Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কমলনগরে উদ্বোধনের আগেই ভাঙতে হলো বিদ্যালয় ভবন

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০২০, ৯:১৬ এএম

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন অব্যাহত রয়েছে । ভাঙনের কবলে পড়ে পাটারীরহাট ইউনিয়নের রাস্তাঘাট, ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। এরই মধ্যে নদীতীরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা লুধুয়া ফলকন ফয়জুন্নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন। আর নির্মাণের তিন মাস পরই তা ভাঙনের মুখে পড়ায় ভবনটি এখন ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হচ্ছে।

জানা যায়, ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছিল গত জুলাই মাসে। ভবনটিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান তো দূরের কথা, এখনও সেটি উদ্বোধনই করতে পারেনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নদীতীরবর্তী হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ওই স্থানে ভবনটি নির্মাণ করা নিয়ে মতবিরোধ ছিল আগে থেকেই।


স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরুতে বিদ্যালয়টির সেমিপাকা ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। মেসার্স নেহাল ট্রেডার্স ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বরাদ্দে গত বছরের ১৪ জুলাই সাত কক্ষবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ পায়। কিন্তু নদীভাঙন কাছাকাছি চলে আসায় নকশা পরিবর্তন করে সাত কক্ষের স্থলে পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের মাধ্যমে তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত ২১ জুলাই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভবনটি বুঝিয়ে দেয়।

সরেজমিন দেখা যায়, ভাঙতে ভাঙতে নদী এখন স্কুল ভবনের মাত্র ৪০ মিটারের মধ্যে চলে এসেছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের নিয়োজিত শ্রমিকরা সদ্যনির্মিত ভবনটি ভেঙে ফেলার কাজ করছেন।

স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুম শেষ হলেও গত এক সপ্তাহ ধরে ওই এলাকায় মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন চলছে। সাত দিনের ভাঙনে প্রায় ১০০ মিটার এলাকা নদীতে চলে যাওয়ায় সবার মধ্যে এখন ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে।

তারা জানান, নদীর কাছাকাছি ওই স্থানে ভবনটি নির্মাণের বিরোধিতা করেছেন তারা শুরু থেকেই। কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর তা বিবেচনায় না নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ওই স্থানে ভবনটি নির্মাণ করেছে। এতে করে ভবনটির নির্মাণ ব্যয় ২৫ লাখ টাকার প্রায় পুরোটাই জলে গেছে।

বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও স্থানীয় পাটারীরহাট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, ২০১৬ সালের শেষের দিকে লুধুয়া ফলকন এলাকায় নদীভাঙনের মুখে পড়ে বিদ্যালয়টি বর্তমান জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু মাত্র চার বছর পর সেটি আবারও ভাঙনের মুখে পড়েছে। এতে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গত তিন দিন ধরে ভবনটি ভেঙে মালপত্র স্থানীয় ইসলামগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে রাখা হচ্ছে।

সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জানান, ভাঙন খুব কাছাকাছি চলে আসায় উপজেলা শিক্ষা কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে ভবনটি ভেঙে সরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের জন্য জায়গা নির্ধারণের প্রক্রিয়া চলছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কমলনগর উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল আনোয়ার বলেন, 'ভবন নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানোর সময় বিদ্যালয় থেকে নদীর দূরত্ব অনেক ছিল। কিন্তু গত এক বছর ওই এলাকায় ভাঙনের ভয়াবহতা ছিল খুবই বেশি। এ কারণে নবনির্মিত এ ভবনটি এখন ভেঙে সরিয়ে ফেলতে হচ্ছে।'

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানান, ভাঙন ঠেকাতে বিদ্যালয় সংলগ্ন মেঘনা নদীর তীরে আপদকালীন বরাদ্দের আওতায় বালুভর্তি জিও টিউব ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছিল। কিন্তু তীব্র ভাঙনের মুখে তা নদীতে চলে যাওয়ায় ভবনটি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী ভাঙ্গন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ