Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মন্ত্রীকেও পরোয়া করছে না গাড়ি চালকরা

প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার মন্ত্রণালয়ের কর্মকা- সরেজমিন গিয়ে তদারকি করেন। দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়ান। তার এই দৃশ্যমান কার্যক্রম প্রশংসিত হয়েছে। সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তাকে প্রায়ই রাস্তায় দেখা যায়। নিজে গাড়ির কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করেন। ঠিক না থাকলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এ ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার অভিযান কার্যক্রমে মন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে যুক্ত হন। সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী শেরেবাংলা নগরের প্রধান সড়কে অভিযান চলাকালে মন্ত্রী সেখানে উপস্থিত হন। নিজে রাস্তায় নেমে সিএনজি, বাস ও প্রাইভেটকারের কাগজপত্র চেক, ভাড়ার চার্ট এবং সিএনজিতে মিটার চালু আছে কিনা, তা পরীক্ষা করা শুরু করেন। এ সময় আজিমপুর-মিরপুর রুটে চলাচলকারী একটি বাসকে থামার জন্য তিনি সংকেত দিলে বাসের ড্রাইভার তাতে সাড়া না দিয়ে দ্রুতগতিতে চলে যায়। পুলিশ সদস্যরাও বাসটি থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। মন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে বাসের চলে যাওয়ার ঘটনায় এক ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে গাড়ি চালকের চলে যাওয়ার ঘটনায় প্রতীয়মান হয়, সড়ক পরিবহন কতটা বিশৃঙ্খল, নৈরাজ্যকর এবং চালকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এদের নিয়ন্ত্রণে যেন আর কোনো শক্তি নেই।
বাংলাদেশের মতো সড়ক-মহাসড়কে নিয়ম-নীতিহীন কর্মকা- ও চালকদের বেপরোয়া মনোভাব বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না। এর ফলে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ রাস্তা-ঘাটে প্রাণ হারাচ্ছে। প্রাণহানির এ ঘটনাকে ইতোমধ্যে হত্যাকা- হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। হত্যাকা- তো বটেই। কারণ যেখানে শতকরা ৯০ ভাগ ড্রাইভারের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকে না, সড়কের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই, অবাধে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করে, যেমন ইচ্ছা তেমন গাড়ি চালাতে বাধা নেই এবং পরিবহন খাতের নেতা ও মন্ত্রীর প্রশ্রয় পাওয়া যায়, সেখানে দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানিকে কোনোভাবেই শুধু দুর্ঘটনা বলা যায় না। এটা জেনে-বুঝে হত্যা করারই শামিল। বেপরোয়া গাড়ি চালকদের এ ধরনের দায়মুক্তির সংস্কৃতি যদি চলতে থাকে, তবে সড়ক ও মহাসড়কে কোনোদিনই শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী মাঝে মাঝে যতই সরেজমিন নামুন না কেন, তাতে এ সংস্কৃতি বন্ধ হবে না। এর জন্য প্রয়োজন পুরো পরিবহন ব্যবস্থাকে সমন্বয়ের মাধ্যমে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ। এ কথা কে না জানে, একটি দেশের সভ্যতা ও নাগরিক শৃংখলার অন্যতম প্রতীক তার পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। এর চিত্র ফুটে উঠে যানবাহনের বাহ্যিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি চালক, কন্ডাক্টরদের দক্ষতা-যোগ্যতা ও আচার-আচরণের মধ্যে। আমরা যদি রাজধানীর যানবাহনের দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যাবে, এ সবের কোনো বালাই নেই। গণপরিবহনগুলোর সৌন্দর্য বলতে কিছু নেই। দেখলেই বোঝা যায়, এগুলো অচল এবং অযোগ্য। তার চেয়েও বড় কথা, এগুলোর অধিকাংশই চালাচ্ছে অদক্ষ ও বেপরোয়া মনোভাবসম্পন্ন চালক ও কন্ডাক্টররা। তাদের বেশ-ভুষা এবং কথা-বার্তায় ভদ্রতার লেশমাত্র থাকে না। একটি দেশের রাজধানীর গণপরিবহনের চিত্র এরকম হতে পারে? অথচ এভাবেই যুগের পর যুগ চলছে। পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ নেই। এর মূল কারণ, এসব দেখভালের দায়িত্ব যাদের, তাদের মধ্যেই গলদ রয়েছে এবং তা সংশোধনের কোনো সদিচ্ছা নেই। অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সদস্য রয়েছে, তাদের একটি শ্রেণী সড়ক ও মহাসড়কে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কখনোই আন্তরিক নয়। পরিবহন খাতটি তাদের একটি স্থায়ী উপার্জনের খাতে পরিণত হয়েছে। বলা যায়, যে সব আনফিট পরিবহন ও বেপরোয়া চালক সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করছে, এসব পরিবহনই তাদের অবৈধ আয়ের অন্যতম উৎস। যদি তা না হতো, তবে এগুলো কোনোভাবেই চলাচল করতে পারত না। অদক্ষ ও বেপরোয়া চালকদের বড় গার্ডিয়ান হয়ে আছেন একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী। তিনি তাদের হয়ে বিভিন্ন সময়ে সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন এবং রাখছেন। বেপরোয়া চালকদের ঘাতক বলা যাবে না, দুর্ঘটনায় কারো হাত নেই, সড়কের সতর্কীকরণ চিহ্ন না দেখে গরু-ছাগল চিনলেই হবে এমনসব বক্তব্যসহ আইনে চালকদের শাস্তি কমানোর পক্ষে তার জোরালো অবস্থান বেপরোয়া চালকদের এক ধরনের দায়মুক্তি দিয়ে দিয়েছে। এর ফলে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। এমনকি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীকেও থোরাই কেয়ার করার মতো সাহস দেখাচ্ছে।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আছে, বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, সিএনজির মিটারে চলার নিয়ম করা হয়েছে, তারপরও এ সব কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না। আইন আছে অথচ তা মানা হচ্ছে না, এমন নজির বিশ্বের কোথাও আছে কিনা আমাদের জানা নেই। তাহলে এ আইন করার অর্থ কি? আমরা যদি সঠিক ও স্বাভাবিকভাবে চলাচলের আইনটুকুই না মানি বা প্রয়োগ না করি, তবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে কিভাবে? সড়ক-মহাসড়কে আনফিট গাড়ির নৈরাজ্য ও বেপরোয়া চালকদের প্রতাপ কি সারাজীবনই থেকে যাবে? খাতটি কি আইনের ঊর্ধ্বেই রয়ে যাবে? আমরা মনে করি, পরিবহন খাতে এই নৈরাজ্য কোনোভাবেই চলতে পারে না এবং চলতে দেয়া যায় না। সভ্যতাকে তুলে ধরতে হলে, এ পরিস্থিতির অবসান ঘটাতেই হবে। কেবল আইন করলেই হবে না, তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। যারা প্রয়োগ করবেন, তাদের সচেতনতা ও সদিচ্ছা সবচেয়ে বেশি জরুরি। টুপাইস কামানোর জন্য এবং কারো কারো রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য, এত বড় বিশৃঙ্খলা ও অসভ্যতা চলতে দেয়া কোনোভাবেই উচিত নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মন্ত্রীকেও পরোয়া করছে না গাড়ি চালকরা
আরও পড়ুন