পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকায় কর্মরত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে ‘স্মার্ট সিটি’ রূপান্তরে আর্থিক সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন। গত ২০ অক্টোবর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) মেয়রের সঙ্গে দেখা করে তিনি এ প্রস্তাব দেন। ২১ অক্টোবর একজন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তিনি বাংলাদেশের কৃষিতে সহায়তার প্রস্তাবও দেন। হঠাৎ করে ভারতের এ প্রস্তাবের রহস্য কী? রহস্য হলো- চীন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) স্মার্ট সিটি রূপান্তরের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। আর তিস্তা নদী খননের মাধ্যমে কৃষিতে বিপ্লব ঘটানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ভারতের গণমাধ্যমে ‘এমন খবর’ প্রচারের পর পাল্টা উদ্যোগ হিসেবে ভারত ডিএসসিসিকে স্মার্ট সিটি এবং বাংলাদেশের কৃষকদের ‘কৃষি সহায়তা’র প্রস্তাব দেয়। ভারতের এ প্রস্তাবের যুতসই জবাব ‘আপন চরকায় তেল দাও’ প্রবাদটি হতে পারে। কারণ ভারতের অনেক শহর বসবাসের অনুপযোগী দৈন্যদশায় রয়েছে। নিজের ভাঙাঘর মেরামত না করে অন্যের বিল্ডিং তুলে দেয়া হাস্যকর।
ভারতের কোটি কোটি কৃষক বর্তমান কী অবস্থায়? অভাবের কারণে সে দেশে প্রতিবছর অনেক কৃষক আত্মহত্যা করেন। আর ভারতের বিভিন্ন শহর ও অর্থনীতি? সংস্কার ও পরিচ্ছন্নতার অভাবে দেশটির বহু শহর পরিত্যাক্ত হওয়ার উপকৃম। এমনকি নয়াদিল্লি প্রায়ই বিশ্বের এক নম্বর দূষিত শহরের তালিকায় উঠছে। নিজ দেশের শহরগুলোকে স্মার্ট সিটি না করে অন্য দেশের শহর স্মার্ট করার প্রস্তাব হাস্যকর।
গত সপ্তাহে আইএমএফের পূর্বাভাস ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয় ‘বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি চলতি বছরে ভারতকে ছাড়িয়ে যেতে পারে’। বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবিলায় মোদি সরকারের ‘লেজেগোবরে’ অবস্থা। বিশ্বের শীর্ষ আক্রান্ত ও মৃত্যুদেশগুলোর তালিকায় ভারতের নাম উঠেছে। করোনার কারণে দেশটির অর্থনৈতিক দূরবস্থার চিত্র সে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে উঠে আসছে। দেশটির বুদ্ধিজীবীরাও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কঠোর সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ গত এক দশকে অনেক এগিয়ে গেছে। সামাজিক, কৃষি, শিল্প, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন সবকিছুতেই সাফল্য দেখিয়েছে।
বিশ্বক্ষুধা সূচক থেকে নারী-পুরুষ সমতায় ভারতকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। প্রতি হাজারে ভারতে শিশু মৃত্যু হার ৮৮ জন; অথচ বাংলাদেশ এ হার ৮৪ জন। বাংলাদেশে শতকরা ৩৩ জন শিশু অপুষ্টিতে ভোগে; ভারতে এ হার ৩৬ জন। ভারতীয়দের গড় আয়ু ৬৯ বছর; বাংলাদেশে গড় আয়ু ৭২ বছর। বাংলাদেশে ৯৮ শতাংশ বাড়িতে টয়লেট আছে; ভারতে রয়েছে ৯৭ শতাংশ। বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ বিদ্যালয়ে রয়েছে টয়লেট সুবিধা; ভারতে রয়েছে ৭৩ শতাংশ বিদ্যালয়ে টয়লেট রয়েছে। স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং শ্রমের জোগানে বাংলাদেশের মেয়েরা ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে। বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ; ভারতে বেকারত্বের হার দ্বিগুণ ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রতিটি সূচকে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে।
বাংলাদেশের উন্নয়নে চীন, জাপানের বিনিয়োগে অনেক মেগা প্রকল্প এগিয়ে চলছে। দেশের অভ্যন্তরেও নতুন নতুন বিনিয়োগকারী সৃষ্টি হয়েছে। গার্মেন্টস পণ্যের পাশাপশি ওধুষসহ অনেক পণ্য আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে ভালো বাজার পেয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে টক্কর দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে। রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। বাংলাদেশ নিজের যখন সামর্থ্যবান সেখানে ভারত-ঢাকা শহরকে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তরের সহায়তার প্রস্তাব হাস্যকর!
নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ সফর করেন। সে সময় দুই দেশের মধ্যে ৩৩টি চুক্তি ও স্মারক সই হয়। কিন্তু তিস্তা চুক্তি হয়নি। যুগের পর যুগ ধরে তিস্তা চুক্তি ঝুলিয়ে রেখে ভারত গত বছর হঠাৎ করে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে ফেনী নদীর পানি ত্রিপুরায় নিয়ে যায়। বাংলাদেশের যে সব প্রকল্পে ভারত জড়িত সে প্রকল্পগুলোর থমকে রয়েছে। আশুগঞ্জ-গড়খা-আখাউড়া ফোর লেন, গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া-নড়াইল-যশোর-বেনাপোল সড়ক, খুলনা-মংলা রেললাইন, বাড়াইয়ার হাট-সাবরাং মহাসড়ক, বিবির বাজার-সুয়াখালি মহাসড়ক উন্নয়নে ভারত সম্পৃক্ত। প্রতিটি প্রকল্পে নেমে এসেছে স্থবিরতা। অথচ চীন ও জাপানের সহায়তায় যে সব মেগা প্রকল্প শুরু হয়েছে সেগুলোর কাজ করোনার মধ্যেও এগিয়ে চলছে।
২০২০ সালের ইনস্টিটিউট ফর ম্যানেজমেন্ট ডেভলপমেন্ট প্রকাশিত স্মার্ট সিটির সূচকে দেখা যায় বিশ্বে ১০৯টি স্মার্ট সিটি রয়েছে। সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি ফর টেকনোলজি অ্যান্ড ডিজাইন (এসইউটিডি) এর জরিপের ওই তালিকার শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর সিটি, হেলসিংকি, জুরিখ। তালিকায় হো চি মিন, ওসাকা, টোকিও, সাংহাই, বেইজিং, ব্যাংকক, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদের নাম রয়েছে। চীন অর্থনৈতিকভাবে প্রায় আমেরিকার সমপর্যায়ে চলে গেছে। ফলে দেশটি বিশ্বের দেশে দেশে উন্নয়ন সহযোগী হচ্ছে। বাংলাদেশেও তাই। সেই চীনকে ঠেকাতে বাংলাদেশকে বেছে নিচ্ছে ভারত! ভারতের কলকাতাসহ বহু শহর এখনো অপরিচ্ছন্ন নোংরা। ওই শহরগুলোকে স্মার্ট সিটি করছে না কেন?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।