Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাগর্নো-কারাবাখ যুদ্ধে মারা গেছে পাঁচ হাজার মানুষ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

বতর্কিত নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে আর্মেনিয়া আর আজারবাইজানের মধ্যে হওয়া যুদ্ধে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ মারা গেছে বলে মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান দুই পক্ষ যে পরিমাণ হতাহতের কথা জানিয়েছে, তার চেয়ে মৃত্যুর এই সংখ্যাটি অনেক বেশি। পুতিন বলেছেন, তিনি প্রতিদিন একাধিকবার দুই পক্ষের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং এই যুদ্ধে কোন এক পক্ষের সমর্থন করবেন না। তিনি জানিয়েছেন, এই যুদ্ধে আজারবাইজানকে সমর্থন করা তুরস্কের সাথে ভিন্নমত পোষণ করে মস্কো। নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও আহŸান জানিয়েছেন মি. পুতিন।
নাগর্নো-কারাবাখে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধবিরতির সমঝোতায় পৌঁছানো হলেও শেষপর্যন্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়নি। আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান দুই দেশ একে অপরকে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করার জন্য দোষারোপ করেছে।
পুতিন কী বলেছেন?
আর্মেনিয়ায় রাশিয়ার সেনা ঘাঁটি রয়েছে, ওদিকে আজারবাইজানের সাথেও রাশিয়ার সম্পর্ক ভাল। টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, দুই পক্ষেরই প্রচুর পরিমাণ হতাহত হয়েছে। উভয় পক্ষেই দুই হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। ভাষণে মি. পুতিন জানান যে নিহতের সংখ্যা শিগগিরই পাঁচ হাজার স্পর্শ করতে যাচ্ছে। দুই পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো সংখ্যার চেয়ে মি. পুতিনের জানানো নিহতের সংখ্যা অনেক বেশি। আনুষ্ঠানিকভাবে পাওয়া সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, নিহতের সংখ্যা ছিল এক হাজারের কম।
নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ঐ অঞ্চলে ৮৭৪ জন সেনাসদস্য এবং ৩৭ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। আজারবাইজানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, ৬১ জন আজেরী বেসামরিক নাগরিক মারা গেছেন। কিন্তু সেনাবাহিনীর কতজন মারা গেছেন, সেবিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
পুতিন জানিয়েছেন, এ ইস্যু নিয়ে তিনি আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। আমি প্রতিদিন একাধিকবার তাদের সাথে ফোনে কথা বলি- বলেন পুতিন। তিনি জানিয়েছেন, এ যুদ্ধে তুরস্কের অবস্থানের সাথে ভিন্নমত পোষণ করেন তিনি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকেও নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে ভ‚মিকা রাখার আহŸান জানিয়েছেন তিনি।
তুরস্ক জানিয়েছে, আজারবাইজান চাইলে এ যুদ্ধে আজেরীদের সেনা সহায়তা দেবে তুরস্ক। শুক্রবার ওয়াশিংটনে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট মন্ত্রী মাইক পম্পেওর সাথে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
নাগর্নো-কারাবাখের সবশেষ খবর কী?
গত সপ্তাহে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির সমঝোতা হলেও দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ অব্যাহত ছিল এবং শত শত মানুষ মারা গেছে। বৃহস্পতিবারও বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ হওয়ার খবর জানানো হয়েছে আজারবাইজানের পক্ষ থেকে। তারা অভিযোগ করেছে যে, আর্মেনিয়া আজারবাইজান লক্ষ্য করে তিনটি ব্যলিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করেছে। আর্মেনিয়া ঐ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অন্যদিকে আর্মেনিয়াও একাধিক এলাকায় গোলাগুলির খবর প্রকাশ করেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মার্তুনি গ্রাম ও তার আশেপাশের অঞ্চলে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ পর্যায়ে কোনো কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব নয়।
যে কারণে এই অঞ্চল নিয়ে বিরোধ
পূর্ব ইউরোপে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলা সংঘাত পূর্ণ এলাকার নাম নাগর্নো-কারাবাখ। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবার পর থেকে আর্মেনিয়া আর আজারবাইজানের মধ্যে দ্ব›দ্ব চলছে বিতর্কিত এ এলাকা কার তা নিয়ে। দুই প্রতিবেশী দেশ একে অপরের চরম শত্রæতে পরিণত হয়েছে এ নাগর্নো কারাবাখ ভ‚খÐকে কেন্দ্র করে। আর্মেনীয়দের জন্য এ এলাকা তাদের প্রাচীন খ্রিস্টীয় সংস্কৃতির শেষ ধারক হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ। আর আজেরীদের জন্য কারাবাখ মুসলিম সংস্কৃতির একটা প্রাণকেন্দ্র, তাদের ঐতিহ্যবাহী মুসলিম কবি ও সঙ্গীতজ্ঞদের জন্মস্থান।
সোভিয়েত সাম্রাজ্য যখন ১৯৮০র দশকের শেষ দিকে ভেঙে পড়তে শুরু করে, তখন নাগর্নো-কারাবাখের আঞ্চলিক পার্লামেন্ট আর্মেনিয়ার অংশ হিসাবে থাকার পক্ষে ভোট দেয়। এর জেরে শুরু হয় যুদ্ধ। মারা যায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। রাশিয়া তখন একটা যুদ্ধবিরতি করার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেছিল। সেটা হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। কিন্তু যুদ্ধবিরতি হলেও কখনও দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কোন শান্তিচুক্তি হয়নি। ফলে বিতর্কিত এ ছিটমহল সরকারিভাবে আজারবাইজান ভ‚-খÐের অংশ হিসাবে থেকে গেলেও, বিচ্ছিন্নতকামী জাতিগত আর্মেনীয়রা কারাবাখ এবং আশেপাশের সংযুক্ত আরও সাতটি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল
৪,৪০০ বর্গ কিলোমিটার (১,৭০০ বর্গ মাইল) আয়তনের একটি পর্বতাঞ্চল। ঐতিহাসিকভাবে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আর্মেনিয়ান এবং মুসলিম তুর্কদের আবাসস্থল। সোভিয়েত আমলে আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পায়। আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত, কিন্তু জনসংখ্যার অধিকাংশই জাতিগত আর্মেনিয়ান। ১৯৮৮-৯৪ সালের যুদ্ধে প্রায় ১০ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয় এবং প্রায় ৩০ হাজার মানুষ মারা যায়। ১৯৯০ এর যুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী আজারবাইজানের কাছের ছিটমহলের কাছে কিছু জায়গা দখল করে। ১৯৯৪ সালের যুদ্ধবিরতির পর থেকে অনেকটাই অচল অবস্থা বিরাজ করছিল। তুরস্ক প্রকাশ্যেই আজারবাইজানকে সমর্থন দিচ্ছে। আর্মেনিয়ায় রাশিয়ার সেনা ঘাঁটি রয়েছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আজারবাইজান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ