পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এক সময় হরতাল মানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ছিল অবধারিত। সেই রাজনীতি এখন নেই। এখন আর কেউ বিদ্যুৎ কেন্দ্র হামলা ও ভাঙচুর করে না। কিন্তু দেশের বিভিন্ন জেলায় গত কয়েক বছরে বিদ্যুৎ গ্রিডে আগুন লেগে অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। দেশে গত ১০ বছরে ছোট-বড় অন্তত ১৬ হাজার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণেই সারাদেশে ৭ হাজার ৮২৫টি অগ্নিকান্ড ঘটেছে। বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। এসব ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে আর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় না। সব রিপোর্ট বছরের পর বছর ধরে ফাইল চাপা থাকে। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানতে চাইলে বুয়েটের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালনের সব কিছুতেই নিয়মিত মেরামত ও সংস্কার (মেইনটেন্যান্স) করা জরুরি। সারাদেশেই বিদ্যুতায়নের উদ্যোগ নেয়ায় সঞ্চালন লাইনের ওপর চাপ বাড়ছে। এ কারণে নতুন লাইন বাড়ানোর পাশাপাশি পুরনো লাইনগুলোও নিয়মিত বিরতিতে মেইনটেন্যান্স করতে হবে। সেগুলো নিয়মিত হচ্ছে কিনা তাও মনিটরিং করতে হবে। সেটা না করায় অগ্নিকান্ড ঘটছে। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণেই বেশি অগ্নিকান্ড ঘটে। ২০১৮ সালের ১৯ হাজার ৬৪২টি অগ্নিকান্ডের মধ্যে ৭ হাজার ৮২৫টি অগ্নিকান্ডই ঘটেছে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে। এবিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। দায়িত্ব পালনে অবহেলায় এমনটা ঘটছে। সম্প্রতি ময়মনসিংহের কেওয়াটখালী পাওয়ার গ্রিড উপকেন্দ্রে বারবার অগ্নিকান্ডের পেছনে রেগুলার প্রোপার মেইনটেন্যান্স (যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ) না থাকাকে দায়ী করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ গ্রাহকদের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তবে পাওয়ার গ্রিড উপকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলীদের দাবি, ইকুয়েপমেন্ট (সরঞ্জাম) ফেল করায় আগুনের উদ্ভব হয়। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে একের পর এক বিদ্যুৎ গ্রিডে অগ্নিকান্ড ঘটছে। শুধু সঞ্চালনের দায়িত্বে থাকা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানিতেই (পিজিসিবি) নয়, বিতরণ কোম্পানির আঞ্চলিক গ্রিডেও অগ্নিকান্ড ঘটছে প্রায়ই।
উন্নত দেশে এ ধরনের অগ্নিকান্ড বিরল হলেও বাংলাদেশে প্রায়ই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বলছে, স্বাভাবিক সময়ে অন্তত চারটি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর বাইরে ঝড় ঝঞ্ঝায় অনেক সময় আগুন লেগে গ্রিড বিকল হয়েছে। টাওয়ার পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
সম্প্রতি গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে ময়মনসিংহে টানা কয়েক দিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। পরপর দুটি অগ্নিকান্ডে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে সঠিক কারণ অনুসন্ধান এবং দায়ীদের শাস্তির কোনও নজির না থাকায় এসব ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানিই দুর্ঘটনা এবং অনিয়মের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে থাকে সব সময়। সঙ্গত কারণে গ্রিডে এভাবে অগ্নিকান্ডের প্রসঙ্গ আলোচনার টেবিলেই ওঠে না কখনও। পাওয়ার গ্রিড সাবস্টেশন নির্মাণের পর সেগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ থাকে। এই বরাদ্দ সঠিকভাবে ব্যয় করা হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার কথা না। চলতি বছর পিজিসিবিতে তিন অগ্নিকান্ডের মতো বড় ঘটনা ঘটছে। এছাড়া গাজীপুরসহ বিভিন্ন কোম্পানির কারখানায় অগ্নিকান্ডের মতো বড় ঘটনা ঘটেছে।
চলতি বছরের গত ৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টার দিকে ময়মনসিংহ মহানগরীর কেওয়াটখালীতে আগুনে পাওয়ার গ্রিডের ট্রান্সফরমার পুড়ে যায়। এতে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার পর আবার ১০ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে আরেক দফা আগুন লেগে যায়। এতে প্রায় তিন দিন ময়মনসিংহবাসীর চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। গত ২০ মে কুষ্টিয়া ভেড়ামারা পিজিসিবির সাবস্টেশনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। যদিও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে বিপর্যয় ঘটে বলে জানায় পিজিসিবি। সে সময় প্রায় ১০ থেকে ১২ দিন বহু এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না।
গত ১১ এপ্রিল বিকালে হঠাৎ করেই রাজধানীর রামপুরার উলন গ্রিডে বড় ধরনের অগ্নিকান্ড ঘটে। এতে রাজধানীর একাংশ কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। এই সাবস্টেশনটি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) হলেও এটি ডিপিডিসির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে সাবস্টেশনটি এখনও পরিচালনা করে পিজিসিবি।
গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি কেরানীগঞ্জে বিদ্যুতের নির্মাণাধীন গ্রিড সাবস্টেশনে আগুন লাগে। রাজধানীর কাছেই কেরানীগঞ্জ এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নতুন করে গ্রিড সাবস্টেশনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের ৩০ মে রাজধানীর পরিবাগে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির লোকাল গ্রিড সাবস্টেশনে আগুন লেগে যায়। ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও একটি ট্রান্সফরমার পুড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নিয়মিত যে সংস্কার প্রয়োজন সেগুলো কিছুই করে না সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো। সংস্কারের জন্য যে বরাদ্দ থাকে তা কোথায় যায় তা কেউ বলতে পারে না।
এ ধরনের দুর্ঘটনা কেন ঘটে জানতে চাইলে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া ফোনে ইনকিলাবকে বলেন, ময়মনসিংহের ঘটনায় ৩৩/১৩২ কেভি লাইনে কারেন্ট ট্রান্সফরমার (সিটি) থাকে। সেখানে আগুন লেগে এই ঘটনা। শুধু ময়মনসিংহ নয়, সারাদেশের সিটিগুলো নিয়মিত পরীক্ষা করা, সেই পরীক্ষা ঠিকমতো হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা এবং পুরানো সিটি চেঞ্জ করার উদ্যোগ নিয়েছি। নিয়মিত মেইনটেন্যান্স করার বিষয়ে তিনি বলেন, সাধারণত প্রতি বছর শীতকালে লাইনগুলো মেইনটেন্যান্স করি। নিয়ম হচ্ছে বছরে একবার অন্তত টেস্ট করা। কিন্তু এখন একাধিকবার টেস্ট করার উদ্যোগ নিচ্ছি যাতে এই ধরনের দুর্ঘটনা আর না ঘটতে পারে। তিনি আরও বলেন, ময়মনসিংহ ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি। পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।