পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দীর্ঘ ৪ বছর পর সিংহাসনচ্যুত হলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া। ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার’ এ প্রবাদতুল্য হয়নি তার বিদায়। নত মস্তিষ্কে, বিব্রত মুখেই সিলেট ত্যাগ করছেন তিনি। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ ঘটনা সামাল দিতে না দিতেই বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান নির্যাতন ও হত্যা ঘটনার সমালোচনার মুখে পড়ে বদলি হতে হলো তাকে।
এদিকে, এসআই আকবর পালাতে সহায়তাকারী শনাক্ত পুলিশ সদর দফতরের গঠিত ৩ সদস্যের টিম সিলেটে তদন্ত শেষে ঢাকায় ফিরে গেছেন। আগামী সোমবার প্রতিবেদন দাখিল করবে কমিটি। বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্ত ইনচার্জ এস আই আকবরের ছোট ভাই আরিফকে আটক করেছে র্যাব। আরিফ বিভিন্ন অনলাইন টিভিতে আকবরের পক্ষে সাফাই বক্তব্য দিয়ে নিজকে ফোকাস করেছিল।
অপরদিকে, ফাঁড়ি অভ্যন্তরে নির্যাতনের ঘটনার প্রমাণ মুছতে আকবরকে সহায়তাকারী এক স্থানীয় সংবাদকর্মীর ভ‚মিকা প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া ভোতা অস্ত্রের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে রায়হানের এমন তথ্য উঠে এসেছে ২ দফা ময়নাতদন্ত রিপোর্টে। রায়হান হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই’র কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাত করেছেন, রায়হান পরিবারের সদস্যসহ এলাকাবাসী। সাক্ষাতকালে পিবিআই এর পুলিশ সুপার এস এম খায়রুজ্জামান তাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, দ্রতই ভালো সংবাদ দিতে পারবেন তাদের।
পুলিশ হেডকোয়াটার্স তদন্ত টিমের প্রতিবেদন দাখিল আগামী সোমবার : রায়হান নির্যাতন ও হত্যার প্রধান হোতা এস আই আকবর রহস্যজনকভাবে পালিয়ে যায়। এ নিয়ে চাঞ্চল্য দেখা দেয়া সর্বত্র। এরই প্রেক্ষিতে পালাতে সহায়তাকারী শনাক্তে একটি তদন্ত টিম গঠন করে পুলিশ সদর দফতর। গত মঙ্গলবার এআইজি মুহাম্মদ আয়ুবের নেতৃত্বে পুলিশ সদর দফতর গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা সিলেটে পৌঁছে রাত ৮টার দিকে নিহত রায়হানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পরদিন বুধবার দুপুর পর্যন্ত সদর দফতরের তদন্ত কমিটি এসএমপিতে অবস্থান করে
তদন্ত কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন। এরপর ওই দিনই রওনা হন ঢাকা অভিমুখে। তদন্ত প্রতিবেদন আগামী সোমবার দাখিল করা হবে বলেও গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন এ টিমের প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এআইজি- ক্রাইম অ্যানালাইসিস বিভিাগ) মুহাম্মদ আয়ুব।
র্যাবের হাতে আটক পলাতক এসআই আকবরের ছোট ভাই আরিফ : বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্তকৃত সাবেক ইনচার্জ পলাতক এস আই আকবর হোসেন ভ‚ঁইয়ার ছোট ভাই আরিফ হোসেন ভ‚ঁইয়াকে আটক করেছে র্যাব। গত বুধবার রাত ৯টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার বেড়তলা বগৈর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। আরিফ ভ‚ঁইয়া বিভিন্ন অনলাইন টিভিতে তার ভাইয়ের পক্ষে সাফাই গেয়ে মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিলো। সে বলেছিলো, তার ভাই খুবই সৎ। এ ধরনের হত্যাকাÐের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার প্রশ্নই ওঠে না। বিগত ১ বছর থেকে সে ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালন করেছে, কেউ তাকে সরাতে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এ ঘটনা সাজিয়েছে যা যড়যন্ত্র। সে অভিযোগ করেছিলো, তার ভাইকে কেউ গুম বা খুন করে রাখতে পারে। সে ফেরত চায় তার ভাইকে। ফলে রায়হান হত্যাকাÐে বিক্ষুব্ধ জনতা আরিফকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়ার দাবি তুলেছিলো। অবশেষে সে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার স্বস্তিকর খবরে আপ্লুত সিলেটবাসী।
সিসিটিভির ফুটেজ মুছতে সহায়তাকারী কথিত এক সাংবাদিকের সন্ধান : রায়হান নির্যাতন ও হত্যার ঘটনার দায়ে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে লাপাত্তা হয়ে যান বাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (সাময়িক বরখাস্ত) আকবর হোসেন ভ‚ঁইয়া। সেইসঙ্গে গায়েব করা হয় ফাঁড়ির সিসিটিভি ফুটেজ। আর ফাঁড়ি অভ্যন্তরে নির্যাতনের ঘটনার প্রমাণ মুছতে এস আই আকবরসহ তিনজনে মিলে গায়েব করেন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। অপর দু’জন হলেন- ফাঁড়ির টুআইসি এস আই হাসান উদ্দিন ও স্থানীয় সংবাদকর্মী আব্দুল্লাহ আল নোমান।
এস আই আকবরের সোর্স ও ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করতেন নোমান। তার বাড়ি কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার বুরিডহর গ্রামে হলেও নগরের হাউজিং এস্টেটে ভাড়া থাকতেন। তার বাবা মো. ইছরাইল আলী কোম্পানিগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্রীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক। তার মা মোছা. বিলকিস আক্তার উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর কোম্পানিগঞ্জের স্বাস্থ্য কর্মী বলেও জানা গেছে। এরই মধ্যে নোমানের সন্ধানে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু হয়েছে। তার পরিবারের লোকজনকেও বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।
এদিকে, পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি এস আই আকবরকে পলায়নে এস আই হাসানের সহায়তার প্রমাণ পায়। নির্যাতনের তথ্য গোপন ও এস আই আকবরকে পালাতে সহায়তা করায় গত বুধবার হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার নির্দেশ দেন উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলীর শেখ।
সূত্র জানায়, নগরের গ্যালারিয়া শপিং সিটির ফ্রেন্ডস কম্পিউটার নামের একটি দোকান থেকে নতুন হার্ডডিস্ক কিনে সংযোজন করে পুরনো হার্ডডিস্ক সরিয়ে নেন আকবর, হাসান ও নোমান। ওই দোকান থেকে ১২০০ টাকায় ৫০০ গিগাবাইটের হার্ডডিস্কটি কেনা হয়। যার ইনভয়েস নম্বর ২৪৬০২। এরপর কম্পিউটারের দোকানের এক কর্মচারীকে নিয়ে সেই হার্ডডিস্কটি বদলে দেন নোমান। ফাঁড়িতে দায়িত্বরত অনেকে এ বিষয়টি দেখতে পেয়েছেন। আর সেই মার্কেটের সিসিটিভির ফুটেজও সংগ্রহ করে তদন্ত কমিটি। আর নোমানের সঙ্গে এস আই আকবরের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। আকবরকে খালাতো ভাই পরিচয় দিতেন নোমান। বিভিন্ন হোটেল, হকার, যানবাহন, নিষিদ্ধ ব্যবসা থেকে এস আই আকবরের কালেকশন ম্যান ও সোর্স ছিলেন নোমান। তার ইশারাতেই এস আই আকবর বিভিন্ন লোকজনকে ধরে এনে ফাঁড়িতে নির্যাতন করে টাকা আদায় করতেন। এস আই আকবর ও এস আই হাসানের সঙ্গে নোমানের প্রায়ই আড্ডা হতো।
তদন্ত কমিটির তথ্যমতে, এস আই হাসান উদ্দিন ওই কাজে সহায়তা করেছেন। পাশাপাশি তিনি ঘটনার দিন নোমানের সঙ্গে ৪০ বার কথা বলেছেন। এর আগের দিন নোমানের সঙ্গে ফাঁড়ির টুআইসি এস আই হাসানের কথা হয় ১৯ বার। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ বলেন, আকবরকে পালাতে সহায়তা ও সিসিটিভি ফুটেজ গায়েবে স¤পৃক্ততা পাওয়ায় এসআই হাসান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করে নেয়া হয়েছে পুলিশ হেফাজতে। বাকিদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে পিবিআই
ভোতা অস্ত্রের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে রায়হানের : রায়হানের দ্বিতীয় দফার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন গতকাল বৃহস্পতিবার পিবিআইকে হস্তান্তর করেছে সিলেট ওসমানী মেডিক্যালের ফরেনসিক বিভাগ। দুপুরে তদন্ত প্রতিবেদনটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মুহিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিলেট হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. শামসুল ইসলাম।
তিনি বলেন, নিহত রায়হানের প্রথম দফা ময়নাতদেন্তর রিপোর্টের সাথে মিল রয়েছে দ্বিতীয় দফার রিপোর্টটির। রায়হানের মৃত্যু হয়েছে ভোতা অস্ত্রের আঘাতের কারণেই। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মুহিদুল ইসলাম জানান, রায়হানের দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। এই রিপোর্টটি প্রাথমিক রিপোর্ট। এর আগে বৃহস্পতিবার সিলেট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজিব আহমেদের উপস্থিতিতে আখালিয়া নবাবী মসজিদ কবরস্থান থেকে তোলা হয় রায়হানের লাশ। এরপর ২য় দফা ময়নাতদন্ত শেষে লাশ কবরস্থ করা হয় ওই দিন বিকেলেই।
পিবিআইর সাথে রায়হান পরিবারের সাক্ষাত : রায়হন হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতারে নতুন কর্মসূচির প্রথম দিন গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে নগরীর শাহজালাল উপশহরস্থ পিবিআই কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রায়হানের পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও এলাকার মুরুব্বিয়ান। এ সময় তাদের রায়হান হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার আশ্বাস প্রদান করেন সিলেট পিবিআই’র এসপি খালেকুজ্জামান।
পিবিআই কার্যালয় থেকে বেরিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান সাংবাদিকদের বলেন, যদিও তদন্তকাজে ধীরগতি রয়েছে, তবু তাদের কাজ আমাদের কাছে পজিটিভ। কারণ পিবিআই›র হাতে তদন্তভার যাওয়ার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে।
তিনি বলেন, সাক্ষাৎকালে এসপি খালেকুজ্জামান আমাদের একটু ধৈর্য ধরতে এবং সময় দিতে বলেছেন। তিনি প্রতিশ্রæতি দিয়েছে বলেছেন, রায়হানের করুণ মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত সবাই শাস্তির আওতায় আসবে। তার এই কথায় আমরাও আশা রাখছি।
পিবিআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে রায়হানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনকি সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান, সমাজসেবী শওকত হাসান ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। প্রসঙ্গত, হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে ৭২ ঘন্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলো তার পরিবার। গত রোববার দুপুরে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে এস আই আকবরসহ অভিযুক্ত সকলকে গ্রেফতারে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন রায়হানের মা সালমা বেগম। বেঁধে দেওয়া সময়সীমা (৭২ ঘন্টা) অতিক্রম হয় গত বুধবার দুপুরে। এরপর বুধবার রাতেই ৩ দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন রায়হান পরিবার ও এলাকাবাসী। এর মধ্যে নতুন কর্মসূিচর প্রথমদিন গতকাল ছিল তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।