Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাজারে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক ক্যাবলের ছড়াছড়ি

চরম ঝুঁকিতে জনজীবন

মো. জাহিদুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৮:২৩ এএম, ১৭ জুন, ২০২২

বর্তমান সরকার শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিয়েছে। উন্নয়নের দিকেও সরকারের প্রায় সব উদ্যোগ সাফল্যের সীমা ছুতে বসেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরির বৈদ্যুতিক ক্যাবলস, অভারহেড কন্টাক্টর, ট্রান্সমিটার এবং অন্যান্য সরঞ্জাম প্রয়োজন পড়ে। আর এসবের প্রায় শতভাগ উৎপাদন ও যোগান দিয়ে থাকে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ক্যাবলস পণ্যের সঠিক মান যাচাই, বাছাই, পর্যালোচনা কোনোটাই হচ্ছে না।

অন্যদিকে কাঁচামালের পরিমাণ, আমদানি শুল্ক এবং দরদাম পর্যবেক্ষণ না করার কারণে ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি নিরূপণের বিষয়টিতে বিরাট ঘাপলা রয়ে যাচ্ছে। শুধু নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে তৈরি বৈদ্যুতিক ক্যাবলস, ওভারহেড কন্টাক্টর এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহারের কারণে দেশে প্রতি বছর জ্বলেপুড়ে বিকল, বিদ্যুতের সিস্টেম লস, শর্টসার্কিট হয়ে অগ্নিকান্ডে জানমালের যে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে তা নিরীক্ষা করে দেখলে সরকারের রীতিমত আতকে ওঠার কথা। শুধু সঠিক পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের অভাবে এই শিল্পখাতে অসম প্রতিযোগীতা ও একচ্ছত্র অধিপত্যবাদী গ্রæপের সৃষ্টি হতে চলেছে। বিশাল অঙ্কের ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা যেভাবে ইচ্ছা যা ইচ্ছা বানাচ্ছে।

জানা গেছে, বৈদ্যুতিক ক্যবলস বিভিন্ন সাইজের এবং বিভিন্ন গ্রেডের হয়ে থাকে। এটি তৈরির জন্য কাঁচামাল হলো তামা, এ্যালুমনিয়াম এবং প্লাষ্টিক। তামা এবং এ্যালুমনিয়ামের তারের উপর প্লাষ্টিক ইন্সুলেশন করে তৈরি করা হয় ক্যাবলস। তামার ক্যাবলস মান এবং দামের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি উপযোগী। কাঁচামালের দাম কম হবার কারণে এ্যালুমনিয়াম ক্যাবলসের দাম যথেষ্ঠ কম।

তবে বিদ্যুৎ খাতের বিশেষ কিছু পর্বে এ্যালুমনিয়াম ক্যাবলস প্লাষ্টিক ইন্সুলেশন সহ এবং ইন্সুলেশন ছাড়া উভয়ভাবেই ব্যবহার হয়ে থাকে। কপারের স্থায়িত্ব এবং প্লাস্টিকের স্থায়িত্ব সমান করতে হলে ক্যাবলসের জন্য বিশেষ মানের প্লাষ্টিক কাঁচামাল ব্যবহার করতে হয়। নাহলে আগেই ইন্সুলেশন নষ্ট হয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু বেশি লাভ, দাম কম করতে উভয় কাঁচামালই ভাঙ্গাড়ি থেকে তৈরি করে থাকে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এসবের নিয়ন্ত্রণ না হলে এই শিল্পে বিপর্যয় আসবে বলে মনে করছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশের বৈদ্যুতিক ক্যাবলস মার্কেট তেমন বড় নয়। ক্যাবলস উৎপাদনকারী শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এ-গ্রেড কাঁচামাল আমদানী করে ক্যাবলস বানাচ্ছে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে বিশাল ফাঁকি বিদ্যমান। এই পণ্যের শুল্ক হার নির্ধারিত থাকার কারণে একটি প্রতিষ্ঠান কি পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি করেছে তা শুল্ক প্রদানের পরিমাণ দেখেই নিরূপণ করা যায়। পক্ষান্তরে এই কাঁচামালে কি পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব সেটিও নির্ধারণ করা যায় এবং এতে কি পরিমাণ ভ্যাট-ট্যাক্স হবে সেটিও নিরূপণযোগ্য।

অন্যদিকে আমদানি শুল্ক দিয়ে কাঁচামালের খরচের সাথে উৎপাদন ব্যয়, মুনাফা এবং ভ্যাট-ট্যাক্স যোগ হবার পর এর মূল্য কত হবে সেটিও নির্ধারণ করা সহজ। বিপণন ক্ষেত্রে একেক প্রতিষ্ঠানের পণ্যমূল্য একেক রকম। অথচ সবাই বলছে তাদের ব্রান্ডের ক্যাবলস পিওর আমদানি করা কপার ক্যাথড ইনগট থেকে তৈরি। বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন হলো প্রতিষ্ঠানগুলো কি লোকসান দিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে?

ক্যাবলস পণ্যের দাম কম করতে আমদানি শুল্ক, ভ্যাট, ট্যাক্স ফাঁকি; লোকাল মার্কেট থেকে কম দামে স্ক্রাব কিনে তা গালানো কপার দিয়ে ক্যাবলস বানানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কৌশলে শুল্কমুক্ত বা কম শুল্কের কাঁচামালের নাম-কোড ব্যবহার, আন্ডার ইনভয়েস এবং জোগসাজস করেও এধরনের মিসডিক্লারেশনও করে থাকে তারা। আবার কারো রয়েছে অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুবিধা।

এই খাতে সঠিক পন্থায় যারা ব্যবসা করছে তারা অসাধু ফাঁকিবাজদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। নয়তো রুগ্ন হয়ে হারিয়ে যেতে হচ্ছে অথবা টিকে থাকতে অসাধু পন্থা অবলম্বন করতে হচ্ছে। আবার এই সুযোগে এক শ্রেণীর ট্রেডার্সের কর্মকান্ড বাড়ছে যারা ফিনিশড ক্যাবলস আমদানি করে দেশের মার্কেটে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বলে সরবরাহ করছে। পাশাপাশি নিজেদের উৎপাদন ক্যাপাসিটি না থাকলেও কৌশলে সেসব বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ব টেন্ডারে সরবরাহ দেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন গ্রেডের ক্যাবলস সরবরাহ নিতে আরইবি, পিডিবি, বিআরইবি, ডিপিডিসি, ডেসকো, ডেসা প্রভৃতি রাষ্টায়ত্ব প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে মানের চেয়ে কম মূল্যের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ফলে এসব সরঞ্জাম সরবরাহ দেবার জন্য দাম কম পড়ার যত পন্থা রয়েছে তা টেন্ডার বিট করা কোম্পানিগুলো অবলম্বন করে। টেন্ডারে বিট করা দামে যেখানে সঠিক মানের কাঁচামালের মূল্যই হবার কথা নয়, সেখানে কিভাবে প্রফিট করছে কোম্পানিগুলো? যদি প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন ক্যাপাসিটি, অতীত-বর্তমান অবস্থান, পণ্য তৈরিতে কাঁচামালের মান তদারকি এবং সর্বোপরি পণ্য সরবরাহ নেবার পর তা বিএসটিআই ও বুয়েট টেস্টের ব্যবস্থা নিয়ে থাকে তবে এই খাতে ঝুঁকি কমে যায়। বৈদ্যুতিক খাতে যে পরিমাণ সিস্টেম লস হচ্ছে তার সিংহভাগই হচ্ছে নিম্নমানের ক্যাবলস ব্যবহারের জন্য।

বাংলাদেশে প্রথম সারির ক্যাবলস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে বিআরবি ক্যাবলস, পার্টেক্স ক্যাবলস, বিবিএস ক্যাবলস, বিজলী ক্যাবলস, আরআর ক্যাবলস, বিএনটি ক্যাবলস, এসকিউ ওয়্যারস এন্ড ক্যাবলস, সুপারসাইন ক্যাবলস, মেঘনা ক্যাবলস, পলি ক্যাবলস কোম্পানি প্রভৃতি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ