Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারত থেকে গোশত আমদানি নয়

| প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৬ এএম

ভারত থেকে মহিষের গোশত আমদানি হয়, এটা সাধারণ ক্রেতাদের কেউ জানে বলে মনে হয় না। যারা হোটেল-রেস্তোরায় খাওয়া-দাওয়া করে, তাদেরও তা জানা থাকার কথা নয়। সাধারণভাবে দেশের সবাই জানি, গোশতের ক্ষেত্রে আমরা ইতোমধ্যেই স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি। প্রয়োজনের তুলনায় দেশে গবাদিপশুর সংখ্যা অনেক বেশী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোরবানীর সময়ও গবাদিপশুর অভাব হয়নি। আগে ভারত ও মিয়ানমার থেকে লাখ লাখ গরু আমদানি হতো। চোরাচালান হয়েও আসতো প্রচুর গরু। গত কয়েক বছরে ধরে আমদানি ও চোরাচালান প্রায় বন্ধ। যেখানে দেশেই গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়ার পর্যন্ত মজুদ রয়েছে সেখানে ভারত কেন, কোনো দেশ থেকেই এসব আমদানির প্রয়োজন নেই। গোশত আমদানির তো প্রশ্নই ওঠে না। অথচ দু:খজনক বাস্তবতা হলো, অনেকটা গোপনে-নিরবে ভারত থেকে মহিষের গোশত আমদানি হচ্ছে। কয়েক বছর ধরেই এর আমদানি চালু আছে। ভারতের মহিষের গোশত দেশে মহিষের গোশত হিসাবে নয়, গরুর গোশত হিসাবে বিক্রী হয়। ভারতে প্রতিকেজি মহিষের গোশতের দাম দেড়শ টাকা। এখানে শুল্ক-কর যোগ করে তার দাম দাঁড়ায় ২২১ টাকা। আর বিক্রী হয় ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। আমদানিকৃত এ গোশত প্রধানত : হোটেল-রেস্তোরায় বিক্রী করা হয়। হিমায়িত গোশত স্বাভাবিক করে কসাইদের কাছেও বিক্রী করা হয়। একে তো মহিষের গোশত গরুর গোশত হিসাবে বিক্রী হয়, তদুপরি এর মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। মান যথাযথ নয় বলে বরাবরই অভিযোগ আছে। এমন কি পচা গোশতও আমদানি হচ্ছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামবন্দর ইয়ার্ডে গোশত ভর্তি রীফার কন্টেইনার থেকে পচা গোশতের উৎকট গন্ধ বের হওয়ার প্রেক্ষিতে আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টকে জরিমানা করা হয়েছে। নিম্নমান ও খাওয়ার অযোগ্য পচা গোশত কীভাবে আমদানি হয়ে আসছে, সেই প্রশ্নে জানা গেছে, আগে গোশত আমদানির ক্ষেত্রে প্রাণীসম্পদ বিভাগের ছাড়পত্র লাগতো। এখন আর লাগেনা। আদালতের নির্দেশ চালান খালাস হয়। আগে নানাভাবে গোশত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সনদ দেয়া হতো, গত ৬ মাস ধরে তাও লাগেনা।

এই সুযোগ নিম্নমানের, মেয়াদউর্ত্তীণ ও পচাগলা গোশত ভারত থেকে আমদানি হয়ে আসছে আর দেশের ক্রেতা- ভোক্তারা না জেনে, না দেখে তা কিনছে এবং খাচ্ছে। তারা একদিকে গরুর গোশতের নামে মহিষের গোশত কিনে প্রতারিত হচ্ছে, আর্থিকভাবে ঠকছে অন্যদিকে এই অখাদ্য ও ক্ষতিকর গোশত খেয়ে নানা রোগ-ব্যাধির শিকার হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই অপ্রয়োজনীয় আমদানির জন্য দেশকে কষ্টাজিত বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের গত ১৫ মাসের হিসাব থেকে দেখা গেছে, এই সময়ে মহিষের গোশত আমদানি হয়েছে ৯ হাজার ২৬৬ মেট্রিক টন, যার মূল্য ২৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮৪ টাকা। যদি গোশত আমদানি না হতো, তাহলে এই সমুদয় অর্থ সাশ্রয় হতো এবং অন্য কোনো জরুরি ব্যয় বা আমদানি এর দ্বারা নির্বাহ করা সম্ভব হতো। ভারত থেকে গোশত আমদানি দেশের কৃষক, গবাদিপশু লালন-পালনকারী এবং খামারিদের স্বার্থের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। গোশত আমদানির কারণে তাদের পশুর ও গোশতের দাম কমে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। স্বভাবতই গোশত আমদানিতে তাদের আপত্তি ও উদ্বেগ রয়েছে। তাদের এই আপত্তি ও উদ্বেগ উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। তারা ন্যায্যমূল্য না পেলে গবাদিপশু পালনে অনীহ ও নিরূৎসাহিত হয়ে পড়তে পারে, যার প্রতিক্রিয়া পশু উৎপাদনের ওপর প্রতিফলিত হতে বাধ্য। আরো একটি বিষয় এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেটা হলো, আমদানিকৃত গোশত হালাল কিনা। মুসলমানদের কাছে গোশত হালাল কিনা সেটা হালালভাবে পশু জবেহ করা হয়েছে কিনা তার ওপর নির্ভর করে। ভারতে মহিষ জবেহ শরীয়ত মোতাবেক হয়েছে, এমন নিশ্চয়তা না পেলে তার গোশত খাওয়া কোনোভাবেই উচিৎ নয়। এব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ-সংশয় আছে বৈকি!

একথা কারো অজনা থাকার কথা নয়, এক সময় গরু আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু কয়েক বছর আগে হঠাৎ ভারত বাংলাদেশে গরু রফতানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এমন কি চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে গরু যাতে আসতে না পারে, সে জন্য সীমান্তে প্রহরা জোরদার করে। ভারতের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশে বিপাকে পড়ে। বিশেষ করে কোরবানীর পশুর সংকট হবে বলে আশংকা করে। ওই সময় সরকার খুব সাহসী পদক্ষেপ নেয়। দেশের কৃষক, গৃহস্থ, ও খামারিদের বিপুল সংখ্যায় গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া উৎপাদনে মনোযোগ দেয়ার আহবান জানায় এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করে। ভারতের গরু রফতানি নিষিদ্ধের পর প্রথম কোরবানীর ঈদে গবাদিপশুর সামান্য অভাব হলেও পরবর্তীতে আর কখনো অভাব হয়নি। বাংলাদেশ গবাদিপশু উৎপাদনে স্বয়ংভরতা অর্জন করেছে। এটা জাতীয় একটা বড় অর্জন। গরু কেন, পিঁয়াজ নিয়ে ও ভারত দু’ দু’ বার একই কান্ড করেছে। আশা করা যায়, আগামীতে ভারত থেকে পিঁয়াজ আমদানিরও আর দরকার হবে না। এক্ষেত্রে স্বয়ংভরতা আসবে। সে প্রস্তুতি চলছে। যা হোক, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই ভারত থেকে গোশত আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। মৎস্য ও প্রাণীসম্পদমন্ত্রীও সে কথা বলেছেন। দেশের খামারি, কৃষক ও গৃহস্থদের লালিত-পালিত গবাদিপশুতেই চাহিদা পূরণ হচ্ছে, তাই ভারত থেকে মহিষের গোশতসহ কোনো গোশতই আমদানির প্রয়োজন নেই। এব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সঠিক ও দ্ব্যর্থহীন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জানিয়ে দিতে হবে, ভারত থেকে আর গোশত আমদানি নয়।

 



 

Show all comments
  • Md Shihab uddin ১২ অক্টোবর, ২০২০, ১০:৩০ এএম says : 0
    Righ.. ভারত থেকে মাংস আমদানি নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Jack Ali ১২ অক্টোবর, ২০২০, ১১:৫০ এএম says : 0
    These government and the business men are enemy of our country.
    Total Reply(0) Reply
  • abul kalam ১২ অক্টোবর, ২০২০, ২:৫৫ পিএম says : 0
    অবস্হাদৃষ্টে বলতে পারি, ভারতকে কখনই বিশ্বাস করা যায় না, যাবেও না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গোশত-আমদানি

আরও পড়ুন