পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীর পরিবেশ, সৌন্দর্য ও নাগরিক সুরক্ষার অন্তরায় হয়ে রয়েছে রাজপথ ও গলিপথে ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল। বিদ্যুতের খুঁটিতে মানুষের মাথার উপর ঝুলে থাকা বিভিন্ন সংস্থা ও ইউটিলিটি সার্ভিসের তারের জঞ্জাল কোথাও কোথাও বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। মাকড়সার জালের মতো এসব তারের জঞ্জাল শুধু নগরীর স্বাভাবিক সৌন্দর্যহানি করছে না, তারের স্তরে স্তরে জমে থাকা ধুলো ময়লা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঝড়-বৃষ্টিতে তারের জটলা রাস্তায় পড়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ছাড়াও মানুষের চলাচলের পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে। বিদ্যুত, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ডিসের লাইন নগরবাসির জন্য অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশ্বের সব শহরেই এসব সার্ভিস রয়েছে। তবে বিদ্যুতসহ অত্যাবশ্যকীয় এসব সার্ভিসের এমন তারের জঞ্জাল আর কোথাও দেখা যায় না। আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনায়স গ্যাস ও পানির লাইনের মত বিদ্যুতের আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনের পাশাপাশি টেলিফোন ও অন্যান্য সার্ভিসগুলোও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জনবান্ধব, পরিবেশবান্ধব এবং আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করছে। দুই সিটি করপোরেশনদীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করলেও সফল হতে পারেনি। অবশেষে তারা স্বউদ্যোগেই এসব তারের জঞ্জাল সরাতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
২০০৮ সালে রাজধানীর ঝুলন্ত তার অপসারণের প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিল টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। বিটিআরসির সাথে বিদ্যুত বিভাগ (ডেসা) সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসলেও অন্য দুটি বেসরকারী সংস্থা ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আইএসপি এবং ক্যাবল অপারেটর্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)-এর অসহযোগিতার কারণে তারের জঞ্জাল অপসারণ সম্ভব হয়নি। আইএসপি এবং কোয়াবকে বার বার সময় দেয়ার পরও তাতে সাড়া দেয়নি। ইতিপূর্বে ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন তারের জঞ্জাল অপসারণে বেশ কঠোর অবস্থান নিয়েও ক্যাবল অপারেটরদের অসহযোগিতার কারণে সফল হতে পারেননি। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে এবার ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তারের জঞ্জাল অপসারণে আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নুর তাপসের আপসহীন ভূমিকায় এবার আশার আলো দেখা যাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া ঢাকা দক্ষিণে তারের জঞ্জাল অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণের পর ঢাকা উত্তরের মেয়রও একই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তবে এবারো আইএসপি এবং কোয়াব নানা অজুহাতে তারের জঞ্জাল অপসারণের উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। নগরীর সৌর্ন্দয ও নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রশ্নে দুই মেয়রের এই কঠোর অবস্থানের কারণে ইতিমধ্যে কিছু রাস্তা থেকে তার অপসারণ করা সম্ভব হয়েছে। তবে আইএসপি এবং কোয়াব নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলন করে সার্ভিস বন্ধ রাখার হুমকি দিয়েছে। তাদের দাবী তাদের সময় না দিয়ে তারের জঞ্জাল অপসারণ করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের পাশাপাশি ইন্টারনেট এবং ক্যাবল অপারেটরদের সার্ভিস নগরবাসীর জন্য অত্যাবশ্যকীয় হিসেবে স্বীকৃত। ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল অপসারণে এসব সংস্থার একটি সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করেও যখন এসব সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি, তখন নগর কর্তৃপক্ষ কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে বিভিন্ন রাস্তায় ইতিমধ্যে শত শত ঝুলন্ত ক্যাবল কেটে অপসারণ করায় হাজার ইন্টারনেট ও ডিসলাইন গ্রাহক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছেন বলে জানা যায়। সিটি কর্পোরেশন, আইএসপি বা কোয়াব কেউই বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্যাবল বিচ্ছিন্ন করণে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহকরা। প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকা শহরের একশ্রেণীর মাস্তান-ক্যাডারও ডিসক্যাবল ও ইন্টারনেট সংযোগ পরিষেবা ব্যবসার সাথে জড়িত। তাদের আভ্যন্তরীণ কোন্দল ও প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় এক সময় সংঘাত-সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। ডিস ও ইন্টারনেট লাইন রেন্ট আদায়ে যথেচ্ছ ফি নির্ধারণ ও সেবার মানের প্রশ্নে স্বেচ্ছাচারিতা ও বেপরোয়া মনোভাব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দেখা যায়। নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনে গণদাবির প্রেক্ষিতে তারের জঞ্জাল অপসারণে গত কয়েক মাসে সিটি কর্পোরেশন ও বিদ্যুৎ বিভাগ সময় দিয়েছে। এ সময়সীমার মধ্যে তারা তারের জঞ্জাল সরানোর উদ্যোগ নেয়নি। উল্টো সিটি করপোরেশনের উদ্যোগকে বিফল করে দেয়ার জন্য সার্ভিস বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। এ ধরনের হুমকি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নগরীর সৌন্দর্য বর্ধন এবং মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে তারের জঞ্জাল সরানোর বিকল্প নেই। পাশাপাশি সিটি ভোক্তাদের স্বার্থে সিটি করপোরেশনকে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা উচিৎ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।