পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে গেছে। এতে জনগণের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। গত ১১ অক্টোবর সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ছিনতাইয়ের অভিযোগ গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়েছে। পরে জানা যায়, ওই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে নির্যাতন চালানোর কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। রায়হানের শরীরে নির্যাতনের বহু চিহ্ন দেখা গেছে। ঘটনার পর থেকে আকবর হোসেন ভূঁইয়া পলাতক। এঘটনায় সিলেটসহ সারা দেশে তোলপাড় হয়েছে। এর রেশ থাকতে থাকতেই ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার টয়লেট থেকে হত্যা মামলার আসামী মামুন নামের এক ব্যক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, সে আত্মহত্যা করেছে। এ নিয়েও যথেষ্ট চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে বাগেরহাটে হেফাজতে থাকা অবস্থায় রাজা ফকির নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পরদিন রাজধানীর পল্টন থানায় মাসুদ নামের এক যুবক মারা যায়। তার স্বজনের দাবি, পুলিশের নির্যাতনেই মাসুদের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, বলাবাহুল্য, কোনো নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। পুলিশ যথারীতি দায় অস্বীকার করে এবং ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজন পুলিশকে দায়ী করে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একটি তথ্য দেখা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত গ্রেফতারের আগে-পরে ১২ জন আসামীর মৃত্যু হয়েছে। এযাবৎ পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা যে কত ঘটেছে, তার ইয়ত্তা নেই।
যে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি বা আসামীকে গ্রেফতার করে থানায় এনে নির্যাতন করার কিংবা এমনভাবে নির্যাতন করা যাতে তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে, পুলিশের কারো এখতিয়ারের মধ্যে পড়েনা। পুলিশের আশ্রয়ে যে কোনো ব্যক্তি নিরাপদে থাকবে, এটাই প্রত্যাশিত ও কাম্য। যদিও অনেক ক্ষেত্রেই এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। সংবিধানে নাগরিক অধিকার সুনির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। সর্বোপরি আছে আইন। আদালতের নির্দেশনা ও আইনকে তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। হচ্ছে না বলেই একের পর এক হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারছে। হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা রুখতে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন প্রণয়ন করা হয়েছে ২০১৩ সালে।এ আইনে গ্রেফতার ও হেফাজতে থাকা অবস্থায় কেউ নির্যাতনের শিকার হলে কিংবা নির্যাতনে তার মৃত্যু হলে বিচারের বিধান রয়েছে। বিচারে নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদন্ডসহ আর্থিক দন্ড এবং নির্যাতনে মৃত্যু প্রমাণিত হলে অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ আর্থিক দন্ডের বিধান রয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, আইনটি হওয়ার পর ২০১৪ সালে প্রথম যে মামলাটি হয়, তার রায় হয়েছে গত ৯ সেপ্টেম্বর । রায়ে ঢাকার পল্লবী থানার তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও অন্য দু’জন আসামীকে সাত বছর করে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এ রায়কে অনেকেই মাইলফলক রায় হিসাবে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, অত:পর পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা কমবে।
পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা সব সময়ই অনাকাঙ্খিত। বিশেষ করে মৃত্যুর ঘটনা বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের পর্যায়ে পড়ে। বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড বিশ্বজুড়েই নিন্দিত। অপরাধী যেই হোক, যত ছোট বা বড় হোক, বিনাবিচারে তাকে হত্যা করার কোনো এখতিয়ার কারো নেই। পুলিশের আশ্রয় কারো জন্য অনিরাপদ হোক, সেটা কাঙ্খিত নয়। এজন্য পুলিশের কোনো সদস্য বা কর্মকর্তার অসহিষ্ণু হওয়া উচিৎ নয়। উত্তেজিত ও ক্রোধান্বিত হয়ে অমানবিক আচরণ করা সঙ্গত নয়। আইন থাকলেই যে হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু বন্ধ হবে, তা আশা মনে করার কোনো কারণ নেই। যদি তাই হতো, তবে ২০১৩ সালের পরে হেফাজতে আর কোনো নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো না। এক্ষেত্রে পুলিশের মানসিকতার পরিবর্তন খুব জরুরি। যে কোনো অবস্থায় পুলিশকে মানবিক ও সদাচারি থাকতে হবে। এই শিক্ষা তাদের দিতে হবে। উপযুক্ত পেশাগত প্রশিক্ষণ তো থাকতেই হবে। তাদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত ও দ্রুতায়িত করতে হবে। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে পুলিশের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে মাত্র ১৯টি। একটির রায় হলেও অন্যগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ে আটকে আছে। মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি হলে তার একটা ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। কাজেই, মামলাগুলোর তদন্ত ও বিচার সত্যায়িত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।