পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে প্রতিবছর বাংলাদেশি নাগরিক মারা যাচ্ছে, যা কখনো আমরা প্রত্যাশা করি না। ভারতের পাকিস্তান কিংবা চীন সীমান্তে তো কখনো একজন ভারত, পাকিস্তান কিংবা চীনের সাধারণ নাগরিক গুলিতে নিহত হয় না। এমন কি ভারতের নেপাল, ভুটান, মায়ানমার সীমান্তেও এমনটি হয় না। ওই সব সীমান্তে সাধারণ নাগরিক খুব শান্তিতে বসবাস করতে পারলে, আমরা ভারতের বা বিএসএফের বিরাগভাজন হচ্ছি এবং প্রতিনিয়ত গুলি খেয়ে মরছি কেন? নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে আবার বলা হচ্ছে, এরা সাধারণ নাগরিক না, এরা চোরাচালানি বা গরু পাচারকারী। বাস্তবতা কিন্তু তা বলে না। প্রশ্ন একটাই, বিএসএফের গুলিতে কেন শুধু বাংলাদেশের নাগরিক মরে? এ যাবতকালে বিএসএফের গুলিতে যত বাংলাদেশি নাগরিক মারা গেছে প্রকৃত পক্ষে তারা বাংলাদেশের সাধারণ কৃষক কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আমরা যদি ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র হই তাহলে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীও আমাদের বন্ধু। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তার বিপরীত, ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদস্যদের আমাদের নাগরিকদের নির্বিচারে গুলি করে প্রমাণ করছে আমরা তাদের শত্রু ।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের(আসক) হিসাব মতে, ২০১৯ সালে সীমান্তে ৪৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে গুলিতে ৩৭ জন এবং নির্যাতনে ছয় জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৪৮ জন। অপহৃত হয়েছে ৩৪ জন। ২০১৮ সালে নিহত হয়েছে ১৪ জন। আর ২০১৭ সালে ২৪ জন। সরকারি হিসাবে এক বছরে সীমান্ত হত্যা ১২ গুণ বেড়েছে বাংলাদেশ। নানা প্রতিশ্রুতির পরও সীমান্ত হত্যা কমছে না। আর গত তিন বছরের হিসাবে সবচেয়ে বেশি সীমান্ত হত্যা হয়েছে গত বছর (২০১৯)। ২০২০ সালেও ঠিক একই রকম চলছে।
পশ্চিমবঙ্গ-ভিত্তিক ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন, মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) প্রধান কীরিটি রায়ের মতে, ‘আগে বিএসএফ বলতো আমাদের ওপর আক্রমণ করতে এলে আমরা আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছি। লাশ ফেরত দিতো। এখন আর তাও বলে না। গুলি করে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেয়। ফেরতও দেয় না।’
তিনি বলেন, ‘ভারত তো একটা হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তারা তো সীমান্ত হত্যা বন্ধ করবে না। সীমান্তে মুসলমানদের মারছে। আর ঠেলে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। আমরা প্রতিটি ঘটনার প্রতিবাদ করছি। কিন্তু ভারত হত্যা করবেই, সে থামবে না। তারা মারছে তো মারছেই। কিন্তু বাংলাদেশের দিক দিয়ে শক্ত কোনো প্রতিবাদ দেখতে পাচ্ছি না। মেরে দিচ্ছে কোনো বিচার নাই।’
মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১০৬৪ জন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে বিএসএফ। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৬ বছরে বিএসএফ গুলি ও শারীরিক নির্যাতনে হত্যা করেছে ৪২ জন বাংলাদেশিকে। অন্য একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সীমান্তে ৩১২ বার হামলা চালানো হয়। এতে ১২৪ জন বাংলাদেশি নিহত হয়। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে ১৩০টি হামলায় ১৩ জন নিহত, ১৯৯৭ সালে ৩৯টি ঘটনায় ১১ জন নিহত, ১৯৯৮ সালে ৫৬টি ঘটনায় ২৩ জন নিহত, ১৯৯৯ সালে ৪৩টি ঘটনায় ৩৩ জন নিহত, ২০০০ সালে ৪২টি ঘটনায় ৩৯ জন নিহত হয়। জাতীয় মানবাধিকার সংগঠনের হিসাব অনুসারে, ২০১২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিএসএফ হত্যা করেছে ৩৫ জনকে। এ সময় বিএসএফ ২২ বাংলাদেশিকে গুলি ও নির্যাতন করে আহত করেছে আর অপহরণ করেছে ৫৮ জনকে। ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে মাত্র ৭ দিনের ব্যবধানে ভারতীয়রা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ৩ বাংলাদেশিকে জোর-জবরদস্তিতে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালে মোট ২৭ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ সদস্যরা। ২০১৪ সালে হত্যা করা হয়েছে ৩৩ জন বাংলাদেশিকে। আহত হয়েছেন ৬৮ জন। এছাড়া বিএসএফ ধরে নিয়ে গেছে ৫৯ জনকে। ২০১৫ সালে বিএসএফ হত্যা করেছে ৪৫ জন বাংলাদেশিকে। ২০২০ সালের প্রথম ৬ মাসে সবচেয়ে বেশি হত্যাকান্ড ঘটেছে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোতে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ২৫ জন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে বিএসএফ। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরেও থেমে নেই এই হত্যাকান্ড। ভারতের সাথে সম্পর্কের উন্নতি ঘটলেও তার প্রতিফলন মেলে না সীমান্তে। দু’ দেশের আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় যে, বিএসএফ নন-লেথাল (প্রাণঘাতী নয়) অস্ত্র ব্যবহার করবে, যাতে করে সীমান্তে হত্যা শূন্যতে নামিয়ে আনা যায়। কিন্তু তারপরেও কেন চলছে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার?
লেখক: কবি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।