীতিকে বর্ননা করতে গিয়ে ‘থুসিডিডিয় ফাঁদ’ উল্লেখ করেছিলেন।

ওই সাক্ষাৎকারে চীনের রাষ্ট্রদূত অবশ্য আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন। তার ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত সেদিকেই ঘুরে দাঁড়াবে, যেখানে চীনকে তারা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারবে এবং চীনমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার মতো লোকেরাই জয়ী হবেন। দুই দেশের বিরাজমান সম্পর্ককে তারা সমন্বয়, সহযোগিতা, স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক উন্নয়নে সক্রিয় অবদান রাখার মধ্যেই সার্থকতা দেখতে পাবে।

 



 

Show all comments
  • খাইরুল ইসলাম ৩১ অক্টোবর, ২০২০, ২:১২ পিএম says : 0
    যুক্তরাষ্ট্র কখনো কারো ভালো চায় না
    Total Reply(0) Reply
  • তানবীর ৩১ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৩ পিএম says : 0
    উভয় দেশকে সতর্ক থাকতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • রাসেল ৩১ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৩ পিএম says : 0
    যুক্তরাষ্ট্রে মনটা চাইবে সেটাই তো স্বাভাবিক
    Total Reply(0) Reply
  • পাবেল ৩১ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৪ পিএম says : 0
    বিশ্ববাসীর উচিত ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে একঘরে করে রাখা
    Total Reply(0) Reply
  • ফিরোজ খান ৩১ অক্টোবর, ২০২০, ২:১৭ পিএম says : 0
    চীনের সাথে সম্পর্ক রেখে বাংলাদেশ কে নিজেদের উন্নতি করতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • মাহমুদ ৩১ অক্টোবর, ২০২০, ৫:০২ পিএম says : 0
    এসব করে আর কোন লাভ হবে না
    Total Reply(0) Reply
  • আসাদুজ্জামান ৩১ অক্টোবর, ২০২০, ৬:৪২ পিএম says : 0
    নিরপেক্ষতা আর সবই বন্ধু, পররাষ্ট্র নীতি এটাই কাম্য।
    Total Reply(0) Reply
  • md shohidul islam ৩১ অক্টোবর, ২০২০, ৬:৫৫ পিএম says : 0
    সরকারকে এখন চিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত সবার সাথে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হবে কাউকেই নাখোশ করা যাবেনা। আর যদি কোন একজনকে খুশি করতে গিয়ে বাকি দুজনের স্বার্থের হানি ঘটে তাহলে এই দেশের পরিস্থিতি হবে সিরিয়ার মতো একটি ত্রিমুখী বা বহুমুখী যুদ্ধক্ষেত্র। অতএব সংশ্লিষ্ট সকলকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ