পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্ব ক্ষুধাসূচকে বাংলাদেশের বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ১০৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩ ধাপ এগিয়ে ৭৫তম অবস্থানে উঠে এসেছে। গত বছর এ অবস্থান ছিল ৮৮। সূচকে ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। ভারতের অবস্থান ৯৪ এবং পাকিস্তানের অবস্থান ৮৮। করোনাকালে প্রকাশিত এই সূচকের অগ্রগতি বাংলাদেশের জন্য সুখবর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রতিটি ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। কাউকে না খেয়ে থাকতে হবে না। তবে এ সুসংবাদের পাশাপাশি গতকাল একটি পত্রিকার খবরে বলা হয়, দেশে দ্রুতগতিতে খাদ্যশস্যের মজুদ কমছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, করোনা এবং বন্যার কারণে বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অসংখ্য মানুষ সরকারি খাদ্য সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এতে খাদ্যশস্যের মজুদে টান ধরেছে। পত্রিকাটির প্রতিবেদনে হিসাব উল্লেখ করে বলা হয়, দেশে খাদ্যশস্যের মোট মজুদ রয়েছে ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৮০০ টন। এর মধ্যে চাল ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬০ টন এবং গম ৩ লাখ ১১ হাজার ৯৪০ টন। গত বছর মোট মজুদ ছিল ১৭ লাখ ২০ হাজার ৩২০ টন। এ হিসেবে এ বছর মজুদ হ্রাস পেয়েছে ৩০ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, খাদ্যশস্যের মজুদ এখনই বৃদ্ধির উদ্যোগ না নিলে আগামীতে সংকট দেখা দিতে পারে।
আসন্ন শীতে করোনার আরেক দফা প্রাদুর্ভাব হওয়ার আশঙ্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ খাদ্যশস্য মজুদের ওপর জোর দিয়েছে। দেশগুলো আমদানি করে খাদ্যের মজুদ বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশেও শীতে আরেক দফা করোনার প্রাদুর্ভাব হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদি তা হয়, তবে সবকিছু অচল হয়ে পড়লে খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে। এ আশঙ্কা মাথায় রেখে এখন থেকেই খাদ্যশস্যের মজুদ বাড়ানো এবং অটুট রাখার উদ্যোগ নেয়ার তাকিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতোমধ্যে করোনায় লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়েছে, প্রায় তিন কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে, জনসংখ্যার অর্ধেক দরিদ্র অবস্থায় রয়েছে, প্রতি পরিবারের মাসিক আয় কমেছে ৪ হাজার টাকা। এ অবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে ফসলাদির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। গত বোরো মৌসুমে সরকার আট লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২ লাখ ১৯ হাজার ৮৬৫ টন। বন্যায় আসন্ন আমন মৌসুমে ধান উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে খাদ্য মজুদ অক্ষুন্ন রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছেন বিশ্লেষকরা। খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় আগাম ব্যবস্থা হিসেবে তারা মূলত আমদানির ওপর জোর দিয়েছেন। তাদের যুক্তি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ করোনার আরেক দফা সংক্রমণের যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হওয়ার আশঙ্কায় এখনই ব্যাপক হারে খাদ্য আমদানি করে মজুদ বৃদ্ধি করছে। এ ব্যবস্থা বাংলাদেশেরও নেয়া উচিৎ। আভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত খাদ্যের মজুদের পাশাপাশি চাহিদা অনুপাতে আমদানির উদ্যোগ নেয়া জরুরি। ইতোমধ্যে সরকার ৬ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। আগাম ব্যবস্থা হিসেবে এটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকারি পর্যায়ে খাদ্য মজুদ থাকলে দেশে খাদ্য সংকট মোকাবেলা যেমন সহজ হয়, তেমনি বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। দেশে এখন পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশাহারা অবস্থায় রয়েছে। খাদ্যের যথেষ্ট মজুদ থাকার পরও বন্যার উছিলায় একশ্রেণীর মজুদদার কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যমূল্য আকাশচুম্বি করে তুলেছে। চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, শাক-সবজিসহ এমন কোনো পণ্য নেই যা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সরকারও যেন মজুদদারদের কাছে জিম্মি হয়ে বসে আছে এবং মজুদদার সিন্ডিকেটকে অনৈতিক ব্যবসার সুযোগ করে দিচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, আগামী বিশ-পঁচিশ দিনের মধ্যে নতুন খাদ্যপণ্য বাজারে এলে দাম স্থিতিশীল হবে। মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আগামী ফসল বাজারে অসার অপেক্ষায় বসে থাকার এমন মনোভাব কাম্য হতে পারে না।
সরকারি খাদ্যভান্ডারে টান ধরা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এক ধরনের অশনি সংকেত। বিষয়টিকে হালকাভাবে নেয়া উচিৎ নয়। ক্ষুধাসূচকে দেশের ভাল অবস্থান ইতিবাচক হলেও খাদ্য মজুদের প্রাথমিক যে সংকট পরিদৃষ্ট হয়ে উঠেছে, তা সামাল দিতে আগাম ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। করোনা ও বন্যায় ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে এখন থেকেই ফসল উৎপাদনে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে চাষাবাদকে গতিশীল করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক কোনো জমি যাতে অনাবাদি না থাকে, এ জন্য মাঠ পর্যায়ে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। আমন মৌসুমে কৃষক যাতে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় এবং কোনো সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি না হয়ে পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।