পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের অর্থনীতি ব্যপাকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। অধিকাংশ নাগরিকের আয়-রোজগার কমে গেছে। লাখ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের ঝুঁকিতে পড়েছে। ইতিমধ্যেই লাখ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে চলে গেছে। এহেন বাস্তবতায় সরকার নানাবিধ ত্রাণ ও প্রণোদনামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করলেও একাধিক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এই দুর্যোগকালীন সময়ে নানাবিধ পণ্যের পাশাপাশি ওষুধের বাজারেও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে মুনাফাবাজির প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। করোনাভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বা পরীক্ষিত সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি না থাকায় এর সংক্রমণ মোকাবেলায় হার্ড ইমিউনিটির প্রতি জোর দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ডাক্তাররা। এর ফলে স্বাভাবিক কারণেই দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাবর্ধক বেশ কিছু ওষুধের চাহিদা বেড়ে গেছে। প্যারাসিটামল, এন্টিহিস্টামিন, এন্টিমেলেরিয়াল, ভিটামিন সি, এজিথ্রোমাইসি, ইভারমেকটিন, ডক্সিসাইক্লিন, স্কাভো ইত্যাদি জেনেরিক ও ব্রান্ডেড ওষুধ বহু বছর ধরেই বাংলাদেশে উৎপাদন, বিপণন ও রফতানি হচ্ছে। কিছু ওষুধের চাহিদা বাড়লেও এসব ওষুধের দাম হঠাৎ করে দু-তিনগুণ বাড়িয়ে দেয়ার মত কোন পরিস্থিতি দেশে তৈরী হয়নি। এটি নিছকই একটি সিন্ডিকেটেড কারসাজি। তবে প্রয়োজনীয় ওষুধের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে এই করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছে।
পণ্যমূল্যের অস্বাভাবিক স্ফীতি ও অস্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পড়েছে সাধারণ মানুষ। পেঁয়াজ, আলু, চাল-ডাল, তেল থেকে শুরু করে প্রতিটি মওসুসী সব্জির মূল্য দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় ইমিউনিটি বাড়ানো দূরের কথা, ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবৃত্ত করার সক্ষমতাও হারাচ্ছে অনেক মানুষ। সেই সাথে বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে আয়-রোজগার ও কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা গ্রাস করছে। এহেন বাস্তবতায় নিত্যপণ্যের মত অত্যাবশ্যকীয় ওষুধপথ্যের মূল্য নিয়ে যথেচ্ছ মুনাফাবাজির কারসাজি বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে কঠোর অবস্থান ও নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। করোনাভাইরাসের একটি সফল প্রমানিত টিকা বা ভ্যাকসিন সহজলভ্য হওয়ার আগ পর্যন্ত ইমিউনিটি বৃদ্ধিকারক ওষুধগুলো অবশ্যই দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, এটি একটি বৈশ্বিক মহামারি হলেও বিশ্বের কোথাও নিত্যপণ্য বা ওষুধের বাজারে এমন অস্থিরতা বা অরাজক পরিস্থিতি দেখা যায়নি। সেখানে ওষুধ রফতানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ওষুধের বাজারে এমন উল্লম্ফন ও যথেচ্ছ মূল্যবৃদ্ধির কারসাজি মেনে নেয়া যায় না। ওষুধের উৎপাদন, মজুদদারি, বিপণন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একটি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার বাড়তি মুনাফাবাজির সাথে যারাই জড়িত হোক, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেই সাথে ওষুধের মান ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারি নজরদারি ও হস্তক্ষেপ বাড়াতে হবে।
ওষুধ এমন কোনো সাধারণ পণ্য নয় যে, এর দাম কমলে চাহিদা বেড়ে যাবে, দাম বাড়লে মানুষ ওষুধ কেনা বন্ধ করে দেবে। দেশের অর্ধশতাধিক ওষুধ কোম্পানি ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশে ওষুধ রফতানি করছে। তবে দেশের চাহিদা পুরণের পাশাপাশি ওষুধের মান ও মূল্য স্থিতিশীল রাখাই হচ্ছে ওষুধ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্ব। ওষুধ উৎপাদন, বিপণন, মান নিয়ন্ত্রণে বিশৃঙ্খলা ও মূল্যকারসাজি নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। একদিকে দেশীয় বড় বড় ওষুধ কোম্পানিগুলো যথেচ্ছভাবে ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি করছে এবং ওষুধ বিপণনে অনৈতিক পন্থার আশ্রয় নিচ্ছে। এর ফলে যুগ যুগ ধরে দেশে ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনে নিয়োজিত বিদেশি ওষুধ কোম্পানিগুলো বিপাকে পড়ছে। ইতিমধ্যেই কিছু ওষুধ কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে বলে জানা যায়। অন্যদিকে ওষুধ প্রশাসনের কার্যকর নজরদারির অভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ও নকল ওষুধের কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব মানহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ ওষুধে জনস্বাস্থ্যের উপর হুমকি বেড়ে চলেছে। বিশ্বের আর কোথাও ওষুধের এমন অবাধ বিপণন, যথেচ্ছ মানহীন উৎপাদন এবং মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ নেই। ওষুধের প্রেসক্রিপশন, ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধের বিপণন, মাননিয়ন্ত্রণ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকে কঠোর নীতিমালার অধীনে আনতে হবে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় হার্ড ইমিউনিটি গঠনে কার্যকর ওষুধগুলোর মান এবং মূল্য দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সেই সাথে যথেচ্ছ ওষুধ ক্রয় ও সেবনের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কেও সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও ওষুধ প্রশাসনকে জনসচেতনতামূলক উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।